মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ।। ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১১ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
তারাবি নিয়ে ১০ হাফেজর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ফয়যে বর্ণভী সাবাহী মক্তব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ; পাসের হার ৯৯.৪৯% জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে বিলোপ করা সম্ভব নয়: নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে উপদেষ্টা মাহফুজের ‘মব’ নিয়ে পোস্ট, যা বলল ঢাবি ছাত্রশিবির ইফতা, আদবসহ বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি নিচ্ছে উত্তরার মাদরাসাতুল আযহার লালমাটিয়ায় দুই তরুণীকে সিগারেট খেতে না করা সেই রিংকুকে গ্রেফতার ‘অপরাধের সাম্প্রতিক ব্যাপকতার পেছনে পরাজিত শক্তির রাজনীতি ক্রিয়াশীল' একদিনে ২৯ হাজার কুরআনের কপি বিতরণ সৌদি আরবের ‘দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে’ নির্মাণাধীন ভবনের কাঠ পড়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু 

ফকির মজনু শাহ: ব্রিটিশ বিরোধী এক সংগ্রামী সুফী ।

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইফতিখার হোসাইন রাকিব।।

ঐতিহাসিক সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের মহানায়ক ফকির মজনু শাহ। মহানবী সা.-এর সিরাত এবং সাহাবীগণের জীবনী থেকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে দুনিয়ার বুকে সুফি মুজাহিদদের গড়ে তোলা অ্যান্টি-কলোনিয়াল মুক্তিসংগ্রামের বাংলাদেশী সংস্করণের মহান পথপ্রদর্শক সুফী ফকির মজনু শাহ।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । তরিকায়ে মাদারিয়া ধারার সুফী ছিলেন এই মহান বিদ্রোহী । তরিকায়ে মাদারিয়া এর প্রধান সুফি ছিলেন উপমহাদেশের অন্যতম ইসলাম প্রচারক হযরত বদীউদ্দীন শাহ-ই-মাদার। এই সিলসিলার ই সিলসিলাভুক্ত ফকির হযরত শাহ সুলতান হাসান মুরিয়া বুরহানা রহিমাহুল্লাহ। তিনি মুঘলজাদা শাহ মুহাম্মদ শুজারের ও পীর ছিলেন ।ভারতবর্ষে ইসলামী আধ্যাত্মিক ধারার ফকির-দরবেশদের মধ্যে যারা খান্দানি ফকির হিসেবে পরিচিত, তারা অনেকেই শাহ-ই-মাদারের সিলসিলার অনুসারী। হাসান বুরহানা নামে জারি হওয়া সিলসিলা ‘বুরহানা’ খান্দান নামে পরিচিত। এ খানদানের ফকিরদের বেশভূষা-চালচলনের কারণেই এ নামকারণ। ফকির মজনু শাহ্ ছিলেন এ বুরহানা ফকির সম্প্রদায়ের নেতা।

বাংলার বীর সন্তান ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরাণী, কৃপানাথ, মুশা শাহ, ফকির মনজু শাহ,পরাগল শাহ, চিরাগ আলি শাহ, প্রমুখের নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়েছিলো ঐতিহাসিক ফকির সন্ন্যাসি বিদ্রোহ। এই আন্দোলনে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন ফকির মজনু শাহ। তাঁর নেতৃত্বে ফকির-সন্ন্যাসীদের এ ‘বিদ্রোহের’ বিস্তৃতি ছিল কোচবিহার পর্যন্ত। তিনি ১৭৬০ সাল থেকে বাংলায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দীর্ঘ ২৬ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধে জড়িত ছিলেন।

তার সবচেয়ে অসাধারণ ও নৈপুণ্যের দিক হলো ইসলামের অনুসারী ফকির ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী সন্ন্যাসী ভিন্ন দুটি বিশ্বাসের ধর্মগুরুদের ঐক্য অক্ষুণ্ন রেখে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে তার সুদীর্ঘ সংগ্রামের অখণ্ডতা অব্যাহত রাখতে পেরেছিলেন।

তার আহ্বানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য এবং গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য 'অর্ধ সহস্রের' ও অধিক ফকির ও সন্ন্যাসীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিলেন।

এবং ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলেন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তেলি, তাঁতি, নাপিত সবাই সেদিন ফকির-সন্ন্যাসীদের পেয়েছিলেন ত্রাণকর্তা হিসেবে।

মজনু শাহের নেতৃত্বে ১৭৬৩ সালে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহীরা প্রথম আক্রমণ চালান ঢাকার ইংরেজ কুঠির ওপর।

ফকির-সন্ন্যাসিদের এই বিদ্রোহের কারণ ছিলো বাংলা ও বিহারে দীর্ঘদিন ধরে কৃষিকাজে জড়িত থাকা সন্ন্যাসি-ফকিরদের ইংরেজরা শোষণের শিকার বানিয়েছিলো।

বছরের বিশেষ সময়ে সন্ন্যাসী ও ফকির কৃষকরা তীর্থে যেতেন। ইংরেজরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের ওপর তীর্থ কর বসিয়ে দিয়েছিলো।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধার্য করা অত্যধিক রাজস্ব এবং জমি থেকে ইচ্ছেমাফিক কৃষক উচ্ছেদসহ বাংলা-বিহারের কৃষকদের নানা ভাবে শোষণ করেছিলো।

রাজস্ব আদায়ের নামে সার্বিক লুণ্ঠন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোকদের নির্দয় অত্যাচার করেছিলো।

ইত্যাদি আরো নানান কারণ ছিলো এই বিদ্রোহের।

ফকির মজনু শাহ ১৭৭১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতেতিনি দিনাজপুরে লেফটেন্যান্ট ফেলথামের নেতৃত্বাধীন সিপাহিদের সাথে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৭৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিপাহিদের চারটি দলের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

১৭৮৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ৫০০ সৈন্যসহ বগুড়া জেলা থেকে পূর্বদিকে যাত্রা করার পথে কালেশ্বরে লেফটেন্যান্ট ব্রেনানের অধীনে ইংরেজ বাহিনীর সম্মুখীন হন।

মৃত্যু ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি কানপুুর জেলার মকানপুরে শাহ মাদারের দরগায় মহান রবের ডাকে সাড়া দেন কালজয়ী সংগ্রামী এই পথপ্রদর্শক। অবসান ঘটে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অকুতোভয় নায়কের কর্মময় জীবনের উজ্জ্বল এক অধ্যায়ের।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ