শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

‘অপকৃষ্ট মন্তব্য একটি মারাত্মক ভাইরাস’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুর রশীদ।।

সাধারণত মানুষের জবানে যে কথাটা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় তা হলো ‘মিথ্যা’৷ এরপরই যার স্থান জবানে নিয়েছে তা হলো ‘মন্তব্য’৷ ‘মন্তব্য’ এমন একটা বিষয় যার মধ্যে আমরা প্রতিনিয়ত কম বেশি লিপ্ত থাকি, হোক ভালো কিংবা মন্দ৷ বর্তমান সময় এটা এমন এক মারাত্মক ভাইরাসে রূপ নিয়েছে যে ভাইরাসে সবাই কম বেশি আক্রান্ত হয়ে পড়েছি৷

সাধারণ থেকে বিজ্ঞ, নিম্ন শ্রেণী থেকে উচ্চ শ্রেণী এবং এমনকি কিছু স্কুল কলেজ ভার্সিটি ও মাদরাসার পড়ুয়া পর্যন্তও এই ভাইরাসে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে৷ কৃষি ক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, সংসদ ভবণ ইত্যাদি সর্বপ্রকার স্তরে ভালো-মন্দ মন্তব্যের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে৷ দুর্ভাগ্যবশত, মন্দই বেশি প্রচলিত৷

পরস্পরের প্রতি প্রশংসা ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিকে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত পরস্পরের সুসম্পর্ক বজায় থাকে৷ যখনই সম্পর্কের মধ্যে বিঘ্ন ঘঠে তখনই শুরু হয় মন্দ মন্তব্যের ইতিহাস৷ শুধু কী তাই? আমাদের কাছের মানুষগুলো যখন কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করে তখনও আমরা সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই তার কথার সাথে সহমতসূচক মন্তব্য পেশ করি৷

মিডিয়ার জগতে সবচেয়ে বেশি এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ সোশাল মিডিয়াগুলোতে প্রতিনিয়ত এর প্রবল ঝড় বয়ে চলছে ৷ বিশেষ করে ফেইসবুকে এর মাত্রা প্রচণ্ড ভয়াবহ৷ কেউ যদি একটা তথ্য পাবলিশ করে আর আমরা তাতে লাইক, রিয়েক্ট, হাঁ হাঁ এবং কমেন্টের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ি৷ এমনকি বাজে ধরনের কথাবার্তার নোংরা জলেও ডুবে থাকি৷

একজন মুসলিমের কাজ এমন হওয়া চাই যার আচরণে ইসলামের সৌন্দর্য ফুটে উঠে৷ কিন্তু, আমরা কি তাতে সফল হতে পেরেছি? মোটেও না৷ যখন কেউ অন্যের ব্যাপারে মন্দ বলেন এবং অন্যের গীবত করেন তখন তার কথার ওপর খারাপ মন্তব্যের মাধ্যমে সহমত দেওয়ার পিছনে কয়েকটা জিনিস নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষী করে রাখি৷ অপকৃষ্ট মন্তব্য করার মুহূর্তে প্রথম অপরাধের সাক্ষী হয় জিহ্বা; কেননা তা দিয়ে বলা হয়৷ দ্বিতীয় সাক্ষী কর্ণ; কেননা তা দিয়ে ওই মন্দ মন্তব্যের কথা কিংবা প্রথম ব্যক্তির গীবতের কথা শ্রবণ করা হয়৷ তৃতীয় সাক্ষী সোশাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে হাত; কেননা তা দিয়ে অসার মন্তব্য লেখার কাজ করা হয়৷ শুধু কী তাই? এর পাশাপাশি পরোক্ষভাবে নিজেদের অন্তর, মন-মানসিকতা এবং চিন্তাধারাও অপরাধের সাথে শামিল হয়ে যায়; এগুলোর মাধ্যমেই সব ধরনের কাজ করার প্রয়াস পায়৷

এই জন্য আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আর যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না; কান, চোখ, হৃদয়- এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে৷ (সূরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত: ৩৬)

আসলে আমরা এই অপরাধের সাথে কিভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়ি? এর কারণ আমাদের নিকট যখন কোনো সংবাদ পৌঁছায় তখন আমরা তাতে সত্যতা যাচাই না করেই উক্ত সংবাদের উপর অশ্লীল মন্তব্য করে বসি; পরিণাম জঘন্য অপরাধের শিকার৷

সংবাদটি হতে পারে কোনো ব্যক্তি ডেলিবারি করেছে কিংবা খবরের কাগজের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে৷ অথবা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে হতে পারে৷ চাই তা যে কোনো মাধ্যমে হোক না, সংবাদ পাওয়া মাত্রই তার সত্যতা যাচাই করা একজন মু'মিনের অবশ্যই কর্তব্য৷ অন্যথায়, আমাদের মন্দ মন্তব্যের দরুন অপর ভাইয়ের ওপর যুলুম হয়ে পড়বে৷

মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখ, এ আশঙ্কায় যে, অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হবে ৷ (সূরা: হুজরাত, আয়াত: ৬)

যখন আমাদের মুখের অহেতুক ও অবাঞ্চিত আচরণের ফলে কোনো ব্যক্তির পার্সোনালিটিতে আঘাত হানে এবং যে বিষয়গুলো নিয়ে খারাপ মন্তব্যের বন্যা বয়ে দিই, তা যদি সত্য সত্যই ওই ব্যক্তির আচরণের সাথে সামঞ্জস্য না থাকে; তা নিজেদের ওপরই পতিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরূপ অন্তরায় সৃষ্টি হবে না ৷

তাই আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আর যারা মু'মিন পুরুষ ও মু'মিন নারীদেরকে কষ্ট দেয় যা তারা করেনি তার জন্য; নিশ্চয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করলো ৷ (সূরা: আহযাব, আয়াত: ৫৮)

হাদীসে এসেছে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রকৃত মুসলিম সেই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে ৷ আর প্রকৃত মুহাজির (দ্বীনের খাতিরে স্বদেশ ত্যাগকারী) সেই, যে আল্লাহ যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা ত্যাগ করে। (বুখারি:১০, ৬৪৮৪, মুসলিম:৪০, নাসায়ি:৪৯৯৬, আবু দাউদ:২৪৮১, আহমদ:৬৪৫১, ৬৪৭৮, ৬৭১৪, ৬৭৫৩, ৬৭৬৭, ৬৭৭৪, ৬৭৯৬, দারেমি:২৭১৬)

সাধারণত আমরা মন্তব্য করার পিছনে অনেক প্রকার ভুল কারণ নিহিত থাকে৷ যেমন- অনুমান নির্ভর ও সন্দেহের উপর ভিত্তি করে কথা বলা৷ এমনকি হিংসার বসে ও শত্রুতামূলক কথা বলাও এই অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার অন্যতম কারণ৷ যখন উক্ত কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে কথা বলি তখন কিন্তু আমাদের নিকট কোনো সঠিক তথ্য জানা থাকে না যে বিষয়ের উপর কথা বলি সে সম্পর্কে৷

ফলে অজান্তে নিজেদের কথাগুলো প্রকাশ করাটা খারাপ মন্তব্যে পরিণত হয়ে যায়৷ উক্ত অপরাধগুলো শুধু নিজেদের জন্য অমঙ্গল তা নয়; বরং যার বিরুদ্ধে বলে থাকি তার জীবনেও সমস্যার জন্ম নেই৷ উদাহরণস্বরূপ- তার অনেক বিশ্বস্ত মানুষ তাকে ভুল বুঝে থাকে, তার প্রতি খারাপ ধারণার জন্ম নেই এবং অপবাদের ফলে সে নিজেও অশান্তি ও অস্বস্তি ভোগ করে থাকে৷

মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না৷ (সূরা: হুজরাত, আয়াত: ১১) হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন অনুমান পাপ৷ (সূরা: হুজরাত, আয়াত: ১২)

মনে রাখবেন, একজন মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিলে শুধু সেই অপরাধী হিসেবে গণ্য হয় না; বরং ওই তথ্যের উপর যে ব্যক্তিই সহমত প্রকাশ করবে সেও সমান অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে৷ অতএব, আমাদের উচিত যথাসম্ভব নিজেদের জবানকে সংযত রাখা এবং অশালীন ও অহেতুক মন্তব্য করা থেকে নিজেদের বিরত রাখা৷ সদা সর্বদা সত্যের সাথে থেকে সত্য কথা বলার চেষ্টা করাই হলো আমাদের কর্তব্য৷

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সঠিক কথা বল৷ (সূরা: আহযাব, আয়াত: ৭০)

মহান আল্লাহ যেন আমাদের এই জঘন্য পাপ থেকে হেফাজত করেন৷ আমিন ৷৷

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ কওমী তরুণ লেখক ফোরাম।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ