শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল

কাজানের কুল শরীফ মসজিদে নামাজ হয় মাত্র দুই ওয়াক্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: রাশিয়ার সর্ববৃহৎ নদী ভলগা। একই সাথে পুরো ইউরোপেরও। ৩ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী ছুঁয়ে গেছে এবারের বিশ্বকাপের তিন ভেন্যু কাজান, সামারা ও নিজনি নভগোরদ শহরকে। কাজান এরিনা (স্টেডিয়াম) ও সামারা এরিনার বেশ কাছ দিয়ে বয়ে গেছে এই ভলগা নদী।

কাজানে এই ভলগা নদীর তীরেই অবস্থিত কুল শরীফ মসজিদ। রাশিয়ার অন্যতম মুসলিম অধ্যুষিত প্রদেশ তাতারস্তানের রাজধানী কাজান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই দেশের অন্য দুই মুসলিম প্রদেশ হলো চেচনিয়া ও দাগেস্তান। তাতারস্তানের জনগোষ্ঠির ৬০ ভাগ মুসলিম। কাজেই এখানে মসজিদের উপস্থিতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

স্থানীয় তাতার মুসলিমদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, অনেক মসজিদ রয়েছে কাজানসহ পুরো তাতারস্তানে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্য কুল শরীফ মসজিদ। গাঢ় নীল রঙের এই মসজিদের বিশাল গুম্বুজ ও চারটি সু-উচ্চ মিনার চোখে পড়ে বহু দূর থেকে। রাতে যখন আলো জ্বলে উঠে এই মিনার ও গুম্বুজে তখন আরো সুন্দর লাগে এই মসজিদকে।

চারদিক থেকেই দেখে চোখ জুড়ায় কুল শরীফ মসজিদ

ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এই নয়নাভিরাম মসজিদে নামাজ পড়তে পারেন না এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকগণ। কারণটা বলা আছে দরজার সাথে সাটানো সাইনবোর্ডে। সেখানে লেখা আছে, সকাল নয়টা থেকে বিকেল সাতটা পর্যন্ত খোলা এই মসজিদ। জানা যায়, এখানে দিনে দুই বেলা নামাজ হয়। তা যোহর ও আসর। বাকী সময়ে বন্ধ থাকে এই ইবাদত ঘর। জানা যায়, এই মসজিদে নিয়মিত জুমার নামাজ আদায় করেন স্থানীয় মুসলিমরা। ঈদের নামাজও হয়। তখন মুসলিমদের ঢল নামে কুল শরীফ মসজিদে। নামাজের সময় ছাড়া বাকী সময়ে বন্ধ থাকে এই মসজিদের দরজা। না রেখে যে উপায়ও নেই। গ্রীষ্মকালে দর্শনার্থীরা বিশেষ করে মহিলারা স্বল্প পোশাকে ঘুরতে ও ছবি তুলতে আসেন এখানে।

কুল শরিফ মসজিদের আরেকটি ভিউ

পুরো মসজিদ চত্তরকে বলা হয় কাজান ক্রেমলিন। মসজিদের ১ শত গজ দূরেই অবস্থান বিশাল এক গির্জার। নাম ব্লাগোভিশানস্কি চার্চ। মুসলিম ও খৃষ্টানরা জানালেন এই দুই ধর্মের মানুষদের মধ্যে যে সম্প্রতির বন্ধন বিদ্যমান তা বুঝাতেই পাশাপাশি মসজিদ ও গির্জার অবস্থান। তাতার মুসলিমদের অনেকে জানালেন, খ্রিস্টান প্রধান দেশটিতে তারা বেশ শান্তিতে আছেন। কোনো সমস্যা নেই। অনুপস্থিত ধর্মীয় উত্তেজনাও।

পাশেই অবস্থান সুইউমবিকে টাওয়ারের। পুরোনো এই টাওয়ারকে ঘিরে আছে এক ভালোবাসার কাহিনী। সাত দিনের মধ্যে টাওয়ার নির্মাণ করতে পারলে তাকে বিয়ে করতে রাজী হবেন এক মহিলা। এই শর্ত দেয়া হয় স্থানীয় অধিপতিকে। নির্ধারিত সময়ের আগে ঠিকই টাওয়ার নির্মাণ শেষ করেছিলেন ওই অধিপতি। কিন্তু এরপরই তার বোধদয় হয়- ওই মহিলাতো আমাকে পছন্দ করেনি, করেছে টাওয়ারকে। তাই পরে তিনি আত্মহত্যা করেন।

রাতের কুল শরীফ মসজিদ আরো দৃষ্টি নন্দন

স্থানীয় মুসলিমদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার কমিউনিস্ট শাসন আমলে অন্য সব এলাকার মতো তাতারস্তানেও বহু মসজিদ ধবংস করা হয়েছিল। কিন্তু হাত দেয়া হয়নি এই কুল শরীফ মসজিদে। ধর্মবিদ্বেষী কমিউনিস্টরা অবশ্য বহু গির্জাও ধ্বংস করেছিল। তা রুশদের দেয়া তথ্য।

কাজানে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই মসজিদ। মসজিদটির ছবি সম্বলিত কার্ডও বিক্রি হচ্ছে আশপাশে। পর্যটনের প্রচারণায় আছে এই মসজিদের ছবি। স্বল্প পোশাকের নারী পর্যটকরা এসে এই মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের ক্যামেরাবন্দী করছিল। অন্য ধর্মাবলম্বী ছাড়াও স্থানীয় তাতার মুসলিম মেয়েরাও ছোট পোশাকে মসজিদের পাশে ঘুরাঘুরি করে। আবার হিজাব পরাও আছেন কেউ কেউ।

বিশাল এলাকা জুড়ে এই মসজিদ চত্তর। চারপাশে দেয়াল ঘেরা। বেশ উঁচুতে অবস্থান এই মসজিদের। ঘুরে ঘুরে মাটির উপর নির্মিত সিড়ি ডিঙিয়ে যেতে হয় মসজিদে। অবশ্য তাতে ক্লান্তি লাগে না। পাশেই থাকা ভলগা নদীর বাতাসে ক্লান্তি বহুদূরে পালায়। তিন চারটি গেট দিয়ে প্রবেশ করা যায় কুল শরীফ মসজিদে। মসজিদ চত্তরে উঠে পুরো এলাকা চমৎকার দৃষ্টিগোচর হয়। মসজিদ লাগোয়া আরো কিছু ভবন আছে। তা প্রশাসনিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। পানি সংরক্ষণ এবং অগ্নি নির্বাপনের জন্য যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তাও মসজিদের গম্বুজের রঙে। সব মিলে এক অসাধারণ পরিবেশ।

কাজানকে বলা হয় রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম নগরী। সেই সাথে তৃতীয় রাজধানীও। নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খেলাধুলার জন্য বিখ্যাত এই শহর। নামকরা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত এখানে। জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেশ কম। ২১ জন বাংলাদেশী ছাত্র সহ হাজার হাজার বিদেশী ছাত্র পড়ছেন এখানে। স্থানীয় ফুটবল ক্লাব রুবিন কাজান বেশ নাম করা রাশিয়া ও ইউরোপে। তাদের নিজস্ব মাঠ কাজান সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম। তা এই মসজিদের একটু সামনেই। এখন বিশ্বকাপ ভেন্যূ কাজান এরিনাও তাদের দখলে। ২০১৩ সালে কাজানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল গ্রীষ্মকালীন বিশ্ব ইউনিভার্সিটি গেসম প্রতিযোগিতা। ১৬২ দেশের ১০ হাজার ৪০০ অ্যাথলেট এতে অংশ নেয়। যা ছিল গেমসের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ। কাজান এরিনার পাশেই সেই গেমসের সুইমিং পুল।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ