আবু তাহের সিদ্দিকী
নিউইয়র্ক থেকে
করোনার শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে করোনায় মৃতদের জানাজা পড়িয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন বাংলাদেশী আলেম, নোয়াখালীর কৃতি সন্তান, নিউইয়র্ক আন-নূর কালচারাল সেন্টারের প্রিন্সিপাল মুফতী মুহাম্মদ ইসমাঈল। তখন দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়। তবে, শুধু জানাজায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না এই আলেম। করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত নিউইয়র্কবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ঘরবন্দি মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন হালাল খাবার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় গণমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে আবারো আলোচনায় আসেন তিনি।
গত ৩রা ডিসেম্বর ‘নিউইয়র্ক টাইমসে’ যুক্তরাষ্ট্রের করোনা স্বেচ্ছাসেবীদের সেবা কার্যক্রম নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে মুফতী ইসমাইলের করোনাকালীন মানবসেবার সাহসী ভূমিকার ভূয়শী প্রশংসা করা হয়। এতে বলা হয়, করোনাকালে মানবিক সেবাদানের জন্য বাংলাদেশের এক ইমাম তাঁর মসজিদ আন-নূর কালচারাল সেন্টারকে একটি অস্থায়ী স্টোর হাউসে রূপান্তর করেছেন; স্টোর হাউজে তিনি হালাল খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করে বিনামূল্যে নিউইয়র্কের ঘরবন্দি মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও এবং খবরাখবর পোষ্ট করে মানুষকে সচেতন করেছেন। বর্তমানেও বিরতিহীনভাবে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এই সাহসী আলেম।
জানা গেছে, জনদরদী মুফতী ইসমাঈল করোনা আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। নিউইয়র্কে করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানায় ফের তিনি জোর সেবা কার্যক্রম শুরু করেছেন। নিজ উদ্যোগে করোনায় মৃতদের জন্য কবর খরিদ করে মৃত লাশ দাফন করছেন।
বাংলাদেশেও করোনার শুরু থেকে তার প্রতিষ্ঠিত সেবা সংস্থা ‘আন-নূর হেল্পিং হ্যান্ড’ আলেম-উলামা, অসহায় পথশিশু, বেকার শ্রমিকসহ দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। গত ঈদুল আযহায় উত্তরবঙ্গসহ বেশ কয়েকটি জেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে কুরবানীর গোশত বিতরণ করা হয়। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মুন্সিগঞ্জে বেদে পল্লীতে অসহায় বেদে সম্প্রদায়কে খাদ্য, নলকূপ স্থাপনসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। এছাড়াও শীতে দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি আলেম মুফতী ইসমাইল বলেন, ‘মানবসেবাকে আমরা ইবাদত ও ঈমানী দায়িত্ব মনে করি। করোনার শুরু থেকেই নিউইয়র্ক ও বাংলাদেশে আমাদের সেবা কার্যক্রম চলমান। তিনি আরো বলেন, করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় আন-নূর মসজিদ ও আন-নূর কালচারাল সেন্টারকে নিউইয়র্কবাসীর জন্য উন্মোক্ত করে দেয়া হয়েছে। দাতাদের অনুদানে বিনামূল্যে খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি দাতা ও শুভাকাঙ্খীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমরা সকল শুভাকাঙ্খী ও দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, মহান আল্লাহর কাছে তাদের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সার্বিক কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করছি’।
-কেএল