শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

গঠনতন্ত্র মানলে বেফাকের শীর্ষ পদে কতটা সুযোগ আছে রাজনীতিকদের!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিবেদক: শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.-এর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো পদ শূন্য হয়েছে। বিশেষ করে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া-বেফাকের সভাপতি এবং আল হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান পদে কে নির্বাচিত হচ্ছেন সেটাই এখন বেশি আলোচিত হচ্ছে। আগামী ৩ অক্টোবর বেফাকের আমেলার বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকেই সভাপতির শূন্য পদ পূরণ করা হবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যিনি বেফাকের সভাপতি হবেন তিনিই পদাধিকার বলে হাইয়্যাতুল উলয়ার চেয়ারম্যান হবেন। এজন্য কওমি অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ এই দু’টি পদে কে বসতে যাচ্ছেন এটা নিয়ে সর্বত্র দেখা দিয়েছে কৌতূহল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা।

বেফাক দেশের লাখো আলেম-উলামা এবং মাদরাসা ছাত্রের প্রাণের প্রতিষ্ঠান। নামে শিক্ষাবোর্ড হলেও বেফাক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ে বেশি কিছু। এজন্য শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় বেফাকের অধীনে। এখন পর্যন্ত বেফাকের যিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সবাই গোটা জাতির কাছে শ্রদ্ধা ও সমীহের পাত্র ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন যিনি সভাপতি পদে নির্বাচিত হবেন তিনিও সব মহলে ভক্তি ও শ্রদ্ধার পাত্র হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

বেফাকের সদর বা সভাপতি নির্ধারণের বিষয়ে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে পরিষ্কারভাবে চারটি নিয়ম বা মূলনীতি দেওয়া আছে। মূলনীতিগুলো হলো: ১. উক্ত প্রতিষ্ঠানের সদরকে অবশ্যই হক্কানি আলেমে দীন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, বিবেচনা শক্তির অধিকারী, কর্মতৎপর, বেফাকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি আস্থাশীল ও বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সকল মহলের আস্থা ও শ্রদ্ধাভাজন, হক্কানি কোনো বুজুর্গের নিসবতওয়ালা, যুগ চাহিদার সম্পর্কে সচেতন, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি অগ্রগতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।

২. যারা প্রতিষ্ঠানের সদর বা নায়েবে সদর হবেন তাদেরকে অবশ্যই নিয়মিত বেফাকের সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মাদরাসার কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি হতে হবে।

৩. বেফাকের প্রতি আন্তরিক, বেফাকের হিতাকাঙ্ক্ষী এবং বেফাকের প্রতি যাদের ত্যাগ রয়েছে এমন ধরনের ব্যক্তিত্ব হতে হবে।

৪. কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তা বা সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত বা একাধিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বা দায়িত্বশীল, এমন ধরনের ব্যক্তি অত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য সদর হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। এই চার শর্তের ভিত্তিতেই বেফাকের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রধান ব্যক্তি নির্বাচিত হবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শূন্য হওয়া বেফাকের সদর বা সভাপতি পদ পূরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা তৎপরতা চলছে। সভাপতি হওয়ার দৌড়ে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও আছেন। বেফাকের জন্য তাদের ত্যাগও কম নয়। তবে বেফাকের গঠনতন্ত্র মানলে তাদের শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার সুযোগ কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বেফাক সারাদেশের আলেম-উলামারা চান জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদে এমন কেউ অধিষ্ঠিত হোন যিনি সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক গণ্ডির ঊর্ধ্বে।

সভাপতির পাশাপাশি বেফাকের মহাসচিব এবং সিনিয়র সহসভাপতি পদটিও শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই দু’টি পদে থাকা মাওলানা আবদুল কুদ্দুস পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি পদত্যাগ করলে এই দুটি পদেও আসবে নতুন মুখ। এক্ষেত্রে মহাসচিব পদটি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ এজন্য সেখানেও রাজনীতিকদের বসাতে বিধিনিষেধ রয়েছে বেফাকের গঠনতন্ত্রে।

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের প্রথম সভাপতি ছিলেন পটিয়া মাদরাসা সাবেক মুহতামিম মাওলানা হাজী মুহাম্মদ ইউনুস রহ.। এরপর ওই পটিয়ার আরেক মুহতামিম মাওলানা হারুন ইসলামাবাদীও সভাপতি ছিলেন কিছুদিন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সভাপতি পদে ছিলেন সিলেটের শায়খুল হাদিস আল্লামা নূরউদ্দীন গহরপুরী রহ.। আর ২০০৫ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত প্রায় ১৫ বছর এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ.।

আর বেফাকের প্রথম মহাসচিব ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.। তিনি কিছুদিন দায়িত্ব পালন করার পর মহাসচিব হন মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ.। এরপর দীর্ঘদিন মহাসচিব ছিলেন মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী রহ.। ২০১৬ সালে তার ইন্তেকালের পর কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত পরে কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।

এখন পর্যন্ত বেফাকের সভাপতি ও মহাসচিবের দায়িত্ব যারা পালন করেছেন সবাই ছিলেন শীর্ষ আলেম এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। গঠনতন্ত্রে ধারা যুক্ত হওয়ার পর বেফাকের শীর্ষ পদে কোনো রাজনীতিককে বসানো হয়নি। জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এই দু’টি পদে যোগ্য, গ্রহণযোগ্য এবং অপেক্ষাকৃত বিতর্কমুক্ত কেউ আসুক এমনটাই প্রত্যাশা পুরো কওমি অঙ্গনের।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ