শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

মুসলিম জাহানে হিজরি সালের প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইয়াছিন নিজামী ইয়ামিন।।

হিজরি ১৪৪১ সন বিদায় নিয়েছে ক'দিন হল। ইতোমধ্যে ১৪৪২ সনের কয়েকটি দিন আমরা অতিবাহিতও করে ফেলেছি। কিন্তু, আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই জানে না কবে থেকে শুরু হল আবার কবে তা শেষ হবে! অথচ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সাল তথা আরবি তারিখ ও চান্দ্রমাসের সাথে সম্পর্কিত। যার ফলে মুসলমানদের হিজরি সনের তারিখ গণনা অপরিহার্য হয়ে উঠে। না হয় ইসলামের বহু ইবাদত ফযিলত ও নেয়ামতের বিশেষদিনগুলো থেকে বঞ্চিত হতে হবে নিশ্চিতভাবেই।

তাছাড়া প্রতিটি জাতির স্বকীয়তা ও আত্ম-পরিচয়ের স্ফুরণ ঘটে, সে জাতির বিকশিত সংস্কৃতি ও তাহজিব তামাদ্দুনের মাধ্যমে। তাই একজন মুসলমান হিসেবে এর গণনা ও মূল্যায়ন একান্তই আবশ্যক।

মৌলিকভাবে হিজরি সন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা নগরী থেকে ইয়াসরিব তথা মদিনায় হিজরতের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি ও তখনকার সময়ে প্রথমসারির মুসলমানগন যখন মক্কার কিছু নিষ্ঠুর নির্দয় অমানুষের অমানবিক অত্যাচার ও নির্মম নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন, তখন পরম করুনাময় আল্লাহর প্রত্যাদেশে আলোর শহর মদিনাতুল মুনাওয়ারায় হিজরত করলেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা স্বীয় ঘরবাড়ি-বাস্তুভিটা ও চিরচেনা পরিবেশ ও প্রতিবেশ, সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে, হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিআল্লাহু আনহুকে সাথে নিয়ে এক রাতের আঁধারে হিজরত করলেন। এই মুবারকময় হিজরতের ঘটনা আমাদের সকলেই কম-বেশি জানা।

প্রাচীন আরবে সুনির্দিষ্ট কোন সন বা সালের প্রথা প্রচলিত ছিলনা। তাই বিভিন্ন বছরগুলোর নামকরণ করা হতো বিশেষ কোনো ঘটনা বা কর্মকে কেন্দ্র করে। যেমন: _অনুমতির বছর, বিদায়ের বছর, ভূমিকম্পের বছর প্রভৃতি। যখন আমাদের পেয়ারে হাবিব হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে মানুষকে ডাকতে শুরু করেন, তখন আরবরা ঐ বছরটিকে হস্তিবছর থেকে গণনা শুরু করেন। কিন্তু তারও কোন শুরু বা শৃঙ্খলিত নিয়ম ছিল না। তাই ইসলামি বিধি-বিধান প্রতিপালন এবং পরিকল্পিত একটি সন গণনার প্রয়োজনেই মূলত হিজরি সনের উদ্ভব ঘটে।

তাছাড়া একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, আচার-অনুষ্ঠান, আমল-আখলাক, জ্ঞান-বিজ্ঞান-বিশ্বাস, খাদ্যাভাস, নীতি-নৈতিকতা, সৌন্দর্যানুভূতি-রুচিবোধ, শিল্প-স্থাপত্য, মনন-অভিব্যক্তি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, ধর্ম-কর্ম প্রভৃতি আরো অনেক কিছুর সমন্বয়ে সেই জাতির সাংস্কৃতিক স্বরূপের উন্মেষ ঘটে। সেই সংস্কৃতি-ই সে জাতির পরিচয়কে উন্নত করে এবং সেটিই একটি জাতির আত্মপরিচয়ের ধারক-বাহক এবং স্বকীয়তার পূর্ণ রূপও ধারণ করে।

প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা শিবলি নোমানী রাহিমাহুল্লাহ হিজরি সনের প্রচলন সম্পর্কে তার রচিত সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ "আল-ফারুকে" বিধৃত হয়েছেঃ —হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালে যখন বহু দূর-দূরান্ত পর্যন্ত নতুন নতুন রাষ্ট্র ও ভূখণ্ড ইসলামি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে তখন রাষ্ট্রীয় জরুরি কাগজপত্র-দলিলাদি ইত্যাদিতে তারিখ উল্লেখ থাকলেও সন উল্লেখ থাকত না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে একবার খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়। সেখানে শাবানের ১৬ তারিখ উল্লেখ থাকলেও সন ছিল অনুল্লেখিত।

তখন তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফার কাছে ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাই তিনি তার সভাসদবর্গকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন;_পরবর্তী সময়ে কীভাবে বোঝা যাবে যে, এটি কোন বছরের পত্র। তিনি তাদের থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে, সাহাবায়ে কেরাম ও শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণী মুসলমানদের নিয়ে একটি বৈঠক করলেন। আলোচনাকালে অনেকের অনেক মত থাকলেও খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উত্থাপিত প্রস্তাবেই সকলেই একমত হন যে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের বছর থেকেই সাল গণনা করা হবে।

এই হিজরি সনকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে একজন ইতিহাসবিদ জোসেফ হ্যাল বলেছেনঃ —It is a turning point in the life and work of the Prophet the great turning point in the history of Islam. –এটা হচ্ছে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে ও কর্মে এক মহামোড় পরিবর্তনকারী ইসলামের ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের একান্ত অনুসারী। মুসলিম বলার সাথে সাথে বিশ্বের প্রায় তিন'শ কোটি মুসলমানের সাথে সম্পর্ক ও বন্ধন উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। বিশ্বব্যাপী ঐক্য এবং সংহতির পথপরিক্রম জাগ্রত হয়। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বর্ষ গণনা ও মূল পঞ্জিকা একটি-ই এবং তা এই হিজরি সন।

বিশেষ ঘটনা বা স্মৃতিকে স্মরণ রাখার মানসিকতা থেকে তারিখ নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে দিন মাস বছর গণনার তাগিদ মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই। আর এই গণনার পথ পরিক্রমায় মানুষ চাঁদের গতি হিসাব করেছে, যার থেকে জন্ম হয়েছে চন্দ্র মাসের। আবার সূর্যের গতিপথ ধরে সৌরসনের জন্ম হয়েছে।

এ সম্পর্কে বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ, মহান রাব্বুল আলামিনের পবিত্র কালাম, কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে: —তিনি সূর্যকে তেজস্কর ও জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার মনজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আর এটি আল্লাহ তা'য়ালা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এই সমস্ত নিদর্শন, বিশদভাবে বিবৃত করেন। ( সূরা ইউনুস)

লেখক: শিক্ষার্থী, ১১৫৮/এ, ইস্পাহান গার্ডেন, চৌধুরীপাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ