শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মেহেদী হাসান সাকিফ।।

ইসলাম মানব কল্যাণের ধর্ম। ইসলামি সমাজ দর্শনে যে শান্তিপূর্ণ সুখি সমাজ গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেশীর অধিকার সঠিকভাবে পালন করা তারই অংশবিশেষ।প্রতিবেশীর অধিকার আদায়ের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ জোর তাগিদ দিয়েছন।

আল্লাহ বলেন- আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর ও কোন কিছুকে তার শরিক করো না এবং পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী দূর-প্রতিবেশী সঙ্গী-সাথী মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে (সুরা নিসা,আয়াত-৩৬)

ইমাম যুহুরি প্রতিবেশীর সংজ্ঞায় বলেন-নিজ গৃহের সম্মুখ,পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিকের চল্লিশ বাড়ী পর্যন্ত সবাই প্রতিবেশী বলে বিবেচিত হয়।ইবনে উমার ও আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন। (সহিহ বুখারি ৬০১৪ ও মুসলিম ২৬২৪)

প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ ইমানের মৌলিক অংশ হিসেবেও অন্তভুক্ত। আবূ হুরাইরাহ রা. বলেন, নবি সা. বলেছেন, আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মুমিন নয়।

জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন ব্যক্তি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে না।” (সহিহুল বুখারি ৬০১৬)

প্রতিবেশী এক অন্যের সুখদুঃখ ভালোবাসায় অংশীদার। প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহর নিকট সর্ব উওম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উওম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্ব উওম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উওম। (তিরমিজি ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমি ২৪৩৭)

প্রতিবেশীরা আমাদের সুখদুঃখে বিপদ আপদে সবার আগে এগিয়ে আসে। প্রতিবেশীরা ক্ষুধার্ত হলে তাদের খাদ্যদান করব,অভাবগ্রস্ত হলে সাধ্যমত আর্থিক সাহায্য দান করব।সবসময় সুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করব।অসুস্থ হলে সেবাশুশ্রূষা করব।

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইহুদি গোলাম নবী করিম সা.-এর খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন মহানবি সা. তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন নবী সা. এই বলে বের হলেন, আল্লাহর শোকরিয়া, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ১২৫৬)

কোন মুসলিম প্রতিবেশী অনিষ্ট করার তো দূরের কথা তো দূরের কথা প্রতিবেশীর অনিষ্ট করার কথা চিন্তাও করতে পারে না।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, এক নারীর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ, সে বেশি বেশি (নফল) নামায পড়ে, রোযা রাখে, দুই হাতে দান করে। কিন্তু জবানের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় (তার অবস্থা কি হবে?)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে জাহান্নামে যাবে”।

আরেক নারী বেশি (নফল) নামাযও পড়ে না, খুব বেশি রোযাও রাখে না আবার তেমন দান সদকাও করে না; সামান্য দু-এক টুকরা পনির দান করে। তবে সে জবানের দ্বারা প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয় না (এই নারীর ব্যাপারে কি বলেন?)। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে জান্নাতি”। বুখারি, হাদিস: ১১৯)

প্রতিবেশীকে তরকারী দেয়ার জন্য বাড়তি তরকারি রান্নার নির্দেশনাও ইসলাম দিয়েছে।আবূ যার (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, “হে আবূ যার! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমান বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমত পৌছে দাও।” (মুসলিম ২৬২৫) একে অপরকে এমনকি প্রয়োজনীয় ছোটখাটো জিনিস দিয়ে সাহায্য করাও অপর প্রতিবেশীর কর্তব্য।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে।

অতঃপর আবূ হুরাইরাহ রা বললেন, কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ) কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)। (সহিহ বুখারি ২৪৬৩,৫৬২৭ ও মুসলিম ১৬০৯)

ইসলাম প্রতিবেশীর অধিকার প্রতিষ্টায় বদ্ধপরিকর। প্রতিবেশীর সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম অধিকার পাবে নিকটতম প্রতিবেশী। উপরন্তু প্রতিবেশীর অগোচরে কেউ যদি সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়, তাহলে ইসলামি আইন বলে, প্রতিবেশী ব্যক্তি এই সম্পদ আদায়ে আদালতে আইন পেশ করে সম্পত্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং আদালত তার পক্ষে রায় দেবে। (আশরাফুল হেদায়া)

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ