শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি

মুহাররম মাসের গুরুত্ব, ফজিলত ও করণীয় আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল কাদির আল মাহদি
বার্সেলোনা, স্পেন থেকে>

মুহাররাম হচ্ছে সম্মানিত চার মাসের অন্যতম। আল্লাহ তা’আলা এ মাসকে সম্মানিত করছেন। এ মাসের প্রথম দশকে সিয়াম আদায় করা হচ্ছে রামাদ্বানের সিয়ামের পর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যাপারে রাসুল (সা) বলেন- «أفضل الصّيام بعد رمضان شهرُ الله المحرم» (رواه مسلم) রামাদ্বানের পর আল্লাহ তা’আলার মাস মুহাররামের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ। (মুসলিম)

হাদিসে বিভিন্নভাবে স্পস্ট বর্ণনা থাকার পরও আমরা অনেকেই নফল সিয়াম আদায় করতে অলসতা করি। অথচ বহু হাদিসে নফল সিয়াম সম্পর্কিত ফজিলতের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। এসব সিয়াম পালনে রয়েছে অনেক সাওয়াব, গুনাহ মাফের সুযোগ, দুনিয়া ও আখেরাতের ফায়দা অর্জনের মাধ্যম।

মুহাররাম মাসের সিয়ামের প্রতি আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। বিশেষত দশই মুহাররামের সিয়াম আদায় করতে নিজেদের ভিতর উৎসাহ থাকতে হবে- যেদিনকে আশুরা নামে পরিচয় করা হয়। এদিনে নিজেরা সিয়াম আদায় করার সাথে পরিবার-পরিজনের ছোট, বড়, পুরুষ মহিলা সবাইকে নিয়ে সিয়াম আদায়ের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে।

কেননা একটি মাত্র সিয়াম বিগত এক বছরের গুনাহ মাফের কারন হয়। যে ব্যাপারে রাসুল (সা) বর্ণনা করেন- صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله» (رواه مسلم) আমি আশাবাদী যে, আশুরার সিয়ামের কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (মুসলিম)

এভাবে ইবনে আব্বাস (রা) কে আশুরার সিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন-
عن ابن عباس رضي اللَّه عنهما وسئل عن صيام يوم عاشوراء؟ فقال: " ما علمت أن رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم صام يوماً يطلب فضله على الأيام إلا هذا اليوم، ولا شهراً إلا هذا الشهر - يعني رمضان -"
আমি রসুল (সা) কে রামাদ্বান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।

যেবা যারা আশুরার সিয়াম রাখবেন: হজরত রুবাইয়্যি (রা) বলেন- وعن الرُّبيع بنت معوِّذ رضي اللَّه عنها قالت: "أرسل رسول اللَّه صلى الله عليه وسلم غداة عاشوراء إلى قرى الأنصار التي حول المدينة : من كان أصبح صائماً فليتم صومه، ومن كان مفطراً فليتم بقية يومه، فكنّا بعد ذلك نصومه، ونصوِّمه صبياننا الصغار، ونذهب إلى المسجد، فنجعل لهم اللعبة من العهن، فإذا بكى أحدهم أعطيناها إياه، حتى يكون الإفطار"

আশুরার দিন সকালে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ঘোষককে আনসারিদের পাড়ায় পাড়ায় এ মর্মে ঘোষণা করার জন্য প্রেরণ করছিলেন, যারা কিছু খেয়ে ফেলেছে তারা যেন দিনের অবশিষ্ট অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকে। আর যারা সিয়াম পালন করছে তারা যেন সেটা পূর্ণ করে। বর্ণনাকারী বলেন, সে কারণে আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদেরকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে রোজা রাখাতাম। অর্থাৎ আশুরার সিয়াম সবাই রাখার চেষ্টা করবেন।

যেভাবে সিয়াম আদায় করা মুস্তাহব:
যদি মুহাররাম মাস শুরু হওয়ার ব্যাপারটা দৃঢ় হয়। তাহলে ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করার জন্য মুহাররামের দশম দিনের সাথে নবম দিনও সিয়াম আদায় করা মুস্তাহাব। শুধু দশম দিনই যেন সিয়াম পালন না করে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত- روى عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قال: حين صام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم عاشوراء وأمر بصيامه قالوا: يا رسول الله، إنه يوم تعظمه اليهود والنصارى، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «فإذا كان العام المقبل إن شاء الله صمنا اليوم التاسع»، قال: فلم يأتِ العام المقبل حتى توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم. (رواه مسلم).
রাসুল (সা.) যখন আশুরার দিনে সিয়াম আদায় করেন এবং অন্যদেরও সিয়াম আদায়ের নির্দেশ দেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইহুদি-নাসারারা তো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। (আমরা যদি এই দিনে সিয়াম আদায় করি, তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে) আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন সিয়াম পালন করবো। (মুসলিম)

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা) বলেন- عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : (صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ).
তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো।
যদি মুহাররাম মাস সন্দেহমূলক শুরু হয়। তাহলে মুহাররামের দশম সিয়ামের আগের দিন-নবম ও পরের দিন-এগার তারিখ সহ তিনটি সিয়াম আদায় করা মুস্তাহাব। যাতে করে আশুরার সিয়াম নিশ্চিত ভাবে আদায় হয়ে যায় এবং এক বছরের গুনাহ মাফের সওয়াব অর্জন করা যায়। এই অভিমত ইবনে আব্বাস সহ অন্যান্য সাহাবায় কেরামদের এবং ইবনে সিরিন,শাফিই ও ইমাম হাম্বল সাহ যুগ শ্রেষ্ঠ অন্যান্য ইমামদের।

মুহাররাম ও আশুরার গুরুত্ব যে বিশেষ চারটি জিনিসের দ্বারা প্রমান করে:
এক. হাদিসে রাসুল (সা) এই মাসকে আল্লাহ তা’আলার (শাহরুল্লাহিল মুহাররাম) মাস বলছেন। আল্লাহ তা’আলার দিকে এ মাসের সংযুক্তি প্রমান করে এ মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব।

দুই. রাসুল (সা) স্বয়ং রামাদ্বানের সিয়ামের পর সব চয়ে গুরুত্ব দিয়ে (শাহরুল্লাহিল মুহাররাম) আল্লাহ তা’আলার মাস মুহাররামের সিয়াম আদায় করতেন।

তিন. রামাদ্বান মাসের সিয়াম ফরজ হওয়ার পূর্বে উম্মতে মুহাম্মদী (সা) এর উপর আশুরার সিয়াম ফরজ ছিল। যখন রামাদ্বান মাসের সিয়াম ফরজ হল তখন আশুরার সিয়াম সুন্নত হিসেবে পালনের বিধান রাখা হল।

চার. সাওয়াবের দিক দিয়ে আশুরা এমন এক দিন যেদিনের একটি মাত্র সিয়াম বিগত এক বছরের গুনাহ মাফের কারন হয়ে যায়।

আমাদের জানা থাকা দরকার। আশুরার সিয়ামের গুরুত্ব বা ফজিলতের সাথে হুসাইন (রা) এর শাহাদতের কোন আলাদা সম্পর্ক নেই। যে ঘটনা হিজরতের ৬১ বছর পর ঘটেছিল। বরং আশুরার সিয়াম রাসুল (সা) এর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে সেই জাহেলি যুগ থেকে প্রসিদ্ধ ছিল। আর আমরা এই সিয়াম মুসা (আ) নাজাতের করণে আল্লাহ তা’আলার শুকুর আদায়ের জন্য করে থাকি। এদিন আল্লাহ তা’আলা মুসা (আ) ও তার কাওমকে মুক্ত করছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়েছিলেন।

যেমন হাদিসে এসেছে-
‎عن ابن عباس رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء فقال لهم رسول الله صلى الله عليه وسلم ما هذا اليوم الذي تصومونه فقالوا هذا يوم عظيم أنجى الله فيه موسى وقومه وغرق فرعون وقومه فصامه موسى شكرا فنحن نصومه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم فنحن أحق وأولى بموسى منكم فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأمر بصيامه

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা) মদীনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে সওম পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন “এটা কোন দিন যে তোমরা সওম পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ তায়ালা মুসা (আ) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরআউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুসা (আ) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে সওম পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও সওম পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসুল (সা) বললেন, “তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ) এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী।”অতঃপর রসুল (সা) সওম পালন করলেন ও অন্যদেরকে সওম পালনের নির্দেশ দিলেন। (সহীহ মুসলিম)

এখান থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হলো। ইসলামি শরিয়তের মূলমন্ত্র হচ্ছে মুসলিমানদের কথা,কাজ, অবস্থা কাফেরদের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া। যেভাবে রাসুল (সা) আশুরার সিয়ামের ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করছেন সেভাবে মুসলমানদের অবস্থান হওয়া। মুসলমানদের কথা, কাজ, গুণাগুণ, কালচার, এবাদত ও উত্সব সব কিছুতে নিজস্ব বৈশিষ্ট থাকবে। কেননা রাসুল (সা) বলছেন- من تشبه بقوم فهو منهم যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে ব্যক্তি ঐ জাতির অন্তর্ভূক্ত। (আহ্‌মাদ, আবু দাঊদ)

দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার বার্সেলোনা থেকে আব্দুল কাদির আল মাহদি প্রদত্ত জুম্মার খুতবা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ