শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

মজলিস বা সভা সমাবেশের আদব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতিরই স্বতন্ত্র কিছু প্রথা, ঐতিহ্য ও নিয়মকানুন রয়েছে। বস্তুত, যেসব বিষয় একটি জাতিকে আরেকটি জাতি থেকে স্বাতন্ত্র্য দান করে সেগুলোর মধ্যে সেই জাতির নিজস্ব প্রথা, রীতি-নীতি ও নিয়মকানুন উল্লেখযোগ্য। এসবের ভিত্তিতে মুসলিম হিসেবে আমাদেরও কিছু জাতিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আমাদেরকে পৃথিবীর অন্যসব বিকৃত ধর্ম থেকে পার্থক্যমণ্ডিত করেছে।

জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের প্রতিটি বিধানই মানুষের জন্য কল্যাণকর। তদ্রুপ মুসলমান হিসেবে আমরা ইসলাম থেকে যেসব প্রথা, রীতি-নীতি ও সংস্কৃতির শিক্ষা পাই তার সবগুলোই আমাদের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে।

নবীজী সা. আমাদেরকে শিখিয়েছেন কীভাবে মজলিস বা কোনো সমাবেশে বসতে হয়, এবং কীভাবে সমাবেশ ত্যাগ করতে হয়। ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা কোনো মজলিসে নিজে বসবার জন্য অন্যকে জায়গা খালি করে দিতে বলবে না; বরং তোমরা অন্যের জন্য জায়গা প্রশস্ত করে দেবে। বুখারি ও মুসলিম। আর এ কারণেই ইবনে উমর রা. এর অভ্যাস ছিলো যে, যদি কেউ মজলিসে তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিতো, তিনি সেখানে বসতেন না।

কোনো মজলিস বা সভা করতে হলে প্রথমেই আগত অতিথিদের স্থান সংকুলানের কথা ভাবতে হবে। এমন কোনো জায়গায় সভা-সমাবেশ করা উচিত নয়, যেখানে মানুষের স্থান সংকটে পড়তে হয়। সভায় উপবিষ্ট লোকটি যেই শ্রেণিরই হোক না কেনো, যে দেরিতে এসছে তার জন্য আগে আসা ব্যক্তিকে উঠিয়ে দেওয়া কিংবা জায়গা করে দিতে বলা কোনোক্রমেই উচিত নয়। তবে যদি কেউ ইচ্ছে করে কারো জন্য জায়গা খালি করে দেয়, তাহলে সেখানে বসাতে কোনো সমস্যা নেই।

তবে কোথাও যদি কারো জন্য আগে থেকেই আসন নির্দিষ্ট করে রাখা হয়, তাহলে সেই স্থানে আগে আসলেও অন্য কারো বসা উচিত হবে না। যেমন- ছাত্র আগে আসলেও সে শিক্ষকের আসনে বসতে পারবে না। আবার ক্রেতা আগে আসলেও সে বিক্রেতার জন্য নির্ধারিত আসনে বসতে পারবে না।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি কেউ কোনো কারণে সমাবেশ থেকে উঠে গিয়ে আবার উক্ত স্থানে ফিরে আসে, তাহলে সেই স্থানে বসার সেই-ই অধিক হকদার। মুসলিম।

জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখনই আমরা নবীজীর সা. মজলিসে আসতাম, আমরা মজলিসের শেষ প্রান্তে বসতাম (অর্থাৎ যেখানে জায়গা পেতাম সেখানেই বসে যেতাম)। আবুু দাঊদ।

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায়, যখন কেউ কোনো সমাবেশে আসে তখন তার উচিত যেখানে জায়গা পাওয়া সেখানে বসে যাওয়া। সভায় উপবিষ্ট লোকদের উপর দিয়ে অতিক্রম করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয় । অথবা অন্য কাউকে জোর করে উঠিয়ে সেখানে আসন গ্রহণ করা উচিত নয়।

অনেকে সভায় এসে দুই ব্যক্তির মাঝখানে বসতে চেষ্টা করে। এটাও ঠিক নয়। আমর ইবনে শুয়াইব রা. থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কারো জন্য দুই ব্যক্তির মাঝখানে তাদের অনুমতি ছাড়া বসার অনুমতি নেই। তিরমিযী।

হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান রা. বলেন, যে ব্যক্তি পরে এসে মজলিসের মাঝখানে এসে বসে তাকে আল্লাহর রাসুল সা. অভিশম্পাত করেছেন। আবু দাঊদ। কারণ এতে পূর্বে আগত ব্যক্তিদের মনোযোগ বিনষ্ট হয়; ফলে সমাবেশের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।

আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, ঐ সমাবেশ সর্বোত্তম যেই সমাবেশে লোকেরা একে অপরের জন্য জায়গা করে দেয়। আবু দাঊদ। সুতরাং যদিও পরে আগত ব্যক্তির জন্য জোর করে সামনের দিকে যাওয়া উচিত নয়, তথাপি যারা আগে এসেছেন তাদের উচিত হবে, সম্ভব হলে পরে আগত ব্যক্তির জন্য স্বেচ্ছায় জায়গা করে দেওয়া।

সমাবেশের শেষে দুআ পাঠ

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি কেউ কোনো মজলিসে বসে এবং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় লিপ্ত হয়, সে যদি মজলিস ত্যাগ করার পূর্বে “সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আশহাদু আন্ লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা” পাঠ করে নেয়,তাহলে এর মাধ্যমে ওই মজলিসে বলা তার যাবতীয় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার গুনাহকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তিরমিযী। উল্লেখ্য, উক্ত হাদীসে দুআ পাঠের মাধ্যমে যে গুনাহের ক্ষমার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো ছগীরা বা ছোট গুনাহ। মজলিসে যদি কোনো কবিরা বা বড় গুনাহ হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য অবশ্যই আলাদাভাবে তাওবা করতে হবে।

আবু বারযাহ রা. বলেন, নবীজী সা. একবার মজলিস শেষে উপরোক্ত দুআ পাঠ করলে জনৈক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আপনি এমন কিছু শব্দ পাঠ করলেন, যা আপনি আগে কখনো পাঠ করেননি। তার উত্তরে নবীজী সা. বললেন, এই দুআটি মজলিসে হয়ে যাওয়া সবকিছুর জন্য কাফফারা। আবু দাঊদ।

যদিও রাসুলুল্লাহ সা. কখনোই কোনো মজলিসে অযথা কথাবার্তা বলতেন না, তথাপি তিনি তাঁর উম্মতকে শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে উক্ত দুআটি পাঠ করতেন। উক্ত দুআ পাঠের মাধ্যমে যে শুধুমাত্র অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার কাফফারা হবে তাই নয়; বরং এ দুআ পাঠের মাধ্যমে পাঠকারী মজলিস শেষের সুন্নাত অনুসরণের সওয়াবও পাবেন।

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যারা আল্লাহর নাম না নিয়েই সমাবেশ ত্যাগ করবে, তাদের জন্য ওই সমাবেশটি হবে দুর্গন্ধযুক্ত মরা গাধার মতো যা আখিরাতে তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। আবু দাঊদ।

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, যেকোনো সভা-সমাবেশ অবশ্যই আল্লাহর নাম নিয়ে শেষ করা। এমনকি দু’জন ব্যক্তির মধ্যে সাক্ষাৎ হলেও বিদায় নেওয়ার সময় অবশ্যই আল্লাহর নাম নিয়ে বিদায় নেওয়া।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ