শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

অভিমানে চলে গেলেন হাফেজ আহমাদ উল্লাহ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হুমায়ুন আইয়ুব।।

‘লালবাগ থেকে বাংলা একাডেমি’-শিরোনামে আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে ছিল আহমাদ উল্লাহর। তিনি একজন কুরআনের হাফেজ। সুরেলা হাফেজ। তেলাওয়াতে ছিল মায়াবি কণ্ঠ।

রাজধানী ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় হজরত মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর হাতে হিফজের সবক নেন। হিফজ শেষ করেন স্বাধীনতার আগে ১৯৬৯ বা ১৯৭০ সালেই। দীর্ঘ বছর রমজানের তারাবিও পড়ান।

তাবলিগের মারকাজ কাকরাইলের মুরব্বি হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ, মাওলানা ইউসুফ বিন আব্দুল মজিদ, মাওলানা বেলালসহ অনেকেই তার ছেলেবেলার বন্ধু! ইসলামি ভাবধারার প্রবাদপ্রতীম লেখক মাওলানা আবু তাহের মিছবাহকেও অগ্রজবন্ধু জানতেন তিনি।

হিফজ পরর্বতী দু-এক বছর মাদরাসায় পড়লেও পড়ালেখার ক্যারিয়ার স্কুল-কলেজেই! কোরআনের সুরের মুগ্ধতায় নিজেকে মেলে ধরেন ছন্দ-সুরে। ছড়া-কবিতায়। প্রতিষ্ঠা পান তার কালের সেরা ছড়াশিল্পী হিসেবে। আমীরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান লিটন, আবু হাসান শাহরিয়ার, আসলাম সানী, মোশতাক আহমদ, মহিউদ্দিন আকবর প্রমুখ তার ছড়া-কবিতার বন্ধু। বাংলা একাডেমির সাহিত্য সভা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রসহ নানা আসরের প্রতিভাবান মুখ হাফেজ আহমদ উল্লাহ। লালবাগ মাদরাসার একজন হাফেজ কীভাবে বাংলা একাডেমি আঙিনায় আলোকিত হয়ে উঠলেন- তা নিয়ে আহমাদ উল্লাহর ছিল হাজার গল্প। গল্পের ভেতরের গল্প। সে গল্প না বলেই তিনি চলে গেলেন। গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১) রাতে তিনি চলে গেছেন। চলে যাওয়াটা অনেকটা নীরবে। কিছুটা অভিমানে। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে শুয়ে আছেন। শুয়ে আছেন মাটির বিছানায়। আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিন।

বাংলা সংবাদপত্রের প্রভাবশালী কাগজ দৈনিক যুগান্তরের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ধর্মপাতার বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন তিনি। যুগান্তর হাফেজ আহমাদ উল্লাহর ২০ বছরের সোনালী কর্মস্থল।

গোলাম সরওয়ার, এবিএম মুসা, আবেদ খানসহ অনেক প্রজ্ঞাবান সম্পাদকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। হালে যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম। তিনি শুধু একজন সম্পাদক নন; আহমাদ উল্লাহর দীর্ঘ সময়ের সহকর্মী ও বন্ধু। একজন সাংবাদিক নেতাও। সদ্য তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার তিনি।

তবে যতটুকু জানি আহমাদ উল্লাহ কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও যুগান্তরে নিয়মিত অফিস করেন। করোনা সংকট আর কিডনি সমস্যা অফিসের কাজে কিছুটা ব্যাঘাতও ঘটে। বন্ধু-সহকর্মীদের সহযোগিতায় নিয়মিত পাতাও করেন। তবে হুট করে এক সকালে অফিসে গিয়ে শোনেন তার চাকরি নেই! তার পদে নিয়োগ পেয়েছেন নতুন কেউ। হতাশা আর দীর্ঘ ২০ বছরের কর্মস্থল ছাড়ার কষ্ট বুকে ছাপা দিয়ে তিনি প্রকাশক সালমা ইসলামের দরজায় অপেক্ষা করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা! চাকরি যাওয়ার শেষ কথাটুকু জানার জন্য। সাক্ষাৎ পাননি! সম্পাদক সাইফুল আলমও সদুত্তর দিতে পারেননি। কষ্ট, যাতনা আর এই অসুখের সময়ে বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়েই অফিস ছাড়েন আহমাদ উল্লাহ! দীর্ঘ সময়ের কর্মস্থল যুগান্তর কিংবা সম্পাদক সাইফুল আলম কতটা সুবিচার করেছেন সে বিবেচনা তাদের কাছেই রেখে দিলাম!

কোনো সাংবাদিক ফোরাম থেকে আহমাদ উল্লাহর হঠাৎ চাকরিচ্যুতির কারণ কিংবা অসুস্থতাকালীন ফান্ড গঠনের কোনো দাবি উঠেনি। কারণ আহমাদ উল্লাহ সাংবাদিকদের কোনো ইউনিয়ন বা ফোরামে ছিলেন না! তিনি ছিলেন শুধুই সাংবাদিক। নির্মোহ সাংবাদিক। দলবাজ কিংবা তেলবাজ নন।

তবে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার দলিল’ নামে বিখ্যাত গ্রন্থ তার উদ্যোগে প্রকাশিত হয়। পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য প্রামাণ্যগ্রন্থটি (১৯৯২) তিনি সম্পাদনা করেন। এছাড়াও মৌলিক অনেকগুলো গ্রন্থেরও রচয়িতা তিনি। বহুরৈখিক এই মানুষটির সঙ্গে আমরা আসলে কতটা সুচিবার করেছি? বারবার সেই প্রশ্ন বিবেকে আঘাত করছে। অপরাধবোধের এই গ্লানি সারাক্ষণ পীড়া দিচ্ছে আমাকে।

আরও ২০ বছর আগে জাতীয় দৈনিকের ধর্মপাতায় বিষয় বৈচিত্র্য, ইসলামি ভাবধারার ফিচার সংযোজন, মেকাপ গেটাপে আমূল নতুনত্বের এই চর্চার জন্য আহমাদ উল্লাহই প্রথম উদাহরণ। ইসলামি ভাবধারার ফিচারের জনকও বলা হয় তাকে।

মূূলধারার প্রভাবশালী দৈনিক যুগান্তরে মর্যাদার সঙ্গে আলেম লেখিয়েদের লেখা ছাপা, সাক্ষাৎকার প্রকাশ কিংবা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের খবর দেওয়ার কাজটি তিনি করেছেন। অনেক তরুণ আলেমকে ডেকে নিয়ে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আইটিভি ইউএস’র সিও মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, চারণ সাংবাদিকখ্যাত শাকের হোসাইন শিবলি, মুফতি এনায়েতুল্লাহ, মুজাহিদ হোসাইন ইয়াসিন, জহির ইবনে মুসলিম, লিয়াকত আমিনী, ছফিউল্লাহ হাশেমীসহ দীর্ঘ তালিকা আছে তার গড়া আলেম সাংবাদিকদের।

পরবর্তী সময়ে জহির উদ্দিন বাবর, মাসউদুল কাদির, মিরাজ রহমান, গাজী মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, জিয়াউল আশরাফ, তাজুল ফাত্তাহ, এহসান সিরাজ, রোকন রাইয়ান,আহসান শরিফ, মুহসিন আল জাবের, আল ফাতাহ মামুনসহ কজনের নাম বলবো? তার হাতেগড়া লেখক সাংবাদিকের সংখ্যা মোটেও কম না! আহমাদ উল্লাহর শিষ্য সাগরেদের তালিকায় আমার নাম যুক্ত করে তাকে খাটো করতে চাই না। আমিও সেই মিছিলের একজন।

তার চিন্তা-দর্শন কিংবা কোনো কোনো বিশ্বাসের সঙ্গে আমার বা আমাদের স্পষ্ট বিরোধ আছে। তর্ক আছে। তবে তিনি মাদরাসা (আলিয়া-কওমি) তরুণদের জাগাতে কিংবা হাতে কলম তুলে দিতে যে আদর-সোহাগ ও মায়া দেখিয়েছেন বস্তুবাদী পৃথিবীতে তা মোটেও কম বড় কথা নয়। সময় তো টাকা। সময় তো সোনার চেয়ে দামি! একজন তরুণকে সমৃদ্ধ করার জন্য চোখ বন্ধ করে দুই চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করা আহমাদ উল্লাহর স্বাভাবিক রুটিন। তার সাহস, ধমক আর ‘তুই’ বলে আদরের ডাক আর কোনোদিন শুনবো না! কোনোদিন শুনবো না।

লেখক- সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ