শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

কিংবদন্তির মহানায়ক মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

লেখক: কাজল সরকার
সম্পাদনায়: মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী

মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী (জন্ম ১৮৯৭- মৃত্যু ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮) ছিলেন উপমহাদেশে মুসলিম জাতিসত্ত্বার প্রবক্তা। উনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাসংস্কারক, সমাজহিতৈষী, চির সংগ্রামী-বিপ্লবী, আধ্যাত্মিক রাহবার ও মুজাদ্দিদ।

উপমহাদেশের রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ, বাংলার প্রথম স্বাধীনতাকামী রাজবন্দী (জাতীয় সংসদে স্বীকৃত) ইংরেজ শাসনাধীন ভারতে মুসলমানদের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থান দৃষ্টিভঙ্গির পশ্চাৎপদতা সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ে তিনি নতুন জীবনদৃষ্টি নির্মাণে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন।

তিনি একাধারে আলেমেদ্বীন, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তীক্ষ্ণমেধাবী লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ।
তিনি ছিলেন মানবতাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত সর্বজন শ্রদ্ধেয় অলিয়ে কামেল। বাঙালি মুসলিম পুনর্জাগরণের সব্যসাচী কারিগর। ঘনঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতির দূর্দিনের মুক্তির কাণ্ডারী, আলোর দিশারী ও তাঁর কালের আলোকিত মানুষ।

অবিভক্ত ভারতের এ অঞ্চলের অবহেলিত জনমানুষের চেতনার বাতিঘর। এ মহান জ্ঞানতাপস আপন উদ্যোগ কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মুসলমান জীবন ও মানসে যে শ্রেয় চেতনা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তাতে পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় অনগ্রসর মুসলমান জাতির উন্নতির লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম, হুলিয়া বরণ করে মানুষের মুক্তির জন্য ব্যয় করেছেন।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

মাওলানা শামছুল হুদা পাচঁবাগী রহ. ইংরেজী ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ও বাংলা ১৩০৩ সালের ফাল্গুন মাসে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার মাইজবাড়ী নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিছুদিন পর তাঁর পিতা গফরগাঁও এর পাঁচবাগ নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে সেই পাঁচবাগ গ্রামটি এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষের বাসস্থান হওয়ার জন্য বিখ্যাত হয়ে যায় । তিনিও এই গ্রামেই লালিত পালিত হয়ে বিশ্বের দরবারে মাওলানা পাচঁবাগী নামেই খ্যাতিলাভ করেছেন। জন্মসুত্রে তিনি এমন পিতার সন্তান ছিলেন যিনি শিক্ষা, সাধনায়, জ্ঞানে ও অধ্যাত্মিকতায় যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধন করে ছিলেন। তার নাম মৌলভী ক্বারী রিয়াজ উদ্দিন। তিনি কিংবদন্তি আলেম রশিদ আহম্মদ গাঙ্গুহীর খলিফা ছিলেন। অন্যাদিকে তাঁর মাতা উম্মে কুলসুমও ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার নারী। এমনই পিতা মাতার ঘরে তাঁর জন্ম।

শিক্ষা জীবন

শিশুকালে তিনি মাতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। কোনো স্কুল বা মাদরাসায় ভর্তি না হয়ে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। তিনি এতই মেধাশক্তির অধিকারী ছিলেন যে কোনো বিষয়ই একবারের অধিক পড়ার প্রয়োজন হতো না। তবে এই অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ও তীক্ষ্ণ মেধাকে আল্লাহ পাকের খাস দান বলে তিনি নিজেই বর্ণনা করতেন।

মাদরাসায় ভর্তির পর হতেই শামছুল হুদার প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। তিনি খুব আগ্রহের সাথে প্রতিটি শ্রেণিতে সিলেবাস বর্হিভূত নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। প্রথম বিভাগে প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে ছিলেন। তিনি জামাত-ই-উলার চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৯৮% নম্বর প্রাপ্ত হয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করত স্বর্ণপদক লাভ করেন। অতঃপর উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে তিনি শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ ক্রমে দীনি ইলমের পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা লাভের জন্য ভারতের রামপুর স্টেট মাদরাসায় ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে সেখানে গমন করেন। সেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্রকে দেখার জন্য শিক্ষিত মহলে সাড়া পড়ে যায়। এবং ঐ মহল তাঁকে ডেকে নিয়ে সাক্ষাৎ করে সম্মাননা জানান।

মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার পূর্বেই হাদিসের ক্লাসে স্বেচ্ছায় যোগদান করে ছিলেন। মুহাদ্দিস সাহেব একটি হাদিস পড়ানোর পর মাওলানা শামছুল হুদা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে মুহাদ্দিস সাহেবকে বললেন যে এই প্রসংগে হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিস রয়েছে যা উল্লেখ করলে বিষয়টি অধিকতর বোধগম্য ও পরিষ্কার হতে পারে। অতঃপর তিনি সেই হাদিসখানা মুহাদ্দিস সাহেবের অনুমতিক্রমে বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করলেন। মুহাদ্দিস মহোদয় বিস্মিত হয়ে বললেন যে ছাত্র হাদিসের এমন উচ্চ পর্যায়ের কিতাব পড়াশোনা করেছে তার আর এখানে ভর্তি হয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই। বরং নিজের দেশে গিয়ে জনগনের সেবা করাই উত্তম।

তখন রামপুরের অধ্যক্ষ ছিলেন মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহারানপুরী। তিনি ছিলেন দর্শনশাস্ত্রের উঁচু স্তরের পণ্ডিত। মাওলানা শামছুল হুদা তার কাছ থেকে দর্শনের পাঠ গ্রহণ না করে দেশে ফিরতে চাচ্ছিলেন না। তবে মাওলানা সাহারানপুরীও ছিলেন কিঞ্চিৎ কঠোর স্বভাবের। ফলে তিনি মনে মনে কিছুটা ভীতও ছিলেন। এরপরেও সাহস সঞ্চার করে মাওলানা সাহারানপুরীর কাছে দর্শনপাঠের আবেদন জানান৷ সেখানেও তিনি সফল হন। একের পর এক দর্শনশাস্ত্রের বড় বড় সব কিতাব আত্মস্থ করে ফেলেন। মাওলানা সাহারানপুরী তার উপর আশ্বস্ত হলেন৷ এবং বললেন, তোমার পড়ালেখা সম্পন্ন বলেই আমি আশা করি। তুমি এখন দেশে ফিরে জনসেবায় নিয়োজিত হওয়াই বেশী মঙ্গলজনক হক। মাওলানা শামসুল হকের জ্ঞান অন্বেষণের নেশা তখনো কাটেনি। তিনি ইংরেজি শিক্ষার জন্য লাহোরের অরিয়েন্টাল কলেজে চলে যান। অরিয়েন্টাল কলেজ থেকে মাওলানা শামসুল হকের তেমন কিছু শেখার ছিল না। তিনি তখনি ভালো মানের ইংরেজি জানতেন।

চির বিপ্লবীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

১৯৩৬ সালে যখন গফরগাঁও উপজেলার ঐতিহ্যবাহী উস্থি ইডনিয়ন ভেঙ্গে পাঁচবাগ ইউনিয়নের সৃষ্টি হয়, তখন অান্দোলন- সংগ্রামের অগ্রমহানায়ক কিংবদন্তি মাওলানা শামছুল হুদার সম্মানে ইউনিয়নের নাম হয় পাঁচবাগ ইউনিয়ন। এবং শামছুল হুদা পাঁচবাগী রহ. হন নতুন সৃষ্ট ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এমএলএ ও এমএনএ  (আইনপ্রণেতা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ১৯৩৭ সালে কৃষক প্রজা পার্টির প্রার্থী হিসেবে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৪৫ সালে তিনি ইমারত পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন দলটির সভাপতি ও সানাউল্লাহ ছিলেন দলটির সহসভাপতি। ১৯৪৬ সালেও তিনি বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মাওলানা শামসুল হুদা অাজীবন অবহেলিত নিপীড়িত নিষ্পেষিত নিগৃহীত জনগোষ্ঠীর অধিকার অাদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্বে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী থেকে শুরু করে নানা ধরনের মামলা হয়েছে। এ জন্য তাঁকে ভীষণ দুঃখ-কষ্ট, জেল-জুলুম, হুলিয়া সহ্য করতে হয়েছে।

চির সংগ্রামী রাজনীতিবিদের কর্মময় জীবন

বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মাওলানা শামছুল হুদা দেশে ফিরে আসার পর সামাজিক অবস্থা ও জনগণর করুণ দশা দেখে ব্যথিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে জমিদারদের অত্যাচারে দেশের জনগণ সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করত৷ এবং মুসলমান প্রজারা গরু কোরবানী করতে পারত না। যদি কোনো মুসলমান গরু কোরবানী করত তা হলে জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনী জরিমানা আদায় করত। মাওলানা শামছুল হুদা এর প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দেন এবং হোসেনপুর এলাকায় ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করে প্রকাশ্যে গরু কোরবানী করেন। এরপর হতেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন সহ দেশের মেহনতি কৃষকদের মুক্তির জন্য সারা জীবন আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। আন্দোলন করার কারণে ব্রিটিশ সরকার, জমিদার সংগঠন এবং পাকিস্তান সরকার সব মিলিয়ে ১০২১টি মামলা দায়ের করে তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি সকল মামলা সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করেন। এসব মামলার কারনে তাকে ময়মনসিংহ শহরে ৮ বছর নজরবন্দি হিসাবে আটকে রাখে।

প্রেস স্থাপন ও ইশতেহার, লিফলেট প্রকাশ

বাঙালি মুসলিম মহাজগরণের পুরোধা জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনগনের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তিনি অত্যাচারী হিন্দু জমিদার,বৃটিশ ও পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান করার জন্য, তাঁর অাহবান মুক্তিকামী মানুষের কাছে পৌঁছাতে অজপাড়াগাঁ পাচঁবাগ গ্রামে ‘শামছি’ প্রেস নামে একটি প্রেস স্থাপন করেন। ময়মনসিংহ শহরে 'ফারুকী' প্রেস নামে আরো একটি প্রেস স্থাপন করেন। উক্ত প্রেস হতে প্রচারপত্র-লিফলেট, হ্যান্ডবিল ও ইস্তেহারের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করতেন। তিনি আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় ১০,০০০ এর বেশি প্রচারপত্র ছাপিয়েছিলেন। তিনি প্রচারপত্রে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার সমর্থক ছিলেন

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার

মহান শিক্ষাসংস্কারক মাওলানা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে সময় মাদরাসায় শুধুমাত্র আরবি ছাড়া অণ্য কোন বিষয় সিলেবাসে অর্ন্তভুক্ত ছিলনা তখনকার সময়ে তিনি তার প্রতিষ্ঠানে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত সহ সিলেবাস বর্হিভূত পড়াশোনা করাতেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নীত হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা শেষে সারা বাংলাদেশে অসংখ্য ছাত্র নিজ নিজ এলাকায় আধুনিক আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে ইসলামী শিক্ষার প্রসার করে। যা বর্তমানে মাদরাসার রোডম্যাপ হিসাবে পরিচিত আধুনিক শিক্ষায় পরিণত হয়েছে। তিনি নারী শিক্ষার অগ্র পথিক ছিলেন। তিনি নিজ বাড়ীতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সমাজকে শিক্ষার অালোয় উদ্ভাসিত করেছেন। তদানিন্তন পাকিস্থানে সর্ব প্রথম তার দুই মেয়ে কামেল পাশ করেন। তিনি শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্কারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল।

মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান

মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ গ্রহণ করেন । কেননা ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার সময় থেকেই মাওলানা শামছুর হুদা পাকিস্থানের বিরোধীতা করেন। এবং বঙ্গভঙ্গ রদের পক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৭১ সালে তিনি রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্থানী হায়েনাদের হাত থেকে হিন্দু, মুসলমান পুরুষ ও মা বোনদের রক্ষা করতে তার বাড়ীতে মসজিদে ও মাদরাসায় আশ্রয় দান করেন। তাদের ইজ্জত ও জীবন রক্ষা করে সকলের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বাড়িতে শরণার্থীদের তিনি খাবারের ব্যবস্থা করতেন এবং মুক্তিযুদ্ধে আগ্রহী যুবকদেরকে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দিতেন এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শামছুল হুদা পাঁচবাগী ষাটের দশকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এরপর রাজনীতিতে জড়াননি।

পথিকৃৎ সম্পাদক ও প্রকাশক

ধীমান জ্ঞান তাপস, প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক বহুভাষাবিদ, আলেমেদ্বীন মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী উপমহাদেশের একজন পথিকৃৎ সাংবাদিকও বটে। তিনি বাংলা, আরবী ও উর্দু ভাষায় যথাক্রমে ‘দ্বীন-দুনিয়া, হুজ্জাতুল ইসলাম ও তর্জুমানে দ্বীন’ নামে তিনটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। ‘দ্বীন-দুনিয়া’র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৩৩৬ সালের আষাঢ় মাসে, তাঁর গ্রামের বাড়ি গফরগাঁও থানার পাঁচবাগ থেকে।

মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগীর কথিপয় বিখ্যাত উক্তি

বহুমাত্রিক উজ্জ্বল প্রতিভার অধিকারী অগ্নিপুরুষ মাওলানা পাঁচবাগী রহ. ছিলেন-দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দাঈ ইলাআল্লাহ।
আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্থা ইসলামী বিধি-বিধান প্রচার-প্রসারের নিবেদিতপ্রাণ মহান মুজাহিদ ও সংস্কারক।
মাওলানা সামছুল হুদা কুফুরি শেরেকি, বেদাতি, কুসংস্কার, সুদ-ঘোষ, অন্যায়,অবিচার, জুলুম, কবরপূজা, মাজারপূজা, কবরে আলোকসজ্জা, বাতি প্রজ্জ্বলন, উরস করা ইত্যাদির বিরুদ্ধে আজীবন জিহাদ করে গেছেন।

তিনি বলতেন- ‘কবরপূজা আর দূর্গাপূজা একই কথা’।

তিনি তাঁর ইশতেহার, প্রচারপত্রে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রস্তাবের বা পাকিস্তান তৈরী অান্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলতেন- ‘পাকিস্তান নয় এ হবে ফাঁকির স্থান’।

এছাড়া ও তিনি বলেছিলেন - ‘কিশোরগঞ্জের কিশোর দল, তারচেয়ে ভালো ভেড়ার দল’।

অনুকরণীয় আদর্শ ও সমাজসেবা

আমৃত্যু তিনি ঐতিহাসিক শাহজাদী বেগম ওয়াকফ স্টেটের মুতাওয়াল্লী ছিলেন। শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের সাথে মওলানা পাঁচবাগীর আপোষহীন সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে টিপু সুলতানের বংশধর মোগলকন্যা শাহজাদী বেগম মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগীর অজান্তেই তাকে বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহের তিনটি তৌজিভুক্ত বিশাল ওয়াকফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী মনোনীত করে যান। শামছুল হুদা পাঁচবাগী শাহজাদী বেগম ওয়াকফ স্টেটের মোতাওয়াল্লি ছিলেন। তিনি মুসমানদের হীনম্মন্যতা দূর করতে পার্শ্ববর্তী হেসেনপুর বাজারে নিজ হাতে মাছ বিক্রি করে দেখিয়ে গেছেন কোনো কাজই ছোট নয়।

মৃত্যুবরণ

মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী রহ. আজীবন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আপোসহীন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য জমিদার ও সরকারের বিরুদ্ধে অান্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বে দিয়ে কিংবদন্তির মহানায়কে পরিণত হন।

মহান আল্লাহর অলি, প্রিয়বান্দা, দীন ইসলামের সাধক সাবেক জাতীয় গণপরিষদ সদস্য ১৯৮৮ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর ৯১ বছর বয়সে ময়মনসিংহে নিজ বাসভবনে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান, মৃত্যু যবানিকার ওপারে। মৃত্যুর পর পাঁচবাগ জামে মসজিদের উত্তর পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী রহ. হতে পারেন আমাদের আদর্শ উদাহরণ। আজকে যেসব ইসলামপন্থী দল রাজনীতি করছে, তাদের জন্য মাওলানার জীবনে রয়েছে উত্তম নমুনা। এত গুণের অধিকারী একজন সফল মাওলানার উদাহরণ বঙ্গদেশে বিরল।

পাঁচবাগী সাহেব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. এর আত্মজীবনী ‘জীবনের খেলাঘর’ পড়া যেতে পারে। আল্লাহ তাঁর কবরকে নুরে রহমতে পূর্ণ এবং করুণা ও কল্যাণশিশিরে সিক্ত করুন।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ