মোস্তফা ওয়াদুদ: বেফাকের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা না নেয়া বেফাকের একটি অদূরদর্শীতা বলে মন্তব্য করেছেন জামিয়া দারুর রাশাদ মাদরাসার শিক্ষাসচিব ও মুহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা লিয়াকত আলী। আজ আওয়ার ইসলামের সাথে এক ফোন আলাপে তিন এসব কথা বলেন ।
তিনি বলেন, বেফাকের সব মারহালার পরীক্ষা না নেয়া হলো বেফাকের দুর্বলতাকে স্বীকার করে নেয়া। পরীক্ষা না নেয়ার ক্ষেত্রে তারা যে যুক্তিগুলো দিচ্ছেন এগুলো হলো বেফাকের দুর্বলতার আলামাত। দূর্বলতা হলো শৃঙ্খলার। পরীক্ষা না নেয়া মানে মাদরাসাগুলোর মাঝে যে শৃঙ্খলা নেই, এটা একরকম আনঅফিসিয়াল স্বীকার করে নেয়া।
বেফাক পরীক্ষা না নেয়ার ক্ষেত্রে বেফাক সংশ্লিষ্টগণ সাধারণ শিক্ষার সাথে তুলনা করে থাকেন। কথা হলো, করোনাকালীন সনময়ে সাধারণ শিক্ষাবর্ষ মাত্র শুরু হয়েছিলো। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুদিন পরই মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। আর কওমি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম একরকমের শেষ হয়ে গিয়েছিলো। কেননা তারা যদি আর এক সপ্তাহ সময় পেতেন তাহলেই তাদের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হতো। এমতাবস্থা সাধারণ শিক্ষার সাথে মিলিয়ে মাদরাসার পরীক্ষা না নেয়াটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি হলো বেফাকের একটি অদুরদর্শীতা। এছাড়া ছাত্রদের মাঝে বেফাকের নিজস্ব কোনো শৃঙ্খলা নেই এটারও প্রমাণ দিলো বেফাক। আর ছাত্রদের অলসতারও একটি সুযোগ তৈরি করে দিলো বেফাক। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার সাথে মাদরাসার শিক্ষার তুলনা কোনোদিকেই হয়না। সাধারণ শিক্ষায় পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা সরকার বাতিল করেছে। কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এ দুটি সনদের তেমন প্রয়োজন হয় না। বরং সনদের দরকার হয় এসএসসি থেকে। আর এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেছে। এর ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে। আর এইচএসসি পরীক্ষা হবে না মর্মে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ালেও সরকার বলছে, ‘গুজবে কান দিবেন না, এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’ আর এদিকে আলেমদের কর্মক্ষেত্রে আলোচনার সময় মিশকাত পরীক্ষার ফলাফল দেখাতে হয়। তাই আমি মনে করি পরীক্ষা নেয়া দরকার।’
মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭২ সালে একবার এসএসসির পরীক্ষা সহজ করা হয়েছিলো। এনিয়ে আওয়ামী সরকার পরবর্তীতে প্রচুর সমালোচিত হয়েছিলো। যারা সে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো তারা সমাজে হীনতার শিকার হয়েছিলেন। এর কারণে পরের বছর থেকে আবার পরীক্ষা কঠিন করা হয়।
সুতরাং কওমি মাদরাসার এবার যারা পরীক্ষার্থী ছিলেন তারাও পরবর্তীতে হীনতার শিকার হতে পারেন। হীনতার শিকার না হলেও সরকার যে কওমি মাদরাসার অবস্থা ও শিক্ষা কার্যক্রমকে দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করছে সে পর্যবেক্ষণে ভালো কোনো রেজাল্ট বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বেফাকুল মাদারিসিদ্দীনিয়া যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত।
এর আগে গত ২৭আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা যোবায়ের আহমাদ চৌধূরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) এর সর্বস্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাতিল ও শিক্ষার্থীদের ৫০% ফি ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বেফাকের আওতাধীন সব মাদরাসার ৪৩তম ফযীলত, সানাবিয়া, মুতাওয়াসসিতাহ, ইবতিদাইয়্যাহ মারহালার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এদিকে হিফজুল কুরআন ও ইলমুল কিরাআত মারহালা ব্যতীত অন্য মারহালার শিক্ষার্থীদের ফির ৫০% ফেরত দেয়া হবে। তারা জানান, মিশকাত জামাতের সনদ দিয়ে আগামী বছরের তাকমিল জামাতের পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে।
এ বিষয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন, ‘মিশকাতের পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে আগামী বছর হাইয়াতুল উলইয়ার তাকমিল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। সনদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘মিশকাতের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে সনদ প্রদান করা হবে। প্রত্যেক মাদরাসার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার নম্বর দিয়ে ছাত্রদের সনদ তৈরির সুযোগ রয়েছে।’
এমডব্লিউ/