বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বেফাকের সাহিত্য-সাংবাদিকতা কোর্স: আমার প্রেরণা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ হাসান মুরাদ

সামান্য প্রেরণা মানুষের ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নকে সজীব-সতেজ করে তোলে। কিছু অনুপ্রেরণা হতাশার ধোঁয়া সরিয়ে আশার পথ দেখায়। যারা উদার তারা প্রেরণা-অনুপ্রেরণার গল্প শোনান। কারো এক, দু’ কথায় জীবনের আমুল পরিবর্তন হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। একটু স্নিগ্ধ পরশ, ভালোবাসার ছোয়া, আর সামান্য পথ দেখানো, সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করেছে এর নজীরও কম নয়। আমাদের নবি সা. বলেছেন, তোমরা সুসংবাদ দাও, বিতৃঞ্চা সৃষ্টি করোনা। সহজ পন্থা অবলম্বন করো, কঠিন পন্থা পরিহার করো। (সহীহ মুসলিম শরীফ, হা-৪৩৭৫)

কিছু লিখব, বই বের হবে, মানুষ পড়বে; এমন স্বপ্ন ছিল ছোটকাল থেকেই। কিন্তু কীভাবে? একটা সময় তো আমাদের বাংলা কিছু পড়াও অপরাধ ছিল! একবার সখ করে একুশে বই মেলা থেকে কিছু বই কিনেছিলাম। কিন্তু পড়া হয়নি। ধরাপড়ে সব বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন গুরুজন। হয়ত তিনি আমার মঙ্গল চেয়েছেন তাই!

২০০৯ সালের কথা। বেফাক থেকে ২০দিনের ‘সাহিত্য ও সাংবাদিকতা’ কোর্স হয়েছিল। সুযোগ হাতছাড়া করিনি। তীব্র আগ্রহ নিয়ে পূর্ণসময় ছিলাম। সে স্মৃতি আজো ভুলতে পারিনা। সময়ের আলোচিত কিছু আদর্শ মানুষ জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ সব পাথেয় দিয়েছিলেন আমাদের সে কোর্সে। তাদের মাধ্যমে আজ শতশত তরুণ লেখক হয়েছে। তাদেরই কিছু স্মৃাতি, উপদেশ ও প্রেরণা নিয়ে আজকের লেখা।

১. প্রথমেই স্মরণ করছি বেফাকের সফল মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জাব্বার জাহানাবাদি রহ. এর কথা। উদারতায় তার জুড়ি খুজে পাওয়া কঠিন। একদিন হুজুর দুঃখ করে আমাদের অনেক কথা বলেছিলেন। শেষে বলেছিলেন ‘বেফাক হল ১২ আউলিয়ার জায়গা’। এমন পরিবেশেও আমি তোমাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে এ কোর্সের ব্যবস্থা করেছি। তোমরা সামনে বড় লেখক, সাংবাদিক হবে। মায়ের ভাষায় দীনের বানী ছড়িয়ে দিবে এটাই কামনা। আমার মত অনেকেই সেদিন আবেগাপ্লুত হয়ে পন করেছিল। এবং আলহামদুল্লিাহ অনেকেই চেষ্টা করে চলেছেন। কোর্সের সঞ্চালণায় ছিলেন বড় ভাই হুমায়ন আইয়ুব। সত্যি একজন রুচিশীল, পরিপাটি আর কর্মঠ মানুষ। ঐসময় তিনি সদ্য অপারেশনের রুগী ছিলেন। তারপরও কাঁধে ভর করে, হেটে হেটে যারপর নাই চেষ্টা করেছেন। এখন তিনি জনপ্রিয় অনলাইন প্রত্রিকা ‘আওয়ার ইসলাম’ এর সম্পাদক। আমাদের বেড়ে ওঠার পেছনে তার অবদান ভুলার মত নয়।

২. মাওলানা আবুল ফাতাই মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ.। একদম সাদাসিধে নিরঅহংকার মানুষ ছিলেন। সব সময় লুঙ্গি পরে থাকতেন। হাসি ঠোট যুগলে লেগেই থাকত। যাদের বোধ, বুদ্ধি আছে তারা হুজুররে লিখিত ‘ইসলামি অর্থনীতি ও আধুনিক রুপায়ন’ বইটি পড়লেই বুঝবেন, তিনি কোন স্তরের চিন্তাবিদ ছিলেন। হুজুর বলতেন আমি ৫দিন ভাবি তারপর ঝটপট লেখি। সুতরাং আগেই লেখতে যেও না। আগে ভাবো, চিন্তা-ফিকির করো। তারপর দেখবে তুমি জাত লেখক হতে চলেছ।

৩. মুহাম্মদ যাইনুল আবেদীন। সকলের পরিচিত নাম। আগের মানুষ আলিফ, বে তে পড়ত। শুদ্ধ করে পড়তে পারতনা। আমরাও বাংলা বর্ণে তালেবশ্ব, দৈন্তে-স্ব, দৈন্তেন পড়তাম। হুজুর শেখালেন তালুব্য-শ্ব, দন্ত-শ্ব, দন্ত-ন। কি দারুন উচ্চারণ করে শেখালেন! সেই থেকে বর্ণের বিশুদ্ধ উচ্চারন শিখেছি। পরে অবশ্য হায়াৎ মামুদের ‘বাংলা লেখার নিয়মকানুন’ থেকেও অনেক উপকৃত হয়েছি।

৩. মাওলানা লিয়াকত আলী। দীর্ঘদিন ধরে নায়াদিগন্তে কাজ করছেন। একজন শিক্ষাবিদ, শক্তিমান লেখক, গবেষক, অনুবাদক। আলেম হয়েছেন। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছেন। কথা কম বলেন। আমাদের বলেছিলেন লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হয়। আর ভালো লেখক হতে হলে উপস্থাপনা সহজ-সুন্দর করতে হয়। একবার দারুর রাশাদে গিয়েছিলাম। হুজুররে সাথে সাক্ষাত করতে। সেদিন কিছু কথা বলেছিলেন। আমার পছন্দের একজন জহির উদ্দীন বাবর ভাই তখন সেখানকার শিক্ষক। তার সাথেও দেখা করলাম। মাদানিনগর থেকে এসেছি বললাম। একটি মিনতি করলাম, আপনাদের স্মারকগ্রন্থ কি আর আছে? হাসি মুখে একটি হাতে ধরিয়ে দিলেন। টাকা! লাগবেনা বলে হাতে গুজে ফেরত দিলেন। বললাম যদি বইটির উপর কিছু লিখে দিতেন; এবং লিখেও দিলেন। হাতের লেখা কেমন ছিল! বলব আশ্চর্য! মানুষের হাতের লেখা এতো সুন্দর হয়?

৪. মাওলানা শরিফ মুহাম্মদ। তখন ‘আমার দেশে’ কাজ করতেন। বর্তমানে ইসলাম টাইমস-এর সম্পাদক। অনুস্মরনীয় একজন আলেম সাংবাদিক। বড়দের সোহবতপ্রিয় মানুষ। পায়চারি করে, মুখ ভরে, বলিষ্ঠ কন্ঠে কথা বলতে দেখেছি। একটি কথা খুব বেশি মনে পড়ে। বলতেন নিজেদের আদর্শ, স্বকীয়তা বিকিয়ে কিছু করবে না। কারণ অনেকেই স্রোতে ভেসে যায়। ভুলে যায় নিজ শেকড়ের পরিচয়।

৫. মুফতি এনায়েতুল্লাহ। তখন দৈনক ‘সমকালে’ কাজ করতেন শুনেছিলাম। সাদা চেহারায়, সাদা পাঞ্জাবি আর, কিস্তি টুপি পরে এসেছিলেন ক্লাসে। আমাদের প্রশ্ন ছিল, কি বিষয়ে লিখব? লেখার উপজীব্য কী? লেখার কিছু খুজে পাই না। তখন আমাদের গল্প শোনালেন। ‘একবার আমি আমার সেকেণ্ড হুমে (শ্বশুরবাড়ি) গিয়েছিলাম। সেখানে একটি খেজুর গাছ ছিল। তিন কি সাত মাথা বিশিষ্ট। সুতরাং সে খেজুর গাছ দিয়েই একটি ফিচার তৈরি করলাম। এমন তোমার দেখা যে কোন জিনিস দিয়েই একটি সুন্দর লেখা তৈরি করতে পার।’ আমি এখনো ভালো লিখতে পারিনা। তবে লেখার অনেক বিষয় খুজে পাই। বড়দের প্রেরণায় সাহস আছে।ইচ্ছে করলেই যে কোন বিষয়ে লেখার চেষ্টা করতে পারি।

৬. আরো অনেক স্মৃতি। লেখা বড় না হলে আরো কিছু লিখতাম। ছিলেন ছড়াগুরু মহিউদ্দীন আকবর, হাফেজ আহমদ উল্লাহ, লাবিব আব্দুল্লাহ, শাকের হোসেন শিবলি, আলি হাসান তৈয়ব আরো অনেকে। সকলকেই আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ