শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আত্মসমর্পনের মাস রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী।।

আজ আমাদের মাঝে শান্তি ও নিরাপত্তা নেই। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সবকিছইু নানা সমস্যায় জর্জরিত। জীবনের কোনো সেক্টরে আশার আলো নেই। এই অবস্থা মূলত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে আমাদের জন্য তাড়নি।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে কল্যাণের পথে, নেক পথে, সিরাতে মুস্তাকিমে চলার তাড়া দিচ্ছেন। গোনাহ থেকে আত্মসমর্পনের জন্য সতর্ক করছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘গুরু শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অব্যশই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা সাজদা, আয়াত : ২১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কোনো জনপদে নবী পাঠালে এর অধিবাসীবৃন্দকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ দ্বারা আক্রান্ত করি, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৯৪)

হরেক রকম পাপ-পঙ্কিলতা কারণেই আল্লাহ পাক বিভিন্ন বিপদ-মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন যাতে বান্দা গোনাহ থেকে তওবা করে এবং নিজের অক্ষমতা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। তাঁরই শাহী দরবারে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে।

অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো রোজা তো এই জন্যই যে, এর দ্বারা নিজের মধ্যে তাকওয়া-খোদাভীতি সৃষ্টি হবে। কিন্তু রোজা রেখেও আমরা হারাম কাজ বর্জন করছি না। হারাম উপার্জনের ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছি না। তাই আমাদেরকে সারাদিনের হিসাব-নিকাশ করতে হবে যে, আমরা সারা দিন কি কি কাজ করলাম, কোন উপায়ে টাকা কামালাম। কামানো টাকা কি কাজে ব্যয় করলাম।

রমজানে তওবার প্রতি মনোনিবেশ: হাদিসে এসেছে রমজানের প্রথম অংশ রহমতের। দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের। তৃতীয় অংশ জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তির। এজন্য এই পবিত্র মাসে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পন করতে হবে। তাঁরই দরবারে একনিষ্ঠ তওবা করতে হবে।

রোনাজারি করে বলতে হবে হে আল্লাহ! আমরা বড় অপরাধী হয়ে আপনার সামনে হাজির হয়েছি। এটা পবিত্র মাস রমজান। যাতে আপনার রহমতের দরজা খুলে যায়। জাহান্নামের আগুন বন্ধ থাকে। আমরা আপনার দরবারে আমি নিজের পক্ষ থেকে এবং সমস্ত মুসলমান ভাইদের পক্ষ থেকে তওবা করছি। আমাদেরকে মাফ করে দিন। আমাদের তওবা কবুল করে নিন। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমান মাহে রমজানের প্রত্যেক নামাজের পরে এই দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি অবিচার করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের দয়া না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ২৩)।

রমজানুল মুবারকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল: মাহে রমজানের একটি বিশেষ আমল প্রতিদিন শেষ রাতে সেহরির কিছু আগে আগে জেগে যাওয়া। নফল নামাজ, জিকির-আযকার করে আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা।

অতীত জীবনের কৃত গোনাহ মাফ চাওয়া। কেননা এ সময় দোয়া কবুলের সময়। আল্লাহর পক্ষ হতে তখন একজন আহ্বাননকারী আহ্বান করতে থাকে- কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? -আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। আরাও আওয়াজ আসতে থাকে-হে কল্যাপ্রত্যাশী অগ্রসর হও, হে অকল্যাণপ্রত্যাশী পিছনে সরে যাও। আল্লাহর পক্ষ হতে এ আহ্বানকারীর আহ্বানে লাব্বাইক বলা প্রত্যেক মুমিনের জন্য গনিমত।

আল্লাহর দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করা। আত্মসমর্পন করা। কেননা বান্দা যখন খাঁটি দিলে দয়াময় আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তিগফার করে তখন আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমার ওয়াদা রয়েছে।

তওবা ইস্তিগফার দ্বারা মুসিবত দূর হয় : সঠিক তওবা ইস্তিগফার বিপদ-মুসিবত দূর করে। আজাব প্রতিহত করে। তওবা করার কারণে পূর্ববর্তী অনেক উগ্র, বেদ্বীন জাতি থেকে আল্লাহ পাক আজাব সরিয়ে দিয়েছেন। আর আমরা তো মুসলমান। আল্লাহর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। হাশর-নাশর, কবর, পুলসিরাত সব কিছুর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে।

তাহলে আল্লাহ কি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে দরকার আজই সব রকমের পাপ-পঙ্কিলতা থেকে আল্লাহর দরবারে সঠিক তওবা করা। বিগত দিনগুলোতে যে গোনাহগুলো হয়ে গেছে এর মন্দ পরিণামের ভয়ের সাথে সাথে অন্তরে খুব অনুতপ্ত হওয়া। সামনের দিনগুলোতে গোনাহ না করার দৃঢ় ইচ্ছা করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিমতো তাঁর ফরমাবরদারি করে চলার সংকল্প গ্রহণ করা।

কারও প্রতি জুলুম করে থাকলে তার থেকে মাফ নেওয়া। কারও হক খেয়ে থাকলে তাকে তা ফেরত দেওয়া অথবা পাওনাদারের কাছ থেকে মাফ নেওয়া। হারাম উপার্জন থেকে ফিরে আসা। আল্লাহ পাক বলেন, ‘যদি তোমরা মুমিন হও তবে আল্লাহ অনুমোদিত যা বাকি থাকবে তোমাদের জন্য তা উত্তম।’ (সূরা হুদ, আয়াত : ৮৬)।

অর্থাৎ ক্রেতাকে ঠিকমতো পণ্য মেপে দেওয়ার পর লাভ যা হবে তাই আল্লাহর পক্ষ হতে হালাল। আর হারাম উপায়ে উপার্জিত সম্পদ হালাল নয়; বরং প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামের আঙ্গার। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা তো তাদের পেটে আগুন ভক্ষণ করে; তারা অচিরেই দোজখের জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১০)

বাস্তবেই হারাম উপার্জনকারী জাহান্নামের আগুন দ্বারা পেট পুরছে। যদিও এখন বুঝে আসছে না। কিন্তু চর্মচক্ষু যখন বন্ধ হয়ে যাবে। খুলে যাবে আসল চোখ। তখন বুঝা যাবে আমরা যা খেয়েছি, যে সম্পদ উপার্জন করেছি এগুলো প্রকৃতপক্ষে জাহান্নামের আঙ্গার ছিলো। যা এখন জাহান্নামের আকৃতিতে সামনে এসে হাজির।

রমজানে হিসাব-নিকাশ করা : এখনও সময় আছে। না জানি এই বরকতময় মাস আগামী বছর নসিব হয় কিনা। এ মাসকে আল্লাহর নিয়ামত মনে করা। প্রতিটা মুহূর্তকে কাজে লাগানো। এ মাসের সবচেয়ে বড় ফায়েদা কৃত গোনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। এ কথার হিসাব করতে থাকা যে, এই তাৎপর্যপূর্ণ মাসে আমাদের মাঝে তাকওয়া সৃষ্টি হলো কিনা। মহান রবের কাছে জবাবদিহির অনুভূতি সৃষ্টি হলো কিনা।

আগে থেকে এই অনুভূতি থাকলে এর মধ্যে উন্নতি অগ্রগতি হলো কিনা। কেননা আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই মাস এই জন্যই দিয়েছেন যাতে আমাদের ভিতর তাকওয়ার মতো মূল্যবান সম্পদ অর্জিত হয়। এ হিসেব-নিকাশ চালানোর পর যদি অনুভূত হয় যে, তাকওয়া এবং জবাবদিহির অনুভূতি আলহামদুল্লিাহ এসে গেছে। আল্লাহর ভয়ও অন্তরে পয়দা হয়েছে। তাহলে এ মাস আপনার জন্য অত্যন্ত মুবারক।

আল্লাহ না করুন! রমজানুল মুবারক আমাদের নসিব হলো অথচ আমরা হারাম বর্জন করলাম না, আমাদের অন্তরে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতিও পয়দা হলো না, তাহলে এর অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, এ মাসে আমরা জীবনের কোনো পরিবর্তন আনতে পারলাম না।

রমজানের আগে যেমন গান্দেগিতে ডুবে ছিলাম এখনও ঠিক অমনই রয়ে গেলাম। মোটকথা এই মুবারক মাসে বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে, বিশেষ করে শেষ রাতের নফল নামাজ, জিকির-আযকার, রোনাজারির মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পন করা।

তওবা-ইস্তিগফারের প্রতি সর্বাত্মক গুরুত্ব দেয়া। নিজের হিসাব-নিকাশ করে নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে গড়ে তুলার চেষ্টা করা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ সকল ইবাদতগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত ৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ