শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আপনি যার বয়ান শুনছেন, সে যে পথভ্রষ্ট্র না, কীভাবে বুঝবেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুল: ড্যানিয়েল হাকিকতজু
অনুবাদ: শাফনুন কবীর

যখন আপনি আবিস্কার করেন যে আপনার প্রিয় দ্বীনের প্রচারক বিপথগামী তখন আপনি কি করবেন? বিষাদের ৫-টি ধাপ।

আপনি যেই মানুষটির কথা বছরের পর বছর শুনেছেন সেই মানুষটি বদলে গিয়েছেন বা এখন তিনি ক্রমবর্ধমানভাবে বিপথগামী মত প্রকাশ করছেন এটা জানতে পারা খুবই কস্টদায়ক।

যদি আপনি এই পথভ্রস্টতা উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে নিজেকে (আল্লাহ-র চয়নকৃত) সৌভাগ্যবানদের একজন মনে করুন। অধিকাংশ ভক্তরা বুঝতেও পারেন না যে সমস্যাটি কি বা কোথায় কারণ তাদের ইসলাম শেখার একমাত্র উৎস হচ্ছেন সেই প্রচারক নিজেই। তো পথভ্রস্টতা কি বা কি না তা জানার জন্যে এই ভক্তদের একটি নিরপেক্ষ মাপকাঠি পর্যন্ত নেই। তাদের ইসলামের বুঝ ও জ্ঞান সম্পূর্ণভাবে সেই তারকা প্রচারক কি শিখিয়ে যাচ্ছেন সেটার উপরে নির্ভরশীল। যদি তিনি বদলে যান তাহলে তারাও বদলে যান।

আমি নিজেও এই মানসিক কস্টের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। যেসব মানুষদের আমি দ্বীনের হক্কানী আলেম মনে করতাম ও সেই হিসেবে ভালবাসতাম ও সম্মান করতাম, তাদের আমি লজ্জাহীন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আবিস্কার করলাম। এটি শুধুমাত্র একটি বা দুইটি সহসা কৃত মন্তব্য ছিলো না যা আমাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে বরং তাদের আচরণের, সংশ্লিষ্টতার ও ব্যক্তিগত কথা বিনিময়ের মধ্যে একটি সুপ্রসারিত নকশা বিদ্যমান ছিলো। যখন আমি এই উল্লেখিত আলেমদের সাথে এসব সমস্যার ব্যাপারে কথা বলেছিলাম, তখন তারা আমার উদ্বেগ লাঘব না করে বরং সেটাকে আরো প্রবল করেছিলেন - জোর করে নিজেদের মত আরো প্রবলভাবে ধরে রেখে, নিজেদের আচরণকে গ্রাহ্য করে, আমার ব্যাপারে কুরুচিপূর্ণ দোষারোপ করে, আমাকে বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে অভিযুক্ত করে, ইত্যাদি।

যা আমি দেখেছি তা হচ্ছে যে যখন তারকা অতি-"সহানুভতিশীল" ইমামদের ভক্তরা তাদের সেই বিপথগামীতা ও পথভ্রস্টতার ব্যাপারে জানতে পারে তখন তারা বিষাদের পাঁচটি ধাপের মধ্য দিয়ে যায়।

প্রথম ধাপ: অস্বীকার করা

সর্বপ্রথম ভাবনা হচ্ছে, "এটা কিছুই না।" অন্ধ ভক্তরা নিজেদের পছন্দের প্রচারকের ব্যাপারে খারাপ কোনোকিছু শুনতে চান না। তো তারা সকল প্রমান অগ্রাহ্য করেন ও নিজেদের এ বিষয়ে উদ্বেগজনক যেকোনো কিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখেন যাতে তারা নিজেদের ভালোবাসার প্রচারকের কলুষমুক্ত ধারণা ঠিক রাখতে পারে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো যে অনেকেই এই ধাপ পেরোতে পারেন না, তাদের সামনে যতই প্রমান থাকুক না কেন।

দ্বিতীয় ধাপ: রাগ হওয়া

এই পর্যায়ে, বিপথগামীতা/পথভ্রষ্টতা তুলে ধরা যে কারো প্রতি সেই ভক্ত প্রচন্ডভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। এসব ব্যক্তিদের এই অবস্থায় দেখা খুবই হৃদয়বিদারক কারণ আপনি তাদের কথাবার্তায় শুনতে ও বুঝতে পারেন যে তারা কতটা মানসিকভাবে নিপীড়িত বোধ করছে। তারা সেই তারকাকে নিজেদের আত্মীয়ের মতো মনে করতো। মাঝে মাঝে তারা সেই প্রচারককে নিজেদের আত্মীয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে কিন্তু এর পাশাপাশি তারা বিভ্রান্তিতে ভোগে ও ধরতে পারে যে কিছু একটা সমস্যা আছে। এই অসঙ্গতি তাদের মানসিক পীড়া দেয় ও তারা অন্যদের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে ও সেই প্রচারককে যেভাবে সম্ভব কথাতে রক্ষা করে সেই হতাশা প্রকাশ করে।

তৃতীয় ধাপ: (সাধারণত অজুহাত ব্যাবহার করে) নিজের সাথে কষাকষি

একটি সময়ে এসে ভক্তরা আর অস্বীকার করতে পারে না যে প্রচারকের ব্যাপারে কিছু একটি সমস্যা আছে। এই সময়ের মধ্যে একাধিক স্বাধীন উৎস একই সমস্যা তুলে ধরেছে এবং সেই প্রচারক নিজে সেই সমস্যাগুলোকে, নিরসন করা তো দূরে থাক, এমনকি গ্রহনযোগ্যভাবে উদ্দেশ করতে কিছুই করেনি। মাঝে মাঝে সে নিজের মত আরো প্রবলভাবে আকড়ে ধরে থাকবে। তখন ভক্তরা নিজেদের সাথে কষাকষি করতে থাকবে: "আচ্ছা, নিশ্চয় এটার কোনো ব্যাখ্যা আছে। বা এটা অবশ্যই প্রেক্ষাপটের বাহিরে টেনে নেয়া হয়েছে। বা হয়তো এটা একটি নিছক ভুল।" ও ইত্যাদি। তারা নিজেদের বলে, আচ্ছা হয়তোবা সে আসলেই ভুল করেছে কিন্তু তাতে কি? কেউই ভুল-ক্রুটির ঊর্ধ্বে না! তারা নিজেদের সাথে কষাকষি করে, "আমি শুধু ভালো অংশটুকু নিবো ও খারাপটি ছেড়ে দিবো। কোনো সমস্যা নেই।

চতুর্থ ধাপ: বিষাদগ্রস্ত হওয়া

এই ধাপটি কঠিন মেঝেতে আছড়ে পড়ার মতো কষ্টকর। আগের ধাপগুলোর সেই সামলে চলা এই অবধারিত অনুধাবনকে থামাতে পারেনি। এখন তারা সম্পূর্ণভাবে হতাশ ও বিষাদগ্রস্ত এবং এটা খুবই কুৎসিত একটি রূপ ধারণ করতে পারে। কিছু মানুষের জন্যে এটা তাদের দ্বীনের বিশ্বাসকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তারা এই প্রচারকের সাথে ইসলামকে এতটা বেশি সংশ্লিষ্ট করে ফেলেছে যে তারা এই বিশ্বাসঘাতকতার অনুভূতিকে ইসলামের উপরে নিয়ে আসে অথবা পুরোপুরিভাবে উলামাদের এবং ইসলামবিদদের উপরে। কিছু ভক্ত নিজেদের বিষাদের মধ্যে নাটকীয় কিছু ঘোষণা দেয়: "আমি আর কখনোই আরেকজন আলেমের কথা শুনবো না!" এই ধাপ কিছু সপ্তাহ বা কিছু মাস থাকতে পারে।

পঞ্চম ধাপ: স্বীকার করা

ইন শা আল্লাহ, এখন সাবেক-ভক্তরা একটি মানসিকভাবে পরিণত পর্যায়ে পৌঁছায়। তারা এখন বুঝে যে এই সময়ের সকল প্রচারক বিশ্বাসযোগ্য না, নূন্যতম কথাতে বললে, এবং সেই প্রচারকগণের কারো কারো বাহ্যিক পোশাকআশাক শুদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ইসলামের হলেও বাস্তবে তারা ভণ্ড একটি শেয়াল মাত্র। এখন ভক্তরা অন্ধভক্তি পিছে ফেলে এসেছে ও অতি-"সহানুভতিশীল" ইমামদের শেখানো ইসলামের তাৎক্ষণিক পরিতৃপ্তি দেয়া নির্বোধ সংস্করণের সাথে শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিহ্যবাহী আলেমদের শেখানো ইসলামের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখেছে। তাদের ক্ষতচিহ্ন থাকতে পারে কিন্তু সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে।

সাহাবী সালমান আল-ফারসী রা. এর কাছ থেকে একটি চমৎকার উদাহরণ আসে। তিনি পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পরে তার যৌবনের শুরুর অংশ কাটিয়েছেন অগ্নিউপাসনার ধর্ম থেকে একজন খ্রিস্টান হয়ে। তিনি একজন খ্রিস্টান পন্ডিতকে খুজে বের করতেন তার সাথে অধ্যয়ন করার জন্যে তারপরে তার কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব শিখতেন সেই পন্ডিত ইন্তেকাল করা পর্যন্ত এবং তারপরে তিনি একইভাবে আরেকজন পন্ডিতের কাছে অধ্যয়ন করতেন।

বিরাট সমস্যাও হয়েছিলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেমন, তিনি আবিস্কার করেছিলেন যে তিনি যেই পন্ডিতের সাথে অধ্যয়ন করছিলেন সেই পন্ডিত পথভ্রস্ট ছিলেন ও মানুষদের কাছ থেকে একেবারে চুরি করছিলো। তিনি থেমে থাকেননি ও হাল ছেড়ে দেননি বা বলেননি, "আচ্ছা, আমরা শুধু মৃতদের অনুসরন করতে পারি!" তিনি এগিয়ে গিয়েছেন ও সত্যের অনুসন্ধান করেছেন। শেষমেশ এটা ওনাকে রসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে পৌঁছে দেয় ও উনি শ্রেষ্ঠ সাহাবাদের মধ্যে একজন হন, رضي الله عنهم।

সালমান রা. এর মতো হোন। যদি একজন প্রচারক আপনাকে তুচ্ছ করে দূরে ঠেলে দেন ও কষ্ট দেন তাহলে আরো বহু হক্কানী আলেম আছেন আমাদের সময়ে যারা সত্যের সাথে লেগে আছেন এবং যারা নির্লজ্জভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেন না। ওনাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন ও আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দিবেন, বি ইযনিল্লাহ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ