শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

হাজী শরিয়ত উল্লাহ: বাংলার মুক্তিসংগ্রামের অগ্রপথিক ও জাতীয় চেতনার উৎস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইফতেখার হোসাইন রাকিব।।

বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায়। বাংলার জনগণের বন্দি হয়ে যায় পরাধীনতার বন্দিশালায়। বাংলার হারানো স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য অপেষহীন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন মীর কাসিম।

সম্রাজ্যবাদী বৃটিশরা এদেশের কৃষক ও ফকিরদের জমির উপর কর বসিয়ে দিয়েছিলো। বাংলার কৃষকরা নিজদের জমির মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো। ঠিল তখনই কৃষকদের হয়ে গর্জে উঠেন ফকির মজনু শাহ।

এরপর ১৮৩১ সালে স্বাধীনতাকামী শহীদ সাইয়েদ নিসার আলী তিতুমীর বীরদর্পে লড়াইয়ের ময়দানে অবতীর্ণ হন। এবং তিনি সমরে আহত হয়ে শহীদ হন। উপমহাদেশের সাধারণ জনগণেট অধিকার আদায়ে আন্দোলন লড়াই জিহাদ ও বিদ্রোহে নিজেদের আত্মনিয়োগ করা এই সাহসী বীরদের চিন্তাধারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের আপোষহীন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় হাজী শরীয়তুল্লাহ।

১৭৮১ সালে মাদারীপুর জেলার বাহাদুরপুরে জন্ম গ্রহন করেন। তার স্থানীয় জমিদার আবদুল হাজী তালুকদার তার পিতা। শিশুকালেই পিতাকে হারান পিতার মৃত্যুর পর চাচা তার লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাল্যকালেই শিক্ষা লাভের জন্য কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় মাওলানা বাশারত আলী নিকটে বিদ্যার্জন চলছিলো। কিছুদিন তাকে হুগলী মাদরাসায় ভর্তি করা হয়।

চাচা-চাচী নদী পার হওয়ার নৌকা ডুবিতে ইন্তেকালকাল করেন । ফলে তিনি একা হয়ে পড়েন, এবং মাতৃভূমিতে আর ফিরে আবার চলে যান মাওলানা বাশারত আলীর গৃহে। কিছুদিন পর মাওলানা বাশারত আলীর সাথে পবিত্র ভূমি মক্কা-মুকাররমা চলে যান। এরপর থেকে মক্কার আলেমদের কাছেই ইলম অর্জন শুরু করেন এবং সেখানে শিক্ষকতা ও করেন।

১৮১৮ সালে ফিরে আসেন নিজ জন্মভূমিতে।এখানকার মানুষের অধঃপতন দেখে দুঃখে তার হৃদয় ব্যথিত হলো খুব। কুসংস্কার, অশিক্ষা, অভাব, দারিদ্র্য আর ইংরেজ ও স্থানীয় উচ্চবর্গীয় হিন্দু জমিদারদের শোষণ নির্যাতনে মুসলমান দলিত ও নিম্নবর্গীয় হিন্দুদের কষ্ট ও দুরবস্থা তাকে দারুণভাবে ব্যথিত করে। ইংরেজ এবং উচ্চবর্গীয়হিন্দু জমিদাররা একতাবদ্ধ হয়ে গরীব, নিম্নবর্গীয় হিন্দু বিশেষ করে মুসলমানদের দমিয়ে রেখেছে। তারা মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সব দিক থেকে ধ্বংসের পায়তারা করেছিলো।

এই শোষন বঞ্চনা ও জুলুমের জেলে বন্দি জাতীকে উদ্ধার করতে হাজী শরীয়তুল্লাহ সংগ্রাম শুরু করেন। তার এই সাহসী ও মুক্তিকামী সংগ্রামকেই ফরায়েজী আন্দোলন নামে অভিহিত করা হয়।

তার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন চরিত্র, সাদামাটা জীবন, অমায়িক ব্যবহার, আন্তরিক চেষ্টা, সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে সমর্যাদা দানের অঙ্গীকার ইত্যাদি আরো বহুগুণের অধিকারী ছিলেন। তার এমন গুণের কারণে সমাজের সকলের অনুকরণ ও অনুসরণযোগ্য নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ফলে তিনি সহজেই একটি গতিশীল আন্দোলন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এবং তার এই সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিল সমাজের দরিদ্র কৃষক শ্রেণী এবং নিম্নবর্গের নিপিড়ীত হিন্দুরাও। সকল ধর্মের নির্যাতিতদের তিন সংঘবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করলেন। তিনি রাজনৈতিক ভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হন। সকল শ্রেণীর অবহেলিত ও বঞ্চিত জনগণকে মানুষ সাথে অত্যাচারী উচ্চবর্গীয় হিন্দু জমিদার ও নীল কুঠিয়ালদের বিরুদ্ধেন ময়দানে সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। সারা পূর্ববাংলা ও আসামে তাঁর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৭ সালে সাড়ে বার হাজার সক্রিয় কর্মী ছিলো হাজী শরীয়তুল্লাহর নেতৃত্বে ।

তিনি বহুবার কারাবরণ করেন । তার কর্মীদের উপর পুলিশ ও জমিদার বাহিনী নানাভাবে অত্যাচার চালাচ্ছিলো । ঢাকা জিলার নয়াবাড়ীতেই তার কর্মক্ষেত্র ছিলো। কিন্তু হিন্দু জমিদারদের চরম বিরোধিতার কারণে তাকে নয়াবাড়ী ছাড়তে হয়। চলে যান নিজ গ্রাম মাদারীপুরের শামাইলে। সেখান থেকে পূর্ণগতিতে চলাতে থাকেন সমাজ সংস্কার আন্দোলন।

হাজী শরীয়তুল্লাহ একজন আদর্শিক মানুষ ছিলেন। তার আদর্শ ও চরিত্রের গুণেই তিনিই জয় করেছিলেন ভাগ্যাহত মানুষের মন। এদেশের সাধারণ মানুষ ও শোষিত মুসলমানদের চরম দুর্দিনে তিনি ছিলেন মুক্তির কান্ডারী। ইংরেজদের শত বাধা এবং উচ্চবর্গীয় জমিদার হিন্দুদের হাজার চেষ্টাতেও এ উপমহাদেশের সংগ্রামরত এই বীর মুজাহিদের আন্দোলন কখনো থেমেনি । তাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সর্বদা মুক্তির জয়গান গেয়েছেন এই সাহসী বীরপুরুষ।

তার সংগ্রামী জীবন বিশাল ও ব্যাপক। সারা জীবন তিনি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের জন্য নিজেকে উৎস্বর্গ করেছেন। আমাদের সংগ্রামে, আমাদের জাগরণে, আমাদের অনুভবে এবং আমাদের চলার পথে তিনি আছেন সাহসের মশাল হতে চেতনার বাতিঘরে। আমাদের সকল মুক্তিসংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছেন আছেন হাজী শরিতুল্লাহ।

১৮৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি মাত্র ৫৯ বছর বয়সে এই মহান মুজাহিদ, কৃষকবন্ধু, নিপিড়ীতের অস্থর প্রতীক, স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রসাধক এবং বাংলার অঞ্চলে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান স্বপ্নদ্রষ্টা পরাপাড়ে পাড়ি জমান। আল্লাহ তার সকল কর্মকে কবুল করুন। আমিন।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ