মুফতি মুহাম্মদ আরাফাত
মুহাদ্দিস জামিয়া ইসলামিয়া জহীরুদ্দিন মাদরাসা ঢাকা>
ই'তেকাফ মানে অবস্থান করা, আবদ্ধ রাখা। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ফজিলত অর্জনের আশায় নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ রাখা ই'তেকাফ।
ই'তেকাফ শরিয়ত নির্দেশিত একটি আমল। যা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা সুপ্রমাণিত। আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ দিয়েছিলাম যেন তারা আমার ঘরকে (কাবা) তাওয়াফকারীদের জন্য, ই'তেকাফকারীদের জন্য ও রুকু-সিজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখে" (সূরা বাকারা আয়াত : ১২৫)।
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, "মসজিদে যখন তোমরা ই'তেকাফ অবস্থায় থাকবে তখন স্ত্রী-সম্ভোগ থেকে বিরত থেকো। এগুলো হলো আল্লাহর সীমারেখা" (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
আয়শা সিদ্দিকা রা. বলেন, রাসূল সা. রমজানের শেষ দশকে ই'তেকাফ করেছেন, এভাবে তিনি ইন্তেকাল পর্যন্ত করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ ই'তেকাফ করেছেন। (বুখারি-২০২৬) অপর হাদিসে বর্ণিত রাসূল সা. প্রতি রমজানে দশ দিন এ'তেকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর বিশ দিন ই'তেকাফে কাটান। (তিরমিযী-৮০৮)
ই'তেকাফের ফজিলত
ই'তেকাফ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ উপায়।গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ। মালিকের সাথে গোলামের নিবিড় সম্পর্ক গড়ার সেতু বন্ধন। মু'তাকিফ যেন গোলামের ভুমিকায় মালিকের দুয়ারের ভিখার। যেন সংসার ত্যাগী দুনিয়া বিমুখ একনিষ্ঠ গোলামের ধর্ণা রাজাদীরাজের দরবারে। যেন আল্লাহর কাছে বান্দার দুনিয়া-আখেরাতের কল্যানের অনশন।
ই'তেকাফে লাইলকতুল কদর ভাগ্যে জুটবার অপার সম্ভাবনা। যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। রাসুল সা. এরশাদ করেন, "তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর"। (বোখারী) অন্য হাদিসে বর্ণিত, "যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ই'তেকাফ করবে আল্লাহ তায়ালা তার এবং জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। অর্থাৎ আসমান ও জমিনের দূরত্ব থেকে অধিক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। (শোয়াবুল ঈমান,হাদিস: ৩৯৬৫)
ই'তেকাফ ৩ প্রকার:
সুন্নাত ই'তিকাফ: রমযানের শেষ দশকের ই'তেকাফ। এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়াহ। অর্থাৎ মহল্লার জামে মসজিদে কয়েকজন ই'তেকাফ করলেই তা সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। না হয় মহল্লার সকলেই গুনাহগার হবে। ২০ রমযান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে শাওয়ালের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করবে।
ওয়াজিব ই'তিকাফ: মান্নতের ই'তিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধান হলে আমি এতদিন ই'তিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি একদিন অবশ্যই ই'তিকাফ করব। যতদিন শর্ত করা হবে ততদিন ই'তিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ই'তিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ই'তিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করাও ওয়াজিব হয়ে যায়।
নফল ই'তিকাফ: সাধারণভাবে যে কোনো সময় ই'তিকাফ করাকে নফল ই'তেকাফ বলে। এর জন্য কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ই'তিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের পূর্বে ই'তিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো।
মহিলাদের ইতিকাফ : মহিলারা সাধারণত ঘরের যেখানে নামাজ পড়ে তা ই'তিকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে দশ দিন বা কম সময়ের জন্য ই'তিকাফের নিয়ত করে ইবাদত করবে। শরয়ী কোনো ওজর ছাড়া সেখান থেকে বের হবেনা। ই'তিকাফ অবস্থায় যদি মহিলাদের ঋতুস্রাব শুরু হয় তাহলে ইতিকাফ ভেঙ্গে হয়ে যাবে।
ই'তিকাফে যা করবো
ই'তিকাফে থেকে ১. বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা। ২. নফল নামাজ আদায় করা। ৩. কুরআন তেলাওয়াত করা। ৪. দ্বীনি ওয়াজ-নসিহত শোনা ৫. উমরী কাজা আদায় করা। ৬.ধর্মীয় গ্রন্থাবলী পাঠ করা।
ই'তিকাফে যা করবোনা
১.ই'তিকাফ থেকে শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে না যাওয়া। ২. দুনিয়াবি আলোচনায় মগ্ন না হওয়া। ৩. ক্রয় বিক্রয় না করা। ৪. ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ না করা। ৬. স্ত্রী সহবাস না করা। ৭. সাধারন গোসল না করা। এতে ই'তিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়।
-এটি