।।কাউসার লাবীব।।
সাব-এডিটর
আমাদের সমাজের কিছু পুরুষ আছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ পড়েন, নিয়মিত জিকির-আযকার করেন, মসজিদে দান-খয়রাত করেন, বাইরের মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, এমন আরো অনেক ভাল ভাল কাজ করেন। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে তার সাপবেজি সম্পর্ক। বাড়িতে ঢুকেই তাকে মারধর শুরু করেন, গালিগালাজ করেন, দুর্ব্যবহার করেন।
আবার আমাদের সমাজের কিছু মহিলা আছেন, শবেবরাতে ইবাদত করেন, শবে কদরে রাতভর ইবাদত করেন, বছরের প্রায় সময় নফল রোজা রাখেন, গরিব-মিসকিন এলে তাকে পেট ভরে খাবার খাওয়ান। আবার স্বামীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করেন। স্বামীকে দেখলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। স্বামীর কথা মানেন না। স্বামীকে বুঝতে চান না।
এতো ইবাদত করার পরও এমন হওয়ার একটি বড় কারণ হল, আমরা পুরুষরা সাধারণত মনে করি, ‘জিকির করি এটা ধর্মীয় কাজ, নামাজ পড়ি এটা ধর্মীয় কাজ, রোজা রাখি এটা ধর্মীয় কাজ, দান-খয়রাত করি এটাও ধর্মীয় কাজ। কিন্তু আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি কেমন ব্যবহার করবো সেটাতে তো আর ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ থাকার কথা না। আমার যেমন ইচ্ছে তার সঙ্গে তেমন ব্যবহার করবো; এতে কার কী আসে যায়!’
আবার আমাদের স্ত্রীরাও মনে করেন, ‘শবেবরাতে ইবাদত করা একটা ধর্মীয় কাজ, শবে কদরে রাতভর ইবাদত করা একটা ধর্মীয় কাজ, বছরের প্রায় সময় নফল রোজা রাখা একটা ধর্মীয় কাজ, গরিব-মিসকিন এলে তাকে পেট ভরে খাবার খাওয়ানোও একটা ধর্মীয় কাজ। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করব সেটা তো আমার ব্যক্তিগত কাজ। আমার যেমন ইচ্ছে তার সঙ্গে তেমন ব্যবহার করবো; এতে কার কী আসে যায়!’
অথচ ইসলাম এই বিষয়টাকে অনেক বড় করে দেখে। ইসলাম বলে ‘সাধারণ নফল ইবাদতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব হলো স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে এবং স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। একে অন্যকে কষ্ট দেবেনা। গালিগালাজ করবে না। একে অন্যকে সেক্রিফাইস করবে। বুঝতে চেষ্টা করবে। সুখদুঃখ ভাগাভাগি করবে। একের সুখ অন্যকে বিনোদিত করবে। আবার একের দুঃখ অন্যকে বিষাদিত করবে।
ইসলাম বলে, একজন মহিলার জন্য শবেবরাতে ইবাদত করার চেয়ে, শবে কদরে রাতভর ইবাদত করার চেয়ে, বছরের প্রায় সময় নফল রোজা রাখার চেয়ে, গরিব-মিসকিন এলে তাকে পেট ভরে খাবার খাওয়ানোর চেয়ে, স্বামীর সঙ্গে হাস্যরস করা, স্বামীকে খুশি রাখা, স্বামীর মন বোঝা বেশি উত্তম।
ঠিক তেমনিভাবে, একজন পুরুষের জন্য জিকির-আযকার করার চেয়ে, নফল নামাজ পড়ার চেয়ে, নফল রোজা রাখার চেয়ে, দান-খয়রাত করার চেয়ে, স্ত্রীর সঙ্গে হাসি দিয়ে কথা বলা, স্ত্রীর প্রয়োজনগুলো বোঝা, স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা বেশি উত্তম। স্বামীর উচিৎ হলো স্ত্রী যদি গালি দেয় তাহলে সেই গালি সহ্য করে তাকে গালি না দেয়া। স্ত্রী রাগ করলে সে রাগ সহ্য করা অনেক উত্তম।
হাদিসে এসেছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তুমি যদি একমুদ্রা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো, একমুদ্রা গরিব মিসকিনকে দান করো এবং একমুদ্রা পরিবারের জন্য ব্যয় করো; তাহলে সবচেয়ে বেশি নেকি পাবে পরিবারের জন্য যা ব্যয় করেছো সে মুদ্রায়।’ এ হাদিসের আলোকে বলা যায়, মসজিদে সাধারণ দান-সদকার চেয়ে, ভালবেসে স্ত্রীর জন্য যদি আইসক্রিম কিনে নিয়ে যান; তাহলে আপনার বেশি নেকি হবে। ইনশাআল্লাহ। তাই স্ত্রীকে প্রাণ খুলে ভালবাসুন। বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তাকে খুশি করতে চেষ্টা করুন। তার মন জয় করে চলার চেষ্টা করুন।
আর স্ত্রীকে দুটো বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। এক- যেসেবা স্বামী তার স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে নিতে পারবে না, শরিয়াহ অন্য কারো কাছ থেকে নিতে বৈধ করে না; এরকম সেবার ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য স্ত্রী সে সেবা আঞ্জাম দিতে হবে। তার জন্য এটি ওয়াজিব বা আবশ্যক। যদি এ ক্ষেত্রে স্বামীর কথা না শোনে তাহলে গোনাহগার হবে। আল্লাহর ফেরেশতারা তাকে লানত করবে। তবে যদি স্ত্রীর শরঈ কোন ওজর থাকে তাহলে ভিন্নকথা। দুই- বাড়ির বাইরে যেতে হলে, স্বামীর অনুমতি লাগবে।
এছাড়া, বাড়ির রান্না করা, ঘর-দুয়ার গোছানো, বাচ্চার যত্ন নেয়া, বাচ্চাবে প্যাম্পাস পরানো, গরু-ছাগল দেখাশোনা করা, হাঁস-মুরগি দেখাশোনার বিষয়গুলো আঞ্জাম দেয়া স্ত্রীর জন্য আবশ্যক নয়। স্ত্রীর যদি মন চায় তাহলে এসব করলে সওয়াব পাবে। কিন্তু স্ত্রী যদি এসব করার ক্ষেত্রে আপত্তি করে; তাহলে স্বামীর আবশ্যক হলো, স্ত্রীকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করা। অর্থাৎ কোনো লোক রেখে একাজগুলো করানো বা নিজে তাকে সহযোগিতা করা।
এসব বিষয়ের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়; সংসারকে গুঁছিয়ে তুলতে হলে, সংসারে সজিবতা ফিরিয়ে আনতে হলে একে অপরকে সহযোগতা করতে হবে। একে অপরকে সেক্রিফাইস করতে হবে। আর না হয় সংসারে সুখ পাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। আমিন।
(ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গির রাহিমাহুল্লাহর আলোচনার ছায়ালিপি)