শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


দাওরায়ে হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দরজায় কড়া নাড়ছে কওমি মাদরাসার বিভিন্ন জামাতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। এবার কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাবর্ষের পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। কমে এসেছে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সময়। তাই অল্প সময়ে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কলাকৌশল বিষয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছে পরীক্ষা বিষয়ক শিক্ষাপরামর্শ ‘পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও সেরা ফলাফলের কৌশল’। ধারাবাহিক পর্ব- ২০

লিখছেন দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসার উস্তাযুল হাদিস, দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজেল ‘মাসুম আবদুল্লাহ’


(গত পর্বের পর)

দরসে নেজামিতে দাওরায়ে হাদিস একটি গুরুত্বপূর্ণ জামাত। কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলামি জ্ঞানভান্ডার থেকে উপকৃত হবার যোগ্যতা লাভে পড়াশোনার যে দীর্ঘ সূত্রতা—তার সমাপ্তির বছর এ জামাত। অন্য দিক থেকে ইলমে আলি বা যোগ্যতা হাসিলের জ্ঞানর্জনের পর মূল জ্ঞান কুড়ানোর মহান সুযোগ এ জামাত।

অবশ্য—সরকারের স্বীকৃতি এ জামাতের পড়াশোনা ও তার পরীক্ষার ফলাফলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাছাড়া—ছাত্রের ভবিষ্যৎ উচ্চতর পড়াশোনা, উজ্জল কর্মজীবন, অভিভাবকদের আশা-আকাঙ্খা, মাদরাসা ও উস্তাদদের সুনাম-সুখ্যাতি—এত কিছুর সম্পৃক্ততার কারণে এ জামাতের ভালো ফলাফল যেনো সাত রাজার ধন। আদ্রিত ও কাঙ্খিত। যেনো জনম জনমের সাধনা ও এত সব কিছুর কারণে এ জামাতের পড়াশোনা হতে হবে তুলনা মূলক বেশি সুপরিকল্পিত, শৃঙ্খলিত ও দীর্ঘ মেয়াদী। স্বপ্ন-ধরার মহা আনন্দে উদ্বেলিত ও উচ্ছ্বসিত। অনেকটা সাত-সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছা হার না মানা ব্যক্তির মতো। সাগর সেঁচে মুক্তোর সন্ধান পাওয়া দূরন্তর অন্বেষী সাধকের মতো।

অতএব—শুধু পরীক্ষা নয় বরং জীবন সাধনার মূল্য সংগ্রহ করতে, জীবনের রসদ-পুজি সংগ্রহ করার নিরন্তর তাগিদে ঝাপিয়ে পড়তে হবে নিয়মতান্ত্রিক মেহনত ও কঠোর অধ্যাবসায়। নিচে এ জামাতে ভালো ফলাফল ও সফলতা লাভের কিতাবভিক্তিক কিছু কৌশল ও করণীয় তুলে ধরা হল—

বোখারি শরিফ ১-২
১. নিয়মিত সবকে উপস্থিত থাকবে। উস্তাদের আলোচনা মনোযোগসহ শুনবে এবং আলোচনার সারসংক্ষেপ সবকেই নোট করে নেবে।
২. কিতাবের হাশিয়া ও বায়নাস সুতুর যত্নসহ পড়বে। আলোচনার অপেক্ষা রাখে এমন জায়গাগুলোতে ‘ফাতহুলবারির’ সহযোগিতা গ্রহণ করবে। ‘ইরশাদুস সারি’ বা ‘নসরুল বারি’ও দেখা যেতে পারে।
৪. তরজমাতুল বাব, তার ব্যখ্যা, ইমাম বোখারির দৃষ্টিভঙ্গি এবং হাদিস ও আয়াতের সঙ্গে তরজমাতুল বাবের মুনাসাবাত—ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় হল্ করবে। এজন্য শায়খ যাকারিয়া রহ.-এর আল-আবওয়াব ওয়াত তারাজিম দেখবে।
৫. ‘কলা বা’যুন নাস’ বুঝে শুনে তাফসিলের সাথে হল করবে।
৬. ইখতিলাফি মাসয়ালায় ইমামদের সশ্রদ্ধ নাম, তাদের মাযহাবের বিবরণ, প্রত্যেকের দলিল, দলিলের আঙ্গিক, প্রতিপক্ষের জবাব ও নিজের মাযহাবের তায়িদ—ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে খাতায় লিখে রপ্ত করবে।
৭. বোখারি শরিফ ১ম খণ্ড থেকে কিতাবুল ঈমান, কিতাবুল ইলম, কিতাবুল ওহি আর ২য় খণ্ড থেকে কিতাবুল মাগাজি, কিতাবুত তাফসির তাহকিক ও তাফসিল তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ ভালোভাবে আত্মস্থ করবে।
৮. শুধু গাইড পড়ে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। তাই মূল কিতাব ও গাইডের মাঝে সমন্বয় করে পড়বে। দুর্বল ছাত্ররা শুধু গাইড পড়লেও তরজমা-তাশকিলের কৌশল আয়ত্ত করে নেবে। মূল কিতাবের শুরু ৩০-৪০ পৃষ্ঠা ভালোভাবে হল করে পড়ে নেবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে অনুশীলন করবে।

মুসলিম শরিফ ১-২
১. নিয়মিত সবকে উপস্থিত থাকবে। উস্তাদের আলোচনা মনোযোগসহ শুনবে এবং আলোচনার সারসংক্ষেপ সবকেই নোট করে নেবে।
২. কিতাবের হাশিয়া ও বায়নাস সুতুর যত্নসহ পড়বে। আলোচনার অপেক্ষা রাখে এমন জায়গাগুলোতে ‘ফাতহুল মুলহুম’ ও ‘তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম’-এর সহযোগিতা গ্রহণ করবে।
৪. তরজমাতুল বাব, তার ব্যখ্যা, ইমাম মুসলিম রহ.-এর দৃষ্টিভঙ্গি এবং হাদিসের সঙ্গে তরজমাতুল বাবের মুনাসাবাত—সংক্ষেপে রপ্ত করবে।
৫. ‘মুকাদ্দায়ে মুসলিম’কে স্বতন্ত্র কিতাবের মতো বুঝে-শুনে নোট করে আত্মস্থ করবে। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিজ ভাষায় লিখে রপ্ত করবে। মুখস্থের বিষয়গুলো মুখস্থ করবে।
৬. ইখতিলাফি মাসয়ালায় ইমামদের সশ্রদ্ধ নাম, তাদের মাযহাবের বিবরণ, প্রত্যেকের দলিল, দলিলের আঙ্গিক, প্রতিপক্ষের জবাব ও নিজের মাযহাবের তায়িদ—ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে খাতায় লিখে রপ্ত করবে।
৭. মুসলিম ১ম খণ্ড থেকে মুকাদ্দামায়ে মুসিলম, কিতাবুল ঈমান, আর দ্বিতিয় খণ্ড থেকে কিতাবুল বুয়ু, কিতাবুল কিসাস, কিতাবুল হুদুদ ও কিতাবুশ শাহাদাৎ—ইত্যাদি অধ্যায়গুলো তাহকিক ও তাফসিল তথা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ ভালোভাবে আত্মস্থ করবে।
৮. শুধু গাইড পড়ে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। তাই মূল কিতাব ও গাইডের মাঝে সমন্বয় করে পড়বে। দুর্বল ছাত্ররা শুধু গাইড পড়লেও তরজমা-তাশকিলের কৌশল আয়ত্ত করে নেবে। মূল কিতাবের শুরু ৩০-৪০ পৃষ্ঠা ভালোভাবে হল করে পড়ে নেবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে অনুশীলন করবে।

তিরমীযি শরিফ ১-২
১. নিয়মিত সবকে উপস্থিত থাকবে। উস্তাদের আলোচনা মনোযোগসহ শুনবে এবং আলোচনার সারসংক্ষেপ সবকেই নোট করে নেবে।
২. কিতাবের হাশিয়া ও বায়নাস সুতুর যত্নসহ পড়বে। আলোচনার অপেক্ষা রাখে এমন জায়গাগুলোতে ‘মাআরিফুস সুনান’ ও আওজাযুল মসালিক-এর সহযোগিতা নেবে। হাদিসের হরকত, হাদিসের তরজমা-মতলব ও হাদিস সংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত আলোচনা রপ্ত করার জন্য দারুল দেওবন্দ, ভারতের শাইখুল হাদিস—মুফতি সাইদ আহমদ পালনপুররি দা.বা.-এর ‘তুহফাতুল আলমায়ি’ দেখা যেতে পারে।
৪. তরজমাতুল বাব, তার ব্যখ্যা ও ইমাম তিরমিযির দৃষ্টিভঙ্গি এবং হাদিসের সঙ্গে তরজমাতুল বাবের মুনাসাবাত—সংক্ষেপে আয়ত্ত করবে।
৫. ‘কলা আবু ঈসা’ ও ‘ওয়া-আলা হাজা আহলুল ইলম’ ইত্যাদি মন্তব্যগুলো এবং ইমাম তিরমিযির বিশেষ পরিভাষাগুলো বুঝে শুনে তাফসিলের সাথে হল করবে।
৬. ইখতিলাফি মাসয়ালায় ইমামদের সশ্রদ্ধ নাম, তাদের মাযহাবের বিবরণ, প্রত্যেকের দলিল, দলিলের আঙ্গিক, প্রতিপক্ষের জবাব ও নিজের মাযহাবের তায়িদ—ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে খাতায় লিখে রপ্ত করবে।
৭. এ কিতাবটি শুরু-থেকে শেষ পর্যন্ত রপ্ত করবে। তাহলে সুনানের সকল কিতাব হল হয়ে যাবে। এবং ইখতিলাফি মাসয়ালাগুলো বিস্তারিতভাবে জানা হয়ে যাবে।
৮. শুধু গাইড পড়ে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। তাই মূল কিতাব ও গাইডের মাঝে সমন্বয় করে পড়বে। দুর্বল ছাত্ররা শুধু গাইড পড়লেও তরজমা-তাশকিলের কৌশল আয়ত্ত করে নেবে। মূল কিতাবের শুরু ৩০-৪০ পৃষ্ঠা ভালোভাবে হল করে পড়ে নেবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে অনুশীলন করবে।

শামায়েলে মুহাম্মাদি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
১. নিয়মিত সবকে উপস্থিত থাকবে। উস্তাদের আলোচনা মনোযোগসহ শুনবে এবং আলোচনার সারসংক্ষেপ সবকেই নোট করে নেবে।
২. কিতাবের হাশিয়া ও বায়নাস সুতুর যত্নসহ পড়বে। আলোচনার অপেক্ষা রাখে এমন জায়গাগুলোতে ‘জাময়ুল ওয়াসালেল’ অথবা ‘আকরাবুল ওয়াসায়েল’-এর সহযোগিতা নেবে। হাদিসের হরকত, হাদিসের তরজমা-মতলব ও হাদিস সংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত আলোচনা রপ্ত করার জন্য শাইখুল হাদিস—শায়খ যাকারিয়া রহ.-এর ‘খাসায়েলে নববি’ দেখা যেতে পারে।
৪. তরজমাতুল বাব, তার ব্যখ্যা ও ইমাম তিরমিযির দৃষ্টিভঙ্গি এবং হাদিসের সঙ্গে তরজমাতুল বাবের মুনাসাবাত—সংক্ষেপে আয়ত্ত করবে।
৫. ‘কলা আবু ঈসা’সহ ইমাম তিরমিযির বিশেষ পরিভাষা ও মন্তব্যগুলো বুঝে শুনে তাফসিলের সাথে হল করবে।
৬. ইখতিলাফি বিষয়ে ইমামদের সশ্রদ্ধ নাম, তাদের মাযহাবের বিবরণ, প্রত্যেকের দলিল, দলিলের আঙ্গিক, প্রতিপক্ষের জবাব ও নিজের মাযহাবের তায়িদ—ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে খাতায় লিখে রপ্ত করবে।
৭. কিতাবের শুরুর ৩-৪ পৃষ্ঠা এবং হাদিসে উম্মে যারা তাহকিক ও ব্যখ্যা-বিশ্লেষণসহ আত্মস্থ করবে।
৮. শুধু গাইড পড়ে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। তাই মূল কিতাব ও গাইডের মাঝে সমন্বয় করে পড়বে। দুর্বল ছাত্ররা শুধু গাইড পড়লেও তরজমা-তাশকিলের কৌশল আয়ত্ত করে নেবে।
৯. বিগত বছরের প্রশ্ন সংগ্রহ করে অনুশীলন করবে। (চলবে)

এ আয়োজনের বাকি পর্ব আমাদের  ‘শিক্ষাঙ্গন’ ক্যাটাগড়িতে।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ