শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

হুজুর কোটটি খুলে শেখ মুজিবের গায়ে পরিয়ে দিলেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ।।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর কেটেছে পারিবারিক ধর্মীয় আবহে। পিতা শেখ লুৎফুর রহমান ছিলেন সীমাহিন আলেমভক্ত ও ধার্মিক ব্যক্তিত্ব। এছাড়া যৌবন বয়েসে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই আলেমের হাত ধরে। তার সরাসরি রাজনৈকিক দুইগুরুই দেওবন্দ পাশ মাওলানা। ফলে আলেমদের সাথে বঙ্গবন্ধুর অন্য রকম এক সুগভীর সম্পর্ক ছিল। ইতিহাস তাই প্রমাণ করে।

বঙ্গবন্ধুর আত্মিয় সূত্রে দাদা ছিলেন সদর সাহেব হুজুর মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহ আলাইহি। তিনি যখন লালবাগ মাদরাসার মুহতামিম, তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রাজনীতিতে তরুন নেতা। তিনি ছিলেন সদর সাহেব হুজুরের একান্ত ভক্ত।

সপ্তাহে কয়েকবার দাদাকে দেখতে লালবাগে যেতেন। ফলে তৎকালিন ফরিদপুরীর সমসাময়িক অনেক আলেমকে তিনি দাদাজি বলে সম্বোধন করতেন। তাদের সাথে তাঁর সুগভীর এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। সে ইতিহাসটি কেউ লিখেন না। মাওলানাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর এই প্রেমময় ভালবাসা আড়ালেই রয়ে গেছে। কেবল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাসের নানান বাঁকে।

মাওলানা আতাউর রহমান খান (কিশোরগঞ্জের সাবেক এমপি) তার এক স্মৃতিচারণে লিখেছেন- ‘গাড়ি ইত্তেফাক অফিসের সামনে দাঁড় করিয়ে ড্রাইভার বাদে আমরা সবাই শায়েখদ্বয়ের (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী এবং মাওলানা আতাহার আলী) পেছনে পেছনে গেলাম। তারা খোঁজছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে। মুজিবুর রহমান সাহেব তখন বড় কোনো নেতা ছিলেন না।

তবে ছাত্র নেতা হিসেবে এবং জাতীয় নেতাদের কাছে যাতায়াত করতেন বলে অনেক কিছুই করতে পারতেন। আমরা অফিসের অনেক পিছনের এক রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, কয়েকজন লোক গল্পগুজবে মত্ত। আমরা গিয়ে দাঁড়াতেই শেখ মুজিব সাহেব চেয়ার ছেড়ে হন্তদন্ত অবস্থায় এগিয়ে এলেন। আর বিস্মিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন- আরে, দাদা এখানে! হুযুর আপনি? দাদা এখানে কোনো খবর না দিয়েই সরাসরি উপস্থিত। কোনো দরকার হলে আমাকে একটু খবর দিলেই তো আমি উপস্থিত হতাম।

আতাহার আলী সাহেব বললেন, আরে না না, খবর দেয়ার হলে তোমাকে খবরই দিতাম। এখানেই প্রয়োজন। এরপর শেখ সাহেব তার অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদেরপরিচয় করিয়ে দিয়ে, সদর সাহেব এবং আতাহার আলী সাহেবকে বসালেন। উল্লেখ্য, শেখ মুজিবুর রহমান আতাহার আলী সাহেবকে দাদা এবং সদর সাহেবকে দাদা হুজুর বলে সম্বোধন করতেন’।

(হযরত ফরিদপুরী (র.)-এর সান্নিধ্যে কিছুণ, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (র.) স্মারক গ্রন্থ, প্রকাশ ১৯৯৯ ইংরেজি)।

আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী সব সময় পাঞ্জাবির উপরে কালো কোট পড়তেন। একদিন লালবাগে হুজুরের কামড়ায় বসে শেখ মুজিবুর রহমান বসা। মুজিব বললেন, দাদা আপনার কোট আমার খুব ভাল লাগে। সাথে সাথে সদর সাহেব হুজুর নিজের পড়নের কালো কোটটি গা থেকে খুলে নাতি মুজিবকে পড়িয়ে দিলেন।

বললেন, ‘নাতি গায়ে দাওতো দেখি, তোমাকে কেমন লাগে। মুজিব পড়তেই ফরিদপুরী বললেন, দারুন তো লাগছে নেতাকে। এখন মনে হচ্ছে তোমাকে সত্যকারের জাতীয় নেতা। ঠিক আছে তোমাকে দিয়ে দিলাম। তুমি সব সময় এটা পড়ে মিটিং মিছিলে যাবে।’ সেই যে দাদা হুজরের কালো কোট শেখ মুজিবুর রহমান গায়ে পড়েছিলেন। বরকতের জন্যই কিনা কে জানে, আমৃত্যু এই কালো কোট ছিল তার নিত্য সঙ্গি। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় পোশাক।

(কে এই মাওলানা ৬ষ্ট পর্ব, তামিম রায়হান, আমারব্লগ ১১ নভেম্বর ২০১২ ইংরেজি)

আমরা ক'জনে জানি এই প্রেমময় কাহিনী। বিখ্যাত "মুজিবকোট" যে মূলত মাওলানা কোট ছিল। বঙ্গবন্ধুর শরীরে সাড়া জীবন জড়িয়ে রয়েছিল এদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় এক বুর্যুগ আলেমের ভালবাসা। শোকাবহ এই আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে মনে পড়ছে। মনে করিয়ে দেয় তার আলেমপ্রীতির ইতিহাস। তারার মতো দ্যদিপ্যমান আজ আমাদের কাছে সদর সাহেব হুজুর। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় দাদা হুজুর। তাদের স্মৃতি আজ গোটা জাতির কাছেচির অম্লান।

লেখক: চিকিৎক, ঔপন্যিসিক ও বহুগ্রন্থপ্রণেতা

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ