শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

ওয়াজ-মাহফিলে প্রতিরোধ: আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া নয় কি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর

সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি ওয়াজ-মাহফিলে বক্তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করছেন কেউ কেউ। নীলফামারী জেলার পঞ্চপুকুর বাজারের একটি মাহফিলে মাওলানা মাসুদুর রহমান সিদ্দিকীর বয়ানের সময় হামলা হয়েছে। রাজধানীর ডেমরা ডগাইর এলাকায় ঘটেছে মাহফিল বন্ধের ঘটনা। হজরত মাওলানা আফতাব আহমেদের বয়ান চলাকালে উত্তেজিত এক শ্রোতা অশালিন আচরণ করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় মাহফিলে। জনতা জুতাবৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঐ লোকের উপরে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরকম হামলা হচ্ছে। ওয়াজে বক্তার মাইক কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে মাহফিল।

এমনটা কেনো ঘটছে? জনগণ কেনো নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছেন? বিশ্লেষকমহল বলছেন, কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিয়ান খান জয়ের একটি বক্তব্যে এরকম আইন তুলে নেয়ার কথা শোনা যায়। তিনি এক বক্তব্যে বলেছিলেন,ওয়াজ মাহফিলে যেখানেই কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া শোনা যাবে, কিংবা যারাই বিরোধিতা করবে, সেখানেই তাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। তার বক্তব্য প্রদানের পর থেকেই সারাদেশের ওয়াজ মাহফিলগুলোতে বিভিন্ন হামলা মামলার ঘটনা শোনা যাচ্ছে। এমনটাই বলেছেন দেশের বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক রাষ্ট্রচিন্তক মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভীর সাথে। তিনি বলেন, জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নিবে। এটা কখনোই উচিত না। এটা চরম নিন্দনীয়। মাহফিলে যদি কোনো শ্রোতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন,তাহলে তাকে যথাযথভাবে শান্ত করে কৌশলে মাহফিল চালিয়ে যাওয়া উচিত আয়োজকদের।

মাহফিলগুলোতে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির পেছনে বক্তাদের কোন হাত আছে কিনা? জানতে চাইলে মাওলানা উবায়দুর রহমান নদভী বলেন, আলেম-ওলামাগণ কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে বয়ান করবেন। মানুষকে নসিহত করবেন। এর পাশাপাশি বর্তমানে যে সকল অনৈতিক কার্যক্রম চলছে, সেগুলোরও সংশোধন করার দায়িত্ব আলেমদের। কোরআন হাদিসের বক্তব্য দিতে গিয়ে যদি কখনো এমন কোনো বক্তব্য চলে আসে, যা কারো বিরুদ্ধে সরাসরিভাবে চলে যায়; তাহলে সেখানে একটু সংযমের সাথে বক্তব্য দেওয়া হবে অধিক যুক্তিযুক্ত। আর এটাই হলো হেকমাত বা কৌশল।

কথা বলেছিলাম শিবচর মাদারীপুরের জামিয়াতুস সুন্নাহ এর মুহতামিম মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদীর সাথে। তিনি বলেন, মাহফিলে বক্তাকে বাধাপ্রদান মানে, আইনকে নিজের হাতে তুলে নেয়া। আর যিনি আলোচক তিনি একজন নায়েবে নবী। তাই তার উচিত আখলাকে নববীর প্রতি লক্ষ রেখে হেকমাতের সাথে আলোচনা পেশ করা। আর কুরআনের কোনো কথা গোপন করা যাবে না। সুতরাং বক্তা সতর্কতার সাথে কুরআন হাদিসের কথাগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরবেন বলে প্রত্যাশা তার।

কথা বলেছিলেন ময়মনসিংহের মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদীর সাথে। তিনি বলেন, মাহফিলে জনতার পক্ষ থেকে বক্তাকে কখনোই প্রতিরোধ করা হয় না। বরং ব্যক্তিবিশেষ থেকে এমনটা হয়ে থাকে। যেটা কখনোই উচিত নয। আর বক্তা যিনি হবেন তার উচিত সুন্দর কথা বলা। আর ‍যুক্তিযুক্ত অজুহাত দেখিয়ে মাহফিল বন্ধ করলে সেটা মেনে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু ঠুনকো কোনো অজুহাত দাড় করিয়ে দীনের এ বিশাল আয়োজনকে বন্ধ করার কোনো যুক্তিকতা নেই। আর বক্তাও যেনো এমন কোনো কথা না বলেন, যার মাধ্যমে সুযোগ সন্ধানিরা মাহফিল নিয়ে কথা বলার সুযোগ পায়।

কথা বলেছিলাম ফরিদাবাদ মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আবু সাঈদ এর সাথে। তিনি জানান, একটি মাহফিল একক প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বরং তিনদিক থেকে তিনজনের প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন হয় একটি মাহফিল। প্রথম দিক হলো, মাহফিলের আয়োজকগণ। দ্বিতীয় দিক হলেন মাহফিলে আগত বক্তাগণ। আর বাস্তবায়নের তৃতীয় দিক থাকে উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে। প্রত্যেকে যদি প্রত্যেকের জায়গায় সংযমী ও কৌশলী হয় তাহলেই সম্ভব একটি মাহফিলকে সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত করা।

এক্ষেত্রে আয়োজকদের ও অনেক ভূমিকা রয়েছে। বলছিলেন আল-মাদানী ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মু. ইমতিয়াজ উদ্দিন সাব্বির। তিনি জানান, একটি মাহফিল করার পূর্বে অনুমোদন নিতে হয় প্রশাসন থেকে। প্রশাসনের সাথে সুন্দরভাবে সুসম্পর্কের মাধ্যমে মাহফিল বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আয়োজকদের। তারা যেন এমন কোন বক্তা দাওয়াত না দেন, যিনি মাহফিলে এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত কিংবা উশৃঙ্খল করে ফেলবেন। মাহফিল বাস্তবায়নের জন্য আয়োজকগণই প্রথম ও অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করছেন আল-মাদানীর চেয়ারম্যান

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ