শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার 'উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব'   নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

মুসলিম জাহানের অনন্য ব্যক্তিত্ব সুফিসম্রাট ইমাম গাজালি (রহ.)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।

একাদশ শতকে মুসলিম সমাজে বিভিন্ন বাদ-মতবাদের এক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। সর্বত্র গ্রিক দর্শন ও মুতাজিলা সম্প্রদায় ঘাঁটি গেড়ে বসে। এই দুই দর্শনের প্রভাবে আপামর মুসলিম সমাজ বিভক্ত বিক্ষিপ্ত হয়ে দ্বীন ধর্মের কোমল বিশ্বাস থেকে সরে যেতে শুরু করে।

মুসলিম মিল্লাতের এই ক্রান্তিকালে হুজ্জাতুল ইসলাম উপাধি ধারণ করে মুসলিম দর্শন তথা বিশ্ব দর্শনের প্রবাদপুরুষ হিসেবে এ ধরায় আগমন করেন বিরল প্রতিভার অধিকারী, নানাবিধ গুণাবলীর অপূর্ব সমাহার আবু হামেদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ গাজালি (রহ.)। তিনি দেশ, জাতি ও ধর্ম সকল বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং মহান সংস্কারকের ভূমিকা পালন করেন।

খোরাসানের একটি জিলার নাম তুস। তুসের রয়েছে প্রসিদ্ধ দুটি শহর। একটি তেহরান। আর অপরটি তুকান। ইমাম গাজালি (রহ.) ৪৫০ হিজরিতে তাহেরান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। গাজল অর্থ সুতা। বাবা মুহাম্মদ ছিলেন তথাকার একজন বড় সুতা ব্যবসায়ী। নামকরণের এই সামঞ্জস্য তার বংশকে গাজালি আখ্যায় আখ্যায়িত করেছে। কারও কারও মতে তিনি ছোট বেলায় হরিণের মতো চোখবিশিষ্ট অপরূপ সুদর্শন ছিলেন, আর গাজল অর্থ হরিণ, তাই বাবা তাকে শৈশবে আদর করে গাজালি বলে ডাকতেন। উভয় বর্ণনানুসারে তাকে গাজ্জালিও বলা হয়। আবার গাজালিও বলা হয়।

মাতৃভূমিতেই তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি। তাই গ্রামেই তিনি ফিকহ শাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন প্রখ্যাত আলেম ইমাম রাদাখানি নিকট। ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও ইসলামি আইনে তিনি অতি অল্প বয়সেই গভীর জ্ঞান লাভ করেন। শাফেয়ি মাজহাবের প্রখ্যাত আলেম আল জুওয়াইনি ছিলেন তাঁর অন্যতম শিক্ষক।

প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি জুরজান গমন করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণে আত্মনিয়োগ করেন ইমাম আবু নছর ইসমাঈল (রহ.)-এর নিকট। এ ছাড়াও তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ আলেমগণ ছিলেন তাঁর শিক্ষক। তন্মধ্যে সে সময়ের শ্রেষ্ঠতম ধর্মতত্ত¡বিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনি, আল্লামা আবু মুহাম্মদ যোবায়নি, আল্লামা আবু হামেদ আসকারায়েনি প্রমুখ আলেম অন্যতম।

ছোট বয়সেই তিনি উস্তাদের তাকরির (পাঠদান) শুনে শুনে ইলমি বিরাট তালিকাত লিখে ফেলেছিলেন। সে সময় ইসলামি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ছিল বাগদাদ ও নিশাপুর। বাগদাদে ইলমের সুধা পান করাতেন আল্লামা আবু ইসহাক সিরাজী। নিশাপুরে জ্ঞানের আলো বিতরণ করতেন ইমামুল হারামাইন।

বরিত ইমাম গাজালি (রহ.) মাতৃভূমি ছেড়ে চলে গেলেন তৎকালীন জ্ঞানের শহর নিশাপুর। নিশাপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষালয় নিজামিয়া মাদরাসা। এই নিজামিয়াতেই শিক্ষাগুরু ছিলেন ইমামুল হারামাইন। ছাত্র ইমাম গাজালি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই উস্তাদের চারশো ছাত্রের মাঝে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি যে অপূর্ব মর্যাদায় ভূষিত হয়েছিলেন, সত্যি বলতে কি তাঁর উস্তাদ খোদ ইমামুল হারামাইনের ভাগ্যেও ততটা জুটেনি।

স্বীয় অসাধারণ প্রতিভা ও যোগ্যতা বলে উস্তাদ থেকে শুনা পাঠটি একবার শুনেই তা অন্যান্য সহপাঠীদের শুনিয়ে দিতে পারতেন অনায়াসে। ছাত্রজীবনেই তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা ও শিক্ষা-দীক্ষার খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আল্লামা ইবনে খাকান (রহ.) বর্ণনা করেছেন, ইমাম গাজালি স্বীয় প্রখ্যাত উস্তাদ ইমামুল হারামাইনের জীবদ্দশায়ই যথেষ্ট খ্যাতি লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। গৌরব ও মর্যাদায় এত উচ্চ মার্গে পৌঁছেছিলেন যে, স্বয়ং উস্তাদ ইমামুল হারামাইন পর্যন্ত শরয়ী সমাধানের জন্য তার দারস্ত হতেন। তবে সীমাহীন যোগ্যতার পরেও আপন উস্তাদ ইমামুল হারামাইনের সম্মান প্রদর্শনে কোন রকম ত্রæটি বা শিথিলতা প্রদর্শন করেননি।

ইমামুল হারামাইন ৪৪৮ হিজরিতে পরলোগ গমন করেন। প্রিয় উস্তাদের মৃত্যুর পর জ্ঞানস¤্রাট ইমাম গাজালি নিশাপুরের মায়া কাটিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। এ সময় সম্ভবত সমগ্র মুসলিম জাহানে ইমাম গাজালির সমকক্ষ অন্য কেউ ছিল না। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৮ বৎসর।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা সমাপ্তির পর তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের অধীনে মুসলিম বিশ্বে আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডর জন্য সুপরিচিত নিজামুল মুলক শাসিত ইস্পাহান প্রদেশের আদালতে যোগদান করেন।

বাদশাহ নিজামুল মুলকের দরবারে প্রায়ই বিভিন্ন ইলমি বিষয় নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতো। প্রত্যেকটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন। ইলমি বাহাস মোনাজারায় এরূপ নৈপুণ্য প্রদর্শন ও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন তার সুনাম সুখ্যাতির মাত্রাকে ব্যাপকতর করে দিলো। ছড়িয়ে পড়লো সুখ্যাতি দেশ ও বিদেশে।

যোগ্যতায় মুগ্ধ ও আকৃষ্ট হয়ে অবশেষে খোদ নিজামুল মুলক তাকে নিজামিয়া মহাবিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপক নিযুক্ত করে দিলেন। এ সময় ইমামের বয়স ছিলো মাত্র ৩৪ বৎসর। এত অল্প বয়সে নিজামিয়া বিদ্যালয়ের প্রধান হওয়া ছিলো গৌরবের বিষয়। কারণ, সে জামানার বড় বড় বিজ্ঞ ব্যক্তিগণও এ বিদ্যালয়ের প্রধান হওয়ার চরম আকাঙ্খকা ছিলো। এ ছিলো ৪৮৪ হিজরির জুমাদাল উলা মাসের কথা।

৪৪৮ হিজরিতে খলিফা মুকতাদির বিল্লাহ ইন্তেকাল করেন। খলিফা নির্বাচিত হন মুস্তাজহির বিল্লাহ। খলিফা ছিলেন আলেম উলাম ভক্ত। ইমাম গাজালির সাথে ছিলো তার বিশেষ সম্পর্ক। এই খলিফার আমলে বাতেনি সম্প্রদায় অত্যন্ত মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে খলিফা তাদের খÐনে একটি কিতাব রচনা করতে বললেন। ইমাম গাজালি একটি কিতাব লিখলেন। খলিফার নামে কিতাবের নাম রাখলেন মুস্তাজহির।

ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক, প্রাজ্ঞ লেখক ছিলেন একাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলেম আবু হামেদ গাজালি। সে সময় ইসলামের নামে প্রচলিত থাকা ভয়ঙ্কর মতবাদ ও ভ্রান্ত দর্শন মুসলমানদের আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। বিচিত্রধর্মী অসাধারণ গুনাবলীর অধিকারী মহামনীষী ইমাম গাজ্জালি মূলত সেসবের বিরুদ্ধে কার্যকর বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করেছেলেন। এ কারণে তাঁকে হুজ্জাতুল ইসলাম বা ইসলামের সাক্ষ্য উপাধি আখ্যা দেওয়া হয়। গ্রিক দর্শন থেকে শুরু আরম্ভ করে শিয়া মতবাদের উত্থান ও জোয়ারসহ সব বাতিল মতবাদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার।

সে সময় ছিল দর্শনের যুগ। তাই তিনি দার্শনিকদের যুক্তি ও পরিভাষা দিয়েই তাদের অবস্থানের অসারতা তুলে ধরেন। দর্শনের ফাঁকফোকরগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। বিভ্রান্তিতে পড়ার আশঙ্কায় তিনি সর্বসাধারণের জন্য দর্শনের অধ্যয়নকে অনাবশ্যক মনে করতেন। কারণ এতে উপকারের তুলনায় অপকারের আশঙ্কা প্রবলতর।

তিনি ছিলেন একাদশ শতাব্দীর একজন শীর্ষস্থানীয় ছুফী সাধক। নিজ কির্তিতে মহীয়ান। আলেমে রব্বানিগণের এক উজ্জল জ্যেতিষ্ক। আধ্যাত্ম সাধনা এবং পথভুলা মানুষজনকে আল্লাহর রাস্তায় ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর চেষ্টা সাধনার অন্ত ছিল না। তাই তো ১৯৯৫ সালে নিজের আধ্যাত্মিকতার সংকট অনুভব করে নিজামিয়া থেকে পদত্যাগ করেন। তারপর ৪৮৪ হিজরিতে তিনি বাগদাদ থেকে বেরিয়ে দামেস্ক, জেরুজালেম এবং হেজাজসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করতে শুরু করেন। বাগদাদ থেকে সিরিয়ায় দামেশক নগরীতে গিয়ে কঠোর আধ্যাত্মিক কঠোর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। পাশাপাশি প্রচলিত ধ্যান-ধারণার নানান দিকগুলো বিশ্লেষণ করতে থাকেন।

সমস্ত ঐতিহাসিকদের মতে ইমাম গাজালি শাইখ আবু ফারমিদির (আফজাল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী (রহ.) নিকট তাসাউফের দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।

সিরিয়ায় দু’বছর অবস্থানের পর ইমাম সেখান থেকেই বাইতুল মুকাদ্দাস রওয়ানা করেন। বাইতুল মুকাদ্দাস জিয়ারত করে মাকামে ইবরাহিমি তথা যেখানে হজরত ইবরাহিম খলিলুল্লাহ (আ.)-এর রওজা শরিফ অবস্থিত। সেখানে আগমন করেন।
অতঃপর সেখান থেকে হজ আদায়ের নিয়তে পবিত্র মক্কা ও মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেন। মক্কা মুকাররমায় কিছুদিন অবস্থান করছিলেন। এই সফরেই তিনি মিসর ও ইসকান্দারিয়ায়ও বহুদিন অবস্থান করেন। সফরে তিনি দীর্ঘ দশটি বছর কাটিয়ে দেন। সফরগুলোতে পূণ্যময় স্থান গমন করেন। বহু প্রাচীন পরিত্যক্ত বিরান ভূমিগুলোতে গিয়ে তার দৃৃশ্যসমূহ অবলোকন করে আল্লাহর সৃষ্টি ও ধ্বংস রহস্যের তথ্য উদঘাটনে ব্রতী হন।

প্রবাস জীবনে ৪৯৯ হিজরিতে যখন তিনি মাকামে ইবরাহিমিতে যান, তখন ইবরাহিম (আ.)-এর রওজা শরিফে দাঁড়িয়ে তিনি তিনটি বিষয়ে শপথ গ্রহণ করেন। ১. কখনও কোনো রাজা বাদশার দরবারে গমন করবো না। ২. কোনো বাদশা বা আমির উমারার হাদিয়া গ্রহণ করবো না। ৩. কারও সাথে কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক বাহাসে অবতীর্ণ হবো না। বস্তুত এরপর থেকে তিনি আমরণ এ শপথ প্রতিজ্ঞা পালন করে গিয়েছিলেন।

অবশেষে ১১০৬ সালে তিনি বাগদাদে ফিরে আসেন। শুরু করেন পুনরায় শিক্ষকতা ঠিক আগের মতো। ৪৯৯ হিজরিতে তিনি আবার নিশাপুরের মাদরাসায়ে নিজামিয়ায় অধ্যাপনার পদ অলংকৃত করেন। এর কিছুদিন পর ৫০০ হিজরিতে উজির ফখরুল মুলক বাতেনিয়া সম্প্রদায়ের হাতে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডর পর তিনি মাতৃভূমি তুসে ফিরে আসেন।

নিজ বাসস্থানের নিকটেই একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এখানে থেকেই ইলমে শরিয়ত ও ইলমে মারেফাতের শিক্ষা প্রদান করছিলেন।

১১১১ সাল মোতাবেক ৫০৫ হিজরি জুমাদাল উলা মাসের ১৪ তারিখে নিজ মাতৃভূমি তুশ নগরীর তেহরানে ইহলোগ ত্যাগ করেন।

ইমাম সাহেব কোনো ছেলে সন্তান রেখে যাননি। তবে কতিপয় কন্যা সন্তান ছিলো। এ কন্যা সন্তানদের দ্বারাই তার বংশ বিস্তার লাভ করেছে।

ইমাম গাজালির শিষ্য শাগরেদ ছিল অসংখ্য। মুহাম্মদ ইবনে তুমরাত, যিনি স্পেনের তাশেকিন বংশের শাসন বিলুপ্ত করে এক বিরাট হুকুমত প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ইমাম সাহেবের অন্যতম শিষ্য। তা ছাড়া উন্দুলুসের প্রখ্যাত আলেমদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি আবু বকর আররিও ইমামের যোগ্যতম শিষ্য।

ইনসাফকারী ব্যক্তিত্ব আবু হামেদ গাজালির মেধা, বুদ্ধিমত্তা, জামানার বিরল প্রতিভার অধিকারী এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এ কারণেই ইমাম যাহাবি (রহ.) তার ব্যাপারে বলেছেন, গাজালি অনেক বড় শায়েখ, কিনারাবিহীন ইলমের ইমাম, হুজ্জাতুল ইসলাম, জামানার একক ব্যক্তিত্ব যার উপাধী যাইনুদ্দিন। উপনাম আবু হামেদ।’-(সিয়ারু আলামিন নুবালা ৯/৩২৩)।

আবু হামেদ গাজালি যদিও জ্ঞান-গরিমা, ফিকহ, তাসাউফ, ইলমে কালাম ও ইলমে উসুলের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তথাপি যুহদ, ইবাদত-বন্দেগি, নেক নিয়ত এবং ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমুদ্র ছিলেন। এতদসত্তেও দর্শনের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিলো। তিনি দর্শনকে তাসাউফের ছাঁেচ ঢেলে ইসলামি লেখায় পেশ করেছেন।

এজন্য মুসলমান বিশেষজ্ঞগণ এর যথেষ্ট খÐন করেছেন। এমনকি খাস শাগরেদ আবু বকর ইবনুল আরাবিও এর খÐন করেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের শাইখ আবু হামেদ দর্শনের গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছেছেন। অতঃপর সেখান থেকে বের হতে চেয়েছেন তবে বের হতে পারেননি। তাঁর থেকে বাতেনি মতাদর্শগুলোও বর্ণিত আছে। যার সত্যতা হজরত গাজালির কিতাবসমূহে পাওয়া যায়।’-(মাজমুউল ফাতাওয়া ৪/৬৬)।

ইমাম গাজালি (রহ.) শেষ জীবনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দিকে পরিপূর্ণ ফিরে এসেছিলেন। কুরআন ও হাদিসকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি ইলমে কালাম (তর্কবিদ্যা) ও ইলমে কালামে মনোনিবেশকারীদের খুব নিন্দা করেছেন।

সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও সুন্নাহর ওপর নিয়ে এসেছেন। এবং এগুলোকেই সবকিছুতে মূল বানানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সাথে সাথে সাহাবা তাবেয়ীদের পথ ও পদ্ধতি অনুসারে চলার নসিহত করেছেন।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত,৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ সদর, নারায়ণগঞ্জ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ