মুহাম্মদ ইশতিয়াক সিদ্দিকী
বড়দিন। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচে বড় ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব। অনেকের কাছে এটি ক্রিসমাস নামেও পরিচিত। প্রতি বছরের ২৫শে ডিসেম্বর বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বৃহৎ ও ব্যাপক আয়োজনে বড়দিন উদযাপন করা হয়।
মূলত যিশুর (ঈসা আ.) জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে বড়দিন পালন করা হয়। খ্রিস্টানরা পরস্পর উপহার প্রদান, গির্জায় উপাসনা, পারিবারিক সম্মেলন, গৃহসজ্জা, ভোজ, বড়দিনের বৃক্ষ, আলোকসজ্জা, মালা, যিশুর জন্মদৃশ্য এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনীর মাধ্যমে বড়দিন উদযাপন করে থাকে।
খ্রিস্টানদের বিশ্বাস মতে, বড়দিনের দিনটি বড় হওয়ার কারণ হলো, এদিন যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল। তবে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে বৃহৎ পরিসরে একটি বাৎসরিক খ্রিস্টীয় উৎসব পালন করা হলেও এই দিনটিই যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কিনা তা জানা যায় না। কিতাবুল মোকাদ্দস (বাইবেল) ডিকশনারিতে যিশুখ্রিস্ট জন্ম তারিখ সম্পর্কে লেখা আছে, কাল নিরূপণে বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে, ঈসা মসীহের জন্ম খ্রিস্টাব্দ সাল গণনা করার চার বছর আগে হয়েছিল। এই সময় অনুসারে প্রথম খ্রিস্টাব্দ থেকে যিশুর বয়স আরো চার বছরের বেশি। (কিতাবুল মোকাদ্দস ডিকশনারি পৃষ্ঠা ১৪৭)
২৫ শে ডিসেম্বর বিশ্বের সকল প্রটেস্ট্যান্ট ও রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী বড়দিন উদযাপন করলেও গ্রিক অর্থোডক্স ও কপটিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় ৭জানুয়ারি এবং আর্মেনীয় মণ্ডলী ১১ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে থাকে। ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে রোম সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের সময় সর্বপ্রথম বড়দিন পালন করা হয়। (কিতাবুল মোকাদ্দস ডিকশনারী পৃষ্ঠা ৫৮১)
বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জনগনও নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে। বড়দিন উপলক্ষ্যে ২৫ শে ডিসেম্বর সরকারী ছুটিও রয়েছে বাংলাদেশে। সরকার মহলের বিশেষ সুনজর থাকায় প্রতি বছর বড়দিন নিয়ে দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যম ও সরকার মহলে ব্যাপক উৎসাহ ও তৎপরতা দেখা যায়। এমনকি অনেক টেলিভিশনে বড়দিনকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতিনীতিভিত্তিক নাটক টেলিফিল্ম ও অনুষ্ঠান প্রচার করতেও দেখা গেছে।
ভারতীয় অাকাশ সংস্কৃতিতে খ্রিস্টানদের প্রভাব-প্রতিপত্তি এখন অজানা নয়। গত অর্ধযুগে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও খ্রিস্টানদের উপস্থিতি ও প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চলমান এসব সাংস্কৃতিক অগ্রগতি তাদের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনাকে স্পষ্ট করছে। এ বিষয়ে সচেতেন মহলের সচেতনতা জরুরী।
বড়দিনকে বলা হয়েছে সার্বজনীন উৎসব। যেমন বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ 'বাংলাপিডিয়া'র ৩নং খণ্ডের ২৮৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, "ক্রিসমাস যদিও ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত কিন্তু একটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবে পরিণত হয়েছে"। ইদানিং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে সার্বজনীন ও ধর্মনিরেপেক্ষ শব্দের প্রয়োগ বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকার মহলের 'ধর্ম যার যার উৎসব সবার' শ্লোগানটি ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিফাকের সাথে মিশে যাওয়ার পথ খুলে দিলো। এর মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় ও অাধুনিক তরুণ প্রজন্মের মধ্যকার বিভেদ যেমন বাড়ছে , সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজস্ব অনুষ্ঠানগুলোকে 'সার্বজনীন' প্রমাণে অপপ্রয়াসও বাড়ছে।
তাদের এসব কার্যক্রম, গতি ও অগ্রগতি দেখে মনে প্রশ্ন জাগে, বড়দিনের ব্যাপ্তি আসলে কত?
লেখক- পরিচালক, ভাষা ও দাওয়াহ ইনস্টিটিউট হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
-কেএল