শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

৬ বছর ধরে গরীব-দুঃখী অসহায়দের সেবায় ‘সৃষ্টির সেবা সংস্থা’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুহসিন বিন মুঈন।।

মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের জন্যে অনুপ্রেরণা দেয় ইসলাম। মানুষের সেবা করতে এবং তার কষ্ট, অসুবিধা দূর করার জন্যে রাসূল সা. নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল সা. এর নির্দেশ পালনে আলেমদের দ্বারা পরিচালিত বেশ কিছু সেবা সংস্থা দেশে কাজ করে যাচ্ছে। আলেমদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম সৃষ্টির সেবা সংস্থা। ২০১৫ সাল থেকে মানব সেবায় কাজ করছে সংস্থাটি। ‘সৃষ্টির সেবায় স্রষ্টার সন্তুষ্টি’ এই স্লোগানকে ধারণ করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভুলে মানুষের সেবা করছে। বন্যা দূর্গত এলাকা, চরাঞ্চল, ঘূর্নিঝড় কবলিত এলাকায় ঘর বানানো, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, খাদ্য সহায়তাসহ সবকাজে তাদের পদচারণা দেখা যায়।

বর্তমানে সংস্থাটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউসুফ ফরহাদ, সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম এবং সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নওমুসলিম মোহাম্মাদ রাজ। এদের নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলায় চারশ’র বেশি সেচ্ছাসেবী দিনরাত মানুষের সেবায় কাজ করছে।

সৃষ্টির সেবা সংস্থার বহুমুখী সেবা:

১. ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প

দেশের বিভিন্ন দূর্যোগে, বড় বড় ইভেন্টে আয়োজন করা হয় ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প। অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা যত্নের সাথে রোগীদের সেবা দেয়। ক্যাম্প থেকেই স্বেচ্ছাসেবীরা রোগীদের পর্যাপ্ত অষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করে। ক্যাম্পে হাজারো মানুষকে দেয়া হয় ফ্রি ব্যবস্থাপত্র ও অষুধ। এছাড়াও বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়।

প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা, জেলা ইজতেমা, চরমোনাই মাহফিল, বন্যা দূর্গত এলাকা, চরাঞ্চল, ঘূর্নিঝড় ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত এলাকা, টেকনাফের মুহাজির ক্যাম্পসহ বিভিন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।

No description available.

২. মাদরাসা স্থাপন

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে শিক্ষার আলো এখনো পৌঁছেনি ও যেখানের জনগোষ্ঠী দরিদ্র। এমন জায়গা খুঁজে খুঁজে মাদরাসা স্থাপন করা হয়। ইতোমধ্যে বাগেরহাটের স্মরনখোলা এবং কুড়িগ্রামের কফিলের চরে মোটামুটি বৃহৎ পরিসরে দু’টি মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানকার দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিনামূল্যে পড়াশোনা করছে সেখানে।

৩. তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের শিক্ষা ও খাদ্য সহায়তা

সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া সম্প্রদায়। অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পয়েন্টসহ বিভিন্ন জেলা শহরে চালু করেছে তৃতীয় লিঙ্গের মাদরাসা।যেখানে শুধু পবিত্র কুরআন শরীফের শিক্ষাই দেয়া হয় না, দেয়া হয় জীবনমূখী জেনারেল শিক্ষাও। এছাড়া করোনা সঙ্কটের লকডাউনে তাদের দেয়া হয়ছে খাদ্য সহায়তা, রমজানে ইফতার সামগ্রী। ঈদে দেয়া হয়ছে ঈদ বাজার।

No description available.

৪.এতিমদের প্রতিপালন ও শিক্ষা ব্যবস্থা

সমাজে আরও অবহেলিত বাবা-মা হারা এতিমরা। তাদের দেখার লোকের বড়ই অভাব। জরিপে দেখা যায়, এতিম সন্তানেরা দুমুঠো অন্নের জন্য শিশুশ্রমে লেগে যাচ্ছে। সঙ্গ দোষে অনেকে অন্যায় কাজে জড়িত হচ্ছে। একটু আদর-স্নেহ পেলে এরা হবে দেশের সম্পদ। মানব জীবন অনন্য ভূমিকা পালন করবে। এই প্রজেক্টের আওতায় এখন পর্যন্ত ৬৮ জন এতিমের যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করেছে সৃষ্টির সেবা সংস্থা। এদের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছে সৃষ্টির সেবা সংস্থা।

এদের মধ্যে মুফতি জাফর আহমাদের মাদরাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগরে আছে ২০ জন, বিশিষ্ট দায়ী মুফতি যুবাইরের তত্ত্বাবধানে উত্তবঙ্গের মাদরাসায় ৮ জন, ঢালকানগরের খলিফা মুফতি তৈয়ব আশরাফের মাদরাসায় ২০ জন, গাজীপুর কাপাসিয়ায় মুফতী মঈনের মাদরাসায় ১০ জন, রংপুরের আফতাবনগরে ব্রেইল পদ্ধতিতে ১০ জন অর্থাৎ তারা অন্ধ।

৫. করোনা সঙ্কটে লকডাউনে খাদ্য সহায়তা

করোনার কারনে গত বছর সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দীর্ঘ ও কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে কার্যত বেকার হয়ে পড়ে হাজারো মানুষ। নিম্নবিত্তদের অনেকে ত্রান দিলেও মধ্যবিত্ত ও আলেমরা হয়ে পড়েন অসহায়। আত্মমর্যাদাবান এসব অসহায় মানুষদের খুঁজে পাঁচশ’র বেশি পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য সহায়তা প্রদান করে।

গতবছরের লকডাউনের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় ও ভাসমান মানুষের মাঝে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ মানুষের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করেছে। এ বছর সীমিত পরিসরের লকডাউনের সময় থেকে নিয়মিত বিতরণ করা হচ্ছে এই খাবার।

No description available.

৬. জান্নাতের খোঁজে

সংস্থার আরো একটি প্রজেক্ট জান্নাতের খোঁজে। প্রজেক্টটির কাজ রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায়, দুস্থ, প্রতিবন্ধি মানুষের চিকিৎসা সেবা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

No description available.

৭. গৃহ ও টিউবওয়েল প্রদান

দুর্যোগ কবলিত এলাকায় এবং অন্যান্য অসহায় গৃহহীন মানুষদের আবাসস্থল বানিয়ে দেয়া হয়। স্থাপন করে দেয়া হয়েছে গভীর নলকুপ।

৮. সেবামূলক কর্মশালা ও ইসলাহী মাহফিল

সংস্থাটির উদ্যোগে মাঝেমধ্যেই আয়োজন করা হয় সেবামূলক কর্মশালা, ইসলাহী মাহফিল। যেখানে অতিথি হিসেবে থাকেন দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। ঢালকানগর হযরত মুফতি জাফর আহমদ, রহমানিয়া মাদরাসার মুফতি মুনসুরুল হক, মুফতি তৈয়্যব আশরাফ, মুফতি হিফজুর রহমান, বিশিষ্ট দায়ী মুফতি যুবায়েরসহ আরো অনেক উলামায়ে কেরামের মুখনিঃসৃত অমূল্য বয়ানে সমৃদ্ধ হয় জীবনের পথ।

৯. মুহাজির পাড়ায় সেবা কার্যক্রম

নিজ দেশ দেশে পালিয়ে আসা আরাকানের মুহাজির ভাইদের মাঝে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় খাদ্য সহায়তা,চিকিৎসা সহায়তা। ক্যাম্পে করে দেয়া হয়েছে মসজিদ,মাদরাসা।

১০. শীতবস্ত্র বিতরণ

দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতি বছরই তীব্র শীত দেখা দেয়। ফলে সেখানকার দরীদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থা হয় খুবই করুণ। এসব যায়গায় প্রতি বছর সংস্থার পক্ষ থেকে কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়। গতবছরও সংস্থার পক্ষ থেকে উত্তরবঙ্গ ও মুহাজির ক্যাম্প মিলিয়ে তিন হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়।

১১. বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্য সহায়তা

দেশের নিম্নাঞ্চলে প্রতি বছর বন্যায় অসহায় পরিবারগুলোকে দেয়া হয় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা। গত বছরের বন্যায়ও সাতক্ষীরা, কুড়িগ্রাম ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭০০ পরিবারকে দেয়া হয় দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা।

No description available.

এছাড়া আরো বহু সেবামূলক কাজ নিয়ে নিয়মিত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সংস্থার দায়িত্বশীল ও স্বেচ্ছাসেবীরা।

উল্লেখ্য, সৃষ্টির সেবা সংস্থাটির আগের নাম হাফেজ্জী হুজুর রহ. সেবা সংস্থা। সংস্থাটির রেজিষ্ট্রেশন করতে গেলে কিছু নিয়ম জটিলতা করণে নাম পরিবর্তন করে সৃষ্টির সেবা সংস্থা রাখা হয়।

ওআই/আব্দুল্লাহ আফফান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ