শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

কতই না সুন্দরভাবে রসিকতা করতেন আমার নবি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

রসিক মেজাজের মানুষকে কে না ভালোবাসে? রসিকতা মানুষের একঘেয়েমি দূর করে তাকে কর্মতৎপর করে তোলে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রসিকতা করতে গিয়ে যেনো শরীয়তের সীমালঙ্ঘন হয়ে না যায়। রসিকতা করতে হবে যেমন করতেন রাসুলুল্লাহ সা.।

রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে রসিকতা করতেন। কখনো কখনো তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এমনকি বাচ্চাদের সাথেও রসিকতা করতেন। তিনি কখনোই কারো সাথে কর্কশ ব্যবহার করতেন না।

আনাস বিন মালিক রা. বর্ণনা করেন, একবার রাসুলুল্লাহ সা. তাকে মজা করে "হে দুই কানওয়ালা" বলে সম্বোধন করেছিলেন। - আবু দাউদ।

একবার এক লোক রাসুলুল্লাহ'র সা. কাছে একটি বাহন চাইতে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাকে মজা করে বললেন, আমি তোমাকে বাহন হিসেবে একটি উটের বাচ্চা দেবো। লোকটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটের বাচ্চা দিয়ে কী করবো? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, উট কি কোনো উটের বাচ্চা নয়? - আহমাদ।

আরেক হাদীসে আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আবু উমায়ের নামে আমার একটি ছোট ভাই ছিলো। রাসুলুল্লাহ সা. যখন আমাদের বাসায় আসতেন, তিনি তাকে বলতেন, হে আবু উমায়ের! তোমার নুগায়েরের খবর কী? - বুখারী ও মুসলিম। নুগায়ের হলো একটি ছোট্ট পাখি যার সাথে আবু উমায়ের খেলতো।

উসাইদ ইবনে হুদায়ের রা. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি লোকদের সাথে মজা করছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সা. তাকে তার পাঁজরের নিম্নাংশে একটি লাঠি দ্বারা খোঁচা মারলেন। উসাইদ রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি প্রতিশোধ নিতে চাই। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ঠিক আছে! প্রতিশোধ নাও।

উসাইদ রা. বললেন, আপনি তো কাপড় পরিহিত; আর আমি কাপড় পরিহিত নই। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সা. নিজের কাপড় উঁচু করে ধরলেন। তৎক্ষণাৎ উসাইদ রা. রাসুলুল্লাহ সা. কে জড়িয়ে ধরে তাঁর পাঁজরের নিম্নাংশে চুমু খেতে লাগলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই প্রতিশোধটিই নিতে চেয়েছিলাম। আবু দাউদ।

রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর সাহাবীদের সাথে সর্বদা হাসিমুখে কথা বলতেন। তাদের সকল অভিযোগ ঠাণ্ডা মাথায় শুনতেন।

জারীর রা. বর্ণনা করেন, আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে রাসুলুল্লাহ সা. কখনো আমার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করেননি। তিনি যখনই আমাকে দেখতেন, সবসময় হাসিমুখে কথা বলতেন। জারীর রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে অভিযোগ করে বললাম, আমি ঘোড়ার পিঠে শক্ত হয়ে বসতে পারি না। রাসুলুল্লাহ সা. আমার বুকে একটি মৃদু চাপড় মেরে দুয়া করলেন, হে আল্লাহ! আপনি তাকে দৃঢ়তা দান করুন, তাকে হেদায়েত দান করুন ও তাকে পথপ্রদর্শক বানিয়ে দিন। - বুখারী

রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর আত্মীয়দের সাথেও রসিকতা করতেন। একদা তিনি ফাতেমা রা. কে (তার স্বামী) আলী রা. এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। ফাতেমা রা. বললেন, সে আমার সাথে ঝগড়া করে বেড়িয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সা. আলী রা. কে মসজিদে নববীতে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে মজা করে সম্বোধন করে বললেন, হে আবু তুরাব! উঠে পড়ো। - বুখারী ও মুসলিম। (আবু তুরাব অর্থ হলো ধুলায় ধুসরিত)

স্ত্রীদের সাথেও রাসুলুল্লাহ সা. এর ব্যবহার ছিলো অত্যন্ত অমায়িক। তিনি তাঁর স্ত্রী আয়েশা রা. এর সাথে রাতের বেলা দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। আয়েশা রা. বলেন, আমি আমার মেয়ে বন্ধুদের সাথে পুতুল খেলতাম। যখন রাসুলুল্লাহ সা. আমার ঘরে প্রবেশ করতেন, তারা লুকিয়ে যেতো। কিন্তু তিনি সা. তাদের ডেকে আমার সাথে খেলতে বলতেন। - বুখারী

বাচ্চাদের সাথেও তাঁর আচরণ ছিলো অত্যন্ত কোমল। আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ রা. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. একবার এশার সময় সালাত আদায়ের জন্য হাসান রা. (অথবা হুসাইন রা.) কে কোলে করে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তিনি তাকে কোল থেকে নামিয়ে রেখে তাকবীর বলে সালাত শুরু করলেন।

অতঃপর তিনি সিজদায় গেলেন। সাধারণ সময়ের চেয়ে তার সিজদা অত্যন্ত দীর্ঘ হওয়ায় আমি মাথা উঁচু করে দেখলাম, সিজদাবস্থায় তাঁর পিঠে হাসান রা. বসে আছে। এটা দেখে আমি পুনরায় আমার সিজদায় চলে গেলাম। রাসুলুল্লাহ সা.

সালাত শেষ করার পর লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এতো দীর্ঘ সময় সিজদায় ছিলেন যে আমরা মনে করেছিলাম, আপনার কোনো কিছু হয়েছে অথবা ওহি নাজিল হতে শুরু করেছে। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, না, ওরকম কিছুই হয়নি। হাসান (অথবা হুসাইন) আমার পিঠের উপর চড়ে বসেছিলো; আর আমি তাকে বিরক্ত করতে চাইনি। - আহমাদ ও নাসাঈ

এর থেকে বোঝা যায়, ইসলামে রসিকতা করার অনুমতি রয়েছে। তবে রসিকতার নামে কারো অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার সুযোগ নেই। অশ্লীলতাবর্জিত শরীয়তসম্মত বিনোদনে ইসলাম কখনোই বাধা দেয় না।

ইসলামওয়েব ডট কম থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ