বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


করোনা: আল্লাহর স্মরণে ভীত হওয়ার সময় কী আসেনি?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দীন আহমদ।।

মানুষ পরকালের নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং আজাবে আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ হচ্ছে,পার্থিব ক্ষণস্থায়ী সুখ ও তাতে নিমগ্ন হয়ে পরকাল থেকে উদাসীন হয়ে যাওয়া।

তাই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। অথচ পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে এগুলো হলশুধু ক্রীড়া,কৌতুক,সাজসজ্জা,পারস্পরিক অহমিকা,ধন-জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ-পাক নিজেই এই পার্থিব জীবন সম্পর্কে বলতেছেন,তোমরা জেনে রেখো !এই পার্থিব জীবনতো হচ্ছে,ক্রীড়া-কৌতুক,জাঁকজমক,পারস্পরিক অহমিকা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই না। (সুরা হাদীদ আয়াত ২০)

তাইএসব বিষয় দেখা ও অনুধাবন করার পর একজন প্রকৃত মুমিন বুদ্ধিমান ব্যক্তির জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে,আসলেই দুনিয়ার জীবন একটি প্রতারণার স্হল। এখানকার ধন-সম্পদ প্রকৃত ধন-সম্পদ নয় যা বিপদমুহুর্তে কাজে আসতে পারে।

এরবাস্তব প্রমাণ হল,আমাদের সামনে চলমান করোনা ভাইরাস নামক ভয়ঙ্কর মহামারী। যার বিষক্রিয়া আজ সমগ্র বিশ্ববাসীকে নিরীহ-অসহায় করে তুলেছে। পার্থিব জীবনের সকল আরাম-আয়েশ ও ভ্রাতৃত্ব বা বন্ধুত্বের সম্পর্ককে সতর্কতার দোহাই দিয়ে বিচ্ছিন্ন বা একপ্রকার নিঃসঙ্গ করে দিয়েছে।

যে ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের সকল চিকিৎসক আজ মানব তৈরি সর্বপ্রকার শক্তি বা ব্যবস্থাপনা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু এসব চেষ্টা তদবির কাজে আসছেনা।

যার সূচনা হয়েছিল গেল বছর ডিসেম্বর মাসে চীনের ওহান শহর থেকে। যেটিকে আজ কোভিড ১৯ করোনা ভাইরাস নামে বিশ্ববাসী জেনে থাকেন।

প্রায় দুই মাসের অধিক সময় চীন দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রক্রিয়া চালু ছিল। যার আক্রমণে অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর পেয়ালা পান করতে হয়েছিল।

লক্ষ্যাধিক মানুষের মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়ে তাদের জীবনকে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ বেধে দিয়েছিল।পুরো দেশের মানুষগণ জীবন রক্ষার জন্য করছিল হাহাকার। যার আঘাতে জখম হয়ে পড়েছিল তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত।
তখন শুধু চীনের সাথে ছিল পুরো বিশ্ববাসীর সার্বিক বিষয় আমদানি-রপ্তানি সহ সেদেশে গমন ও ভ্রমণের উপর লকডাউন।

বর্তমানে চীন সেই প্রাণঘাতী করোনা থেকে সাময়িক মুক্তি পেলেও আক্রান্ত কিন্তু এখন পুরো পৃথিবী।চীনের নাগরিক স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হলেও সমগ্র বিশ্বের জীবন-ব্যবস্থা আজ বিপর্যস্ত ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে উন্নতশীল ও শক্তিশালী দেশ লন্ডন আমেরিকা,কানাডা,ইতালি,স্পেন সহ আজ পুরো পৃথিবী যেন কোভিড ১৯ এর ভয়াল আক্রমণের শিকার । সমগ্র পৃথিবী আজ পারস্পরিক ভৌগলিক সম্পর্ক থেকেও সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।

প্রতিটি দেশের নাগরিক মৃত্যুর আতঙ্ক নিয়ে নির্জনতা ও এক প্রকার সঙ্গীহীন জীবন পার করতেছেন। সেই প্রাণঘাতী ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের একটি কাফেলা। ধনী-গরীব,ছোট-বড়,নারী-পুরুষ,মুসলমান-বিধর্মী রাজা-বাদাশা,যার আক্রমণ পার্থক্য করে আসেনা। আজ পুরো দুনিয়ার প্রতিটি নাগরিক তাদের পার্থিব জীবনের সকল প্রকার আরাম-আয়েশ,ধন-সম্পদ,অহংকার পিছনে ফেলে শুধু জীবন রক্ষার প্রার্থনা করতেছেন।

এই ভীতিপ্রদ করোনা ভাইরাস মুলত কী এনিয়ে চলছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের গবেষণা। কেউ কেউ বলছেন,
এটি মানব তৈরি একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। আবার কারো মতে এটি একটি অদৃশ্য রোগ। মুসলমানগণ বিশ্বাস করে এটি মুলত খোদায়ী গজব বৈ কিছু নয়।

তাই কোভিড১৯ এর আত্মপ্রকাশ পাঁচ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও এখনো এর সঠিক তথ্য বা চিকিৎসা বিষয়ক কোন কিছু উদ্ঘাটন করতে পারেনি চিকিৎসা বিজ্ঞানীক ও অন্যান্য বিজ্ঞান গবেষকরা।

এরি মধ্য দিয়েও চলছে তাদের প্রত্যেকের তথ্য এবং গবেষণামুলক বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে প্রাণঘাতী সেই ভাইরাস প্রতিরোধ ও নির্মূল কাজে জীবনবাজি চেষ্টা তদবির।

তাদের চেষ্টা প্রচেষ্টায় ভয়ঙ্কর ভাইরাস মোকাবিলায় কিছুটা সফলতা দাবি করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কতেক রোগীকে দেখা গেছে তারা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে করোনার আঘাতে আক্রান্ত ও মৃত সংখ্যা কম হলেও আতঙ্ক কিন্তু অনেকটাই বেশি।

পুরো দেশে আজ লকডাউনে মানবশূন্য ও কর্মহীন পরিবেশ সৃষ্টির ফলে বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জীবন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

চলমান পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে দেশে খাদ্য সঙ্কটের কারণে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের জীবন সুরক্ষা হুমকির মুখে দাঁড়াবে।

কঠিন হয়ে পড়বে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা সবল ও সচ্ছল রাখা। নিম্ন থেকে উচ্চ মানের প্রতিটি নাগরিক আজ জীবনের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা নিয়ে।

এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও অনেকে করে যাচ্ছেন খোদাদ্রোহীতা ও অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ সহ চুরি ডাকাতি,খুন,ধর্ষন ইত্যাদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আসুন জেনে নেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এটি মূলত জিনিসটা কী? এবং যারা সুস্থ হচ্ছেন তারা কীভাবে হলেন? ইসলাম ধর্ম এব্যাপারে কী বলে? আমাদের করণীয় কী? শুরুতেই মহান আল্লাহর বাণী স্মরণে আনতে চাই।

বিপদ মুসবিত মানুষের উপর কেন আসে এব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক সুরা রোমের ৪১ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন,
{ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُون٤١)

অনুবাদ:- স্থলে অর্থাৎ মাঠে ময়দানে অনাবৃষ্টি এবং ক্ষেতের অনাবাদির মাধ্যমে ও জলে অর্থাৎ ঐসমস্ত শহর যা সাগর বা নদীর তীরে অবস্থিত পানির স্বল্পতার মাধ্যমে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের পাপের কারণে,আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান যাতে তারা ফিরে আসে। জলে স্থলে সমগ্র বিশ্বে মানুষের কৃতকর্মের কারণেই বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।

আল্লাহ পাক অন্য আয়াতে এরশাদ করেন,
ما أصاب من مصيبة في الأرض ولا في أنفسكم إلا في كتاب من قبل أن نبرآها أن ذلك على الله يسير (سورة
الحديد ٢٢)

পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপদাপদ আসে,তা সবই আমি কিতাব তথা লওহে মাহফুজে জগৎসৃষ্টির পূর্বেই লিখে দিয়াছিলাম।

পৃথিবীর বিপদাপদ দ্বারা উদ্দেশ্য দুর্ভিক্ষ,ভূমিকম্প, ফসলহানি,বানিজ্য ঘাটতি,ধনসম্পত্তি বিনষ্ট হওয়া, বন্ধু-বান্ধবের মৃত্যু ইত্যাদি। আর ব্যক্তিগত বিপদাপদ বলে সর্বপ্রকার রোগ-ব্যাধি ও ক্ষত-আঘাত ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝানো হয়েছে ।

আয়াতে এ কথা বুঝানো উদ্দেশ্য যে,পৃথিবীতে মানুষ যা কিছু বিপদাপদ অথবা সুখ-আনন্দ এবং দুঃখের সম্মুখীন হয়,তা সবই আল্লাহ-পাক লওহে-মাহফুজে মানুষ জন্ম গ্রহনের পূর্বেই লিখে রেখেছেন। উপরোক্ত আয়াতদ্বয় থেকে নিশ্চিন্তে এ কথা বলতে পারেন করোনা ভাইরাস খোদা প্রদত্ত একটি গজব যা আমাদের গুনাহের পরিণাম ।

পার্থিব বা ব্যক্তিগত বিপদ-মুসিবত মানুষের জীবনে এগুলো কেন আসে আল্লাহ নিম্ন বর্ণিত এই আয়াতে এরশাদ করে বলেন, لكيلا أن تاسو أن ما فاتكم ولا تفرحوا بما اتكم والله لا يحب كل مختال فخور .(سورة الحديد ٢٣)
অর্থাৎ,এ বিষয়ের সংবাদ তোমাদেরকে এজন্য দেওয়া হয়েছে ,যাতে তোমরা দুনিয়ার ভালোমন্দ অবস্থা নিয়ে বেশি চিন্তিত না হও । দুনিয়ার কষ্ট ও বিপদাপদ তেমন আক্ষেপ ও পরিতাপের বিষয় নয় এবং সুখ স্বাচ্ছন্দ ও অর্থসম্পদ তেমন উল্লাসিত বা মত্ত হওয়ার বিষয় নয় যে,এগুলোতে মশগুল হয়ে তোমরা আল্লাহ্‌র স্মরণ ও পরকাল সম্পর্কে গাফিল হয়ে যাবে। (সুরা হাদীদ ২২)

মনে রাখতে হবে,দুটি পার্থিব বিষয় মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও পরকালের চিন্তা থেকে গাফিল করে দেয়।
(ক) সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য,যাতে লিপ্ত হয়ে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়। এথেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে হলে পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উপর ভরসা না করে মহান আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন ও নেক আমলগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
(খ) বিপদাপদ এতে জড়িত হয়েও মানুষ মাঝে মাঝে নিরাশ হয়ে যায় এবং আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা:)বলেন, প্রত্যেক মানুষ স্বভাবগতভাবে কোনো কোনো বিষয়ের কারণে আনন্দিত হয় আবার কখনো বা দুঃখিত হয়।

عن أبي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من يرد الله به خيرا يصب منه (رواه البخاري٥٦٦٥)
হযরত আবু হুরায়র রা. থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,আল্লাহ পাক যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলেন। (বুখারী শরীফ হাদীস: ৫৬৬৫)

☆কিন্তু তাদের জন্য যা করা উচিত তা এই যে,বিপদের সম্মুখীন হলে সবর করবে এবং পরকালের পুরস্কার ও ছওয়াব অর্জন করতে হবে। আর সুখ এবং আনন্দময় মূহুর্তে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পুরষ্কার ও ছুওয়াব হাসিল করতে হবে। (রূহুল মাআনী)

তাছাড়া এই ভয়াবহ করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে হলে সবার জন্য উচিত,পার্থিব জগতের শরীয়ত সম্মত উপায় উপকরণ মেনে চলে মহান এক আল্লাহর উপর ভরসা রেখে তারি কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন হবে দুনিয়া ও পরকালের মুক্তি এবং শান্তি লাভের একমাত্র কারণ।

আল্লাহ পাক নিজেই বলছেন,তোমরা তোমাদের রব বা একমাত্র পালনকর্তা আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ধাবিত হও,যার প্রস্হ হল আকাশ ও পৃথিবীর প্রস্হের সমান। আয়াতে বলা হয়েছে,অগ্রে ধাবিত হও,মানি জীবন স্বাস্থ্য ও শক্তি সামর্থ্যের কোনো ভরসা নেই।

অতএব সৎ কাজে শৈথিল্য ও টালবাহানা করো না। এরূপ করলে রোগ অথবা ওজর তোমার সৎকাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে কিংবা তোমার মৃত্যুও হয়ে যেতে পারে । তাই অগ্রে ধাবিত হও এর সারমর্ম এই যে,অক্ষমতা ও মৃত্যু আসার পূর্বেই তুমি সৎকাজের পূজি সংগ্রহ করে নাও,যাতে জান্নাতে পৌছতে পার। (সুরা হাদীদ: ২১)

এই ভয়াল করোনা আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে ধন-সম্পদ ও জনের অহংকার পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ সুখ ও ধনসম্পত্তির কারণে উদ্ধত ও অহংকার যারা করে মহান আল্লাহ পাক তাদের নিন্দা করেছেন।

কুরআনে এরশাদ হয়েছে,উদ্ধত ও অহংকারকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেননা। তাই বুদ্ধিমান ও পরিণামদর্শী মানুষের কর্তব্য হচ্ছে, প্রত্যেক কাজে আল্লাহর পছন্দ ও অপছন্দের চিন্তা করা।

তাছাড়া অন্যায় অনাচার যাবতীয় অপকর্ম বর্জন করা হবে আল্লাহর গজব থেকে রক্ষার কারণ । নতুবা এটা হবে বিপদাপদ বৃদ্ধি ও কঠিন হওয়ার বড় সবব।

عن أبي موسى رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أن الله ليملي للظلم فإذا اخذه لم يفلته ثم قرأ وكذلك أخذ ربك إذا أخذالقري وهي ظالمة أن أخذه اليم شديد ( متفق عليه)

আবু মুসা(রা:)থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ(সা:) বলেছেন,নিশ্চয় আল্লাহ পাক অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। অতপর যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন তখন তাকে ছাড়েন না। তারপর তিনি এই আয়াত পড়লেন, যার অর্থ"তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এরূপই হয়ে থাকে,যখন তিনি অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করে থাকেন। নিশ্চয়ই তার পাকড়াও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক। (সুরা হুদ ১০২)

যারা বর্তমান এই ভয়াবহ মহামারী উপেক্ষা করে তারা তাদের অন্যায় অনাচার দূর্নীতি আর লুটতরাজ করা থেকে বিরত থাকেনা । এবং মৃত্যুর ভয় তাদের অন্তরে খোদার ভয় জাগায়না ওদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,
الم يان اللذين آمنوا أن تخشع قلوبهم لذكرالله وما أنزل من الحق ولا يكونوكالذين أوتو الكتاب من قبل فطال عليهم الأمد فقست قلوبهم:
যারা মুমিন তাদের সময় কি আসেনি যে,আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ তাতে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হবে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মত তারা হবেনা?

বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল (সুরা হাদীদ ১৬)

হযরত হামযাহ রা. এর স্ত্রী খাওলাহ বিনতে আমের আনসারী রা. বলেন,আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি,কিছু লোক আল্লাহর মাল নাহক ব্যয় বন্টন করবে। সুতারাং তাদের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন রয়েছে। (সহীহ বুখারী ৩১১৮)

অথচ হযরত ইবনে উমর (রা)থেকে বর্ণিত রাসুল সা বলেছেন,মুসলিম মুসলিমের ভাই,সে তার উপর অত্যাচার করবেনা এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তাঁর ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে,আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন।

যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন এক বিপদ দূরকরে দেবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন,(বুখারী:২৪৪২ মুসলিম:২৫৮০)

বলছিলাম রোগীরা সুস্থ হল কীভাবে? মুমিন বান্দাদের বিশ্বাস মানুষের শরীরে রোগব্যাধি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে আবার আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ করে। কোন বস্তুর বা কারো শক্তি নেই কাউকে রোগ দেয়া বা তা থেকে নিরাময় প্রদান করার।

বরং তা একমাত্র মহান আল্লাহ পাকের ক্ষমতা। তিনি যাকে ইচ্ছা রোগ দেন এবং এর নিরাময় তিনিই করেন। আল্লাহ পাক যেভাবে রোগ সৃষ্টি করেছেন তেমনি রোগ থেকে আরোগ্য পেতে এর যথাযথ ব্যবস্থাপনাও তিনি দিয়ে রেখেছেন।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : ( مَا أَنْزَلَ اللَّهُ دَاءً إِلاَّ أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً ‏) رواه البخاري

আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি। (বুখারী শরীফ,৫৬৭৮)

হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন,আল্লাহ তাআলাই রোগ ও ঔষধ সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক রোগের চিকিৎসাও তিনি সৃষ্টি করেছেন। অতএব তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর।(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৮৬৪)

পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করোনা নামক এই মহামারী সহ সকল বিপদাপদ থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা করেন। আমীন।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ