আলহামদু লিল্লাহ মাদারিসে কওমিয়্যার ছাত্র ছাত্রীদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে যাচ্ছে। অচিরেই হয়ত দারস তাদরীসও শুরু হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ সবকিছু সহজ করে দেন। আমীন। দোস্ত আহবাব! অদ্যকার সবক হল; সহীহ আলিম/ আলিমা হিসাবে গড়ে উঠতে হলে কি কি কাজ করতে হয়।
হক্কানী রাব্বানী আলিম হিসাবে গড়ে উঠার জন্য একজন ছাত্র/ ছাত্রীর মধ্যে ৯টি সিফত বিদ্যমান থাকা অতি জরূরী। শিক্ষাবর্ষের শুরু দিন থেকেই এই নয়টি বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হয় এবং পূর্ণ দৃঢ়তা ও সবরের সাথে চলতে হয়। বিষয়গুলি হল নিম্মরূপ;
০১. খালেছ নিয়্যত ও বুলন্দ হিম্মতের সাথে পদক্ষেপ শুরু করা। ০২. মাদ্রাসার চারদেয়ালের ভিতর অবস্থান করা ও সর্বদা অযুর সাথে থাকা।
০৩. মনের ভিতর উস্তায ও কিতাবের বেপানাহ আযমত ও সম্মানবোধ বজায় রাখা। ০৪. চার সিফতের সাথে দরসিয়্যাতের হক আদায় করা। যথা; এক. সবকের পূর্বে মুতালা করা, দুই. সবকে মনযোগের সাথে উপস্থিত থাকা, তিন. পূর্ণাঙ্গ তাকরার সম্পাদন করা, চার. দৈনিকের সবক দৈনিক যবত করে নেয়া। উল্লেখ্য যে, পঠিত আসবাক কেবল পরীক্ষায় পাশের জন্য নয় বরং ফন্নীভাবে আত্মস্ত করতে চেষ্টা করা।
০৫. আকাবিরে দেওবন্দের নজরিয়্যা, জীবনপদ্ধতি, আমল ও আখলাক সম্যকভাবে জানা ও নিজের মধ্যে যথাযথ বাস্তবায়নের চর্চা করতে থাকা।
০৬. তাওহীদ রিসালত ও আখিরাত সম্পর্কে নিজ ধারণা খুব স্বচ্চ রাখা। মহান আল্লাহর যাত সিফাত ও শুয়ূন সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি হাসিল করা। পাশাপাশি সমকালীন দুনিয়ায় (বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে) আস্তিক ও নাস্তিক তথা হক ও বাতিলের কে কোথায় কিভাবে বিদ্যমান আছে- তা ভালভাবে জানা ও সাবধানতার সাথে থাকা।
০৭. খারেজী টাইম, অবসর সময় ও ছুটিকালীন সময়ে নিম্মোক্ত প্রয়োজনীয় উলূম ও ফুনূন আহরণ করে নেওয়া; এক. ভাষাজ্ঞান তথা মাতৃভাষা বাংলা, উর্দূ, আরবী, ফার্সি ও ইংরেজী বিশুদ্ধরূপে পড়া, লেখা ও বলার যোগ্যতা আহরণ করা।
দুই. সৃষ্টির বেদায়া থেকে নেহায়া পর্যন্ত হক ও বাতিলের ধারাপরিক্রমা সম্যক জানা। আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কিরামের বিস্তারিত ইতিহাস জানা। সেই নিরিখে আধুনিক বিশ্বের কুফর শিরক যালালত বস্তুবাদ ও নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদিকে যথার্থভাবে অনুধাবনের চেষ্টা করা।
তিন. দীনী তালীম তাআল্লুম তথা শিক্ষা ও গবেষণার ইতিহাস, দাওয়াত ও আযীমতের ইতিহাস, তাজদীদ ও সংষ্কার কার্যক্রমের ইতিহাস, রাজন্যবর্গের ইতিহাস, উপমহাদেশের ইতিহাস, মাতৃভূমি বাংলাদেশের পূর্বাপর ইতিহাস জানা। পাশাপাশি আধুনিক ইউরোপ আমেরিকা ইত্যাদির ইতিহাস, সমকালীন অমুসলিমদের চিন্তাধারা সভ্যতা ও কার্লচার জেনে নিজের সার্বিক সাবধানতার চর্চা করা।
তিন. বিজ্ঞান বিশেষতঃ মহাকাশ বিজ্ঞান, সমূদ্র বিজ্ঞান, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, অংকশাস্ত্র, ভুগোল ও মানচিত্র, রাস্ট্রবিজ্ঞান ও পৌরনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা।
০৮. নিয়মিত ফারায়েয, ওয়াজিবাত ও সুনানের খুব বেশী ইলতিযাম করা। যৎসামান্য ওজায়েফের ইলতিযাম সহ আখিরে লাইল তাহাজ্জুদের পাবন্দী করা। সম্ভব হলে কাছাকাছি কোন মুনাসিব শায়খে তরীকতের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখা।
০৯. উল্লেখিত সকল মাকাসিদ অর্জিত হতে পারে সেই লক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর ‘নেযামুল আওকাত’ তৈয়ার করে সেটি শক্তভাবে দৃঢ়তার সাথে বাস্তবায়ন করা। প্রত্যেক সপ্তাহে ও মাসে সেই নেযামুল আওকাতের সফলতা মূল্যায়ন করা। প্রয়োজনে শায়খে তরীকতের পরামর্শ গ্রহণ করে তাঁর তরবিয়্যাত মোতাবেক অবিচল অগ্রসর হতে চেষ্টা করা।
মহান আল্লাহ সকলকে তাওফীন ইনায়েত ফরমান। আমীন ছুম্মা আমীন।
-এটি