শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
সিলেটে অনুষ্ঠিত বিহানের ‘লেখালেখি ও এডিটিং কর্মশালা’ দেশে ফিরে কর্মফল ভোগ করুন, শেখ হাসিনাকে জামায়াতের আমির রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামবিরোধী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না: জাতীয় পরামর্শ সভা যাত্রাবাড়ীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় গৃহীত হলো ৭ প্রস্তাব বারিধারায় হেফাজতে ইসলামের পরামর্শ সভা শুরু ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল দায়িত্বের কর্মকর্তারা এখনও অটল রয়ে গেছে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি: ডিসি ওয়ারী খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি পরিদর্শনে যাচ্ছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আল্লামা মাহমুদুল হাসানের আহ্বানে সর্বস্তরের আলেমদের নিয়ে পরামর্শ সভা শুরু মসজিদে শোরগোল নিয়ে রাসূল সা. যেভাবে সতর্ক করেছিলেন

যেভাবে নিবেন পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

দরজায় কড়া নাড়ছে কওমি মাদরাসার বিভিন্ন জামাতের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। এবার কোভিড-১৯ এর কারণে শিক্ষাবর্ষের সময় কম হলেও কমেনি পরীক্ষার সিলেবাসের পরিমাণ। তাই অল্প সময়ে দীর্ঘ এ নেসাব থেকে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করার কলাকৌশল বিষয়ে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজন করেছে পরীক্ষা বিষয়ক শিক্ষাপরামর্শ ‘পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি ও সেরা ফলাফলের কৌশল’। আজ থাকছে পর্ব-৩

লিখছেন দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসার উস্তাযুল হাদিস, দারুল উলুম দেওবন্দের ফাজেল ‘মাসুম আবদুল্লাহ’


(গত পর্বের পর)

শুধু গাইড ও সাজেশনবুক পড়া পরিহার করুন
মূল কিতাব না পড়ে শুধু গাইড ও সাজেশন পড়া—ভালো ছাত্রের লক্ষণ নয়। এসব বই পুস্তক সুপ্ত মেধা বিকাশে, সৃজনশীল যোগ্যতা তৈরির পথে বড় বাঁধা। মূল কিতাবের অধিনে বা প্রশ্ন-উত্তরের ধরন রপ্ত করার জন্য মাঝে-মধ্যে গাইড ও সাজেশন দেখা যেতে পারে।

শুধু শরাহ, শুধু গাইড পড়া মেধাকে বিক্ষিপ্ত করে। যোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। অনেক পড়ে অল্প তথ্য-উপাত্ত অর্জিত হয়। কষ্ট ও সময় বেশি ব্যয় হয়। কিন্তু ফল ও অর্জন—সে হিসেবে অল্প ও সীমিত। মূল কিতাব পড়লে অল্প সময়ে অধিক এগোয়। পড়া-শোনার একটা কূল-কিনারা করা যায়। তা-ছাড়া প্রশ্ন করা হয় যেহেতু মূল কিতাব থেকে তাই মূল কিতাবই পড়া উচিৎ।

সর্বপরি গাইড ও সাজেশন এড়িয়ে যাবেন। হ্যাঁ, বিশেষ আলোচনা বা বিশেষ কোনো ধাচ আয়ত্ত করার জন্য এগুলোর আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। তবে তাও হতে হবে—যোগ্য ওস্তাদরে দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে। কারণ বাজারে একাধিক গাইড-সাজেশন পাওয়া যায়—আপনার জন্য কোনোটি ভালো হবে তা তিনি নির্ধারণ করে দেবেন।

মেধা ভেদে মেহনত করতে হবে
সৃষ্টিগতভাবে কারো মেধা বেশি। কারো কম। কারো মুখস্ত শক্তি ভালো। আবার কারো বোধ ও বুঝ শক্তি ভালো। তাই প্রত্যেকে তার মেধা হিসেবে মেহনত করবে। বুঝে মুখস্থ করবে। বা মুখস্থ করে বুঝবে। যার যেভাবে সহজ ও সুবিধা হয়—সে সেভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহন করবে। মেধা-মুখস্থের সমন্বয় করার চেষ্টা করবে। লিখে-শোনে-বুঝে যার যেভাবে পড়া আয়ত্ব হয়— সে সেভাবেই আয়ত্ব করবে। আয়ত্ব করার কলাকৌশল আবিষ্কার করে সেভাবেই এগুবে।

মেধা হিসেবে মেহনত বেশি করতে হবে
স্বভাবজাতাভাবে সকলের মেধা একরকম নয়। কারো বেশি। কারো কম। কারো পরিস্কার। কারো অপরিস্কার। কেউ অল্প মেহনতে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। আবার কারো লক্ষ্যে পৌঁছতে হাড়ভাঙ্গা মেহনত ও খাটুনি খাটতে হয়।

তাই প্রত্যেককে তার মেধা অনুপাতে চেষ্টা করতে হবে। যার বেশি মেহনত করা লাগে সে বেশি করবে। যার কম করা লাগে সে কম করবে। উদ্দেশ্য—লক্ষ্যে ও গন্তব্যে পৌঁছা, কীভাবে সেটা বিবেচ্য নয়।

মেধার বিকল্প মেহনত—মেহনতের বিকল্প নেই
যে সমস্ত ছাত্র ভাইদের পাশ নম্বর পেতে খুব কষ্ট হয়। তারা অবশ্যই মেহনত বাড়িয়ে দেবে। মেহনতের বিকল্প কিছু নেই। মেহনতের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। কথায় বলে—‘মেধার বিকল্প মেহনত। মেহনতের বিকল্প কিছু নেই’। তাই জানতোড় শৃঙ্খলিত মেহনত করবে।

প্রত্যেক কিতাবের প্রথম পঞ্চাশ-ষাট পৃষ্ঠা ভালোভাবে ইয়াদ করে নেবে। তার পরের পৃষ্ঠাগুলো বেছে বেছে পড়ে নেবে। পুরো কিতাব আংশিকভাবে হলেও রপ্ত করা ছাড়া ভালো ফলাফলের আশা করা দুরূহ।

সুন্দর হস্তাক্ষর ভালো ফলাফলের প্রথম শর্ত
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যে সুন্দর সুস্পষ্ট লেখার কোনো জুড়ি নেই। যদিও প্রশ্নের গায়ে লেখা থাকে ‘সুন্দর উপস্থাপন ও হস্তক্ষরের জন্য ৪(চার) নম্বর’। কিন্তু আমার মনে হয় লেখায় ৫০ (পঞ্চাশ) নম্বর। কারণ—কারো লেখা অস্পষ্ট হলে তার লেখা পড়া যায় না, আর লেখা পড়া না গেলে নম্বর দেয়াও সম্ভব নয়; যদিও সে সব লিখে থাকে। তার এ লেখার কোনো মূল্য নেই। অন্তত কোনো মুমতাহিন ও পরীক্ষকের কাছে। কেননা তিনি কেবল পরীক্ষার খাতা পড়েই নম্বর দেন। আর এটাই তার দায়িত্ব। খাতা দেখেই তারা মেধা বা যোগ্যতার স্বীকারোক্তি নম্বরের মাধ্যমে দান করেন।

সুতরাং কারো লেখা অসুন্দর বা অস্পষ্ট হলে নম্বর কম দেয়া ছাড়া একজন মুমতাাহিন ও পরীক্ষকের কাছে আর কোনো পথ খোলা থাকে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে কম নম্বর দিতে হয়। যাকে বাহ্যত মনে হয় যুলুম বা হকতলফি। কিন্তু বেচারা মুমতাহিন যদি না-ই পড়েতে পারেন কিম্বা খাতায় কী লেখা হয়েছে তিনি তা না-ই ধরতে পারেন— তবে তিনি কীভবে নম্বর দেবেন? তাকে হয় অনুমান করে নম্বর দিতে হবে। নতুবা মোটের উপর কিছু নম্বর দিয়ে দিতে হবে। আর এ দু’উপায়ের যে উপায়ে-ই নাম্বার দেয়া হোক—অবশ্যই নাম্বার কাক্সিক্ষত নাম্বারের চেয়ে কম হবে। এটাই শতসিদ্ধ। তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার ক্ষেত্রে সুন্দর ও সুস্পষ্ট লেখার কোনো জুড়ি নেই।

মাত্র দু’এক দিনে হাতের লেখা সুন্দর করুন
যাদের হাতের লেখা খারাপ, তারা স্বতন্ত্রভাবে দু’তিন দিন সময় বের করে হাতের লেখা সুন্দন করে নেবেন। হাতের লেখা সুন্দর করা কোনো মন্ত্র নয় কিংবা এর জন্য শনিবার মঙ্গলবারেরও প্রয়োজন নেই। বরং যার লেখা সহজ ও সুন্দর মনে হয়—এমন কারো লেখা মনোযোগসহ দেখে অনুশীলন করলে মুহুর্তেই আয়ত্তে চলে আসবে।

এর জন্য প্রয়োজন একটু সদিচ্ছা বা দৃঢ় সংকল্পের আর এটুকুন মন-মানসিকতার যে—দেখি লেখাটি তো বেশ সুন্দর! এভাবে লেখা হয়েছে, দেখি তো আমিও পারি কি না—একথা বলে ব্যাস লেখা ও অনুশীলন শুরু! যে ব্যক্তির এ মনমানসিকা দ্রুত সৃষ্টি হয়, তার লেখাও দ্রুত সুন্দর হয়। এটি নিছক কোনো দাবি-ই নয়, বরং বাস্তবতা এমন-ই। বিশ্বাস না হলে এভাবে একটু শুরু করেই দেখুন!

আপনি যখন কারো লেখা শিখছেন বা নকল করা শুরু করছেন। এবার আপনার কাজ হলো—যে শব্দটি বা অক্ষরটি যেভাবে শিখছেন, সে শব্দটি আপনার লেখায় যতবার আসবে, তাকে আপনি আপনার নতুন শেখা স্টাইলে লিখবেন। আপনার পূর্বের স্টাইল অবশ্যই পরিহার করবেন। এভাবে লেখা সুন্দর করলে, আমার মতে লেখা সুন্দর করতে প্রয়োজন কেবল পছন্দ, ইচ্ছা ও অনুরূপ লেখার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা; যা অর্জনের জন্য দু বা তিন দিনই যথেষ্ট। বরং কয়েক মিনিট-ই যথেষ্ট।

পরীক্ষার সময় নিজেকে স্বাভাবিক ও চাপমুক্ত রাখুন
খেয়ার ও পিপারেশনের সময় নিয়মতান্ত্রিক মেহনত করার পর যখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে—তখন অবশ্যই নিজেকে ফুরফুরে, চাপমুক্ত ও স্বাভাবিক রাখতে হবে। বিশেষত মনে-মাথায় বা শরীরে চাপ পড়ে এমন কোনো মেহনত করবে না। আগে-পড়ে রাত জাগলেও পরীক্ষার রাতগুলোতে রাত জাগবে না। খাবার ও ঘুমের পূর্ণ যত্ন নেবে।

অতিরিক্ত প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার গ্রহণের চেষ্টা করবে। কারণ—মাথা ঠান্ডা থাকলে, তার কার্যক্ষমতাও বাড়বে। আর শারীরিক বা মানসিক চাপ থাকলে মাথা ও স্মৃতিও কম কাজ করবে। একবারে যা হবার তা তিনবারেও হবে না। তাই দেহ মন ও মাথা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে।

পরীক্ষার হলের জিনিসপত্র রাতেই গুছিয়ে রাখবে
পরীক্ষার হলের প্রয়োজনীয় সামানা যেমন—প্রবেশপত্র, কলম, মার্কারপেন, স্কেল, কলমবক্স, জ্যেমিতি বক্স, বোর্ড ইত্যাদি সকল প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র পরীক্ষা শুরু হবার দু’দিন আগেই সংগ্রহ করবে। পরীক্ষার আগের দিন রাতেই সব গুছিয়ে রাখবে। পরীক্ষার সকালে বা পরীক্ষা শুরু হবার একটু আগে যেনো কেনো কিছু খোঁজা-খুঁজি করতে না হয়। সীটনম্বর পূর্বেই জেনে নেবে। যাতে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার পর ভোগান্তি পোহাতে না হয়। পরীক্ষার হলে যে কলম দিয়ে লিখবে—তা অবশ্যই আগে চালু ও ফ্রি করে রাখবে। মাথা ও হাতের সাথে পাল্লা দিয়ে যেনো কলম চলতে পারে—সে জন্যে আগে থেকেই কলম চালু করে রাখবে। সম্পূর্ণ নতুন কলম দিয়ে পরীক্ষায় লিখবে না। কারণ—তার দাগ ও লেখা অস্পষ্ট থাকে। নতুন কলম চলতে চায় না। দ্রæত চলে না, আটকে যেতে চায়। তাই পরীক্ষার হলে সম্পূর্ণ নতুন কলম পরিহার করবে। সাথে অবশ্যই একাধিক চালু কলম রাখবে। যাতে একটিতে ত্রুটি দেখা দিলে অপরটি ব্যাহার করা যায়।

প্রথম দিন পরীক্ষার হলে তুলনামূলক একটু আগেভাগে প্রবেশ করবে। যাতে নিজের আসন খুঁজতে সময় ব্যয় হলেও কোনো সমস্যা দেখা না দেয়। (চলবে)

এ আয়োজনের বাকি পর্বের লেখাগুলো আমাদের  ‘শিক্ষাঙ্গন’ ক্যাটাগড়িতে পাবেন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ