শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

করোনায় আমাদের পরীক্ষার সময়, সুতরাং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মূল: মুফতি আহমাদ নাদের আল কাসেমী
ইসলামী ফেকাহ একাডেমি, ভারত
অনুবাদ: জামিল আহমাদ

সামনে দুনিয়ার যে অবস্থা হতে চলেছে তাতে প্রত্যেকটি ঈমানদারের ভূমিকা এমন হওয়া উচিত যে, সে পূর্ণ ঈমানের সাথে বলবে, আগামীকাল কি হবে তা একমাত্র আমার প্রভুই জানেন, কেননা তিনিই বলে দিয়েছেন, অদৃশ্যের খবর কেবল আমার কাছেই আছে কোন মানুষের কাছে নেই।

বর্তমানে সারা দুনিয়ায় ভয় এবং বিশ্বাসের যুদ্ধ চলছে! একদিকে দুনিয়াকে পূর্ণ দাজ্জালী শক্তিতে মৃত্যুর ভয় দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের অন্তরে এ কথার বিশ্বাস বদ্ধমূল করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে যে, জীবন ও মৃত্যু একমাত্র আল্লাহ তা'আলার হাতেই। তিনি যাকে, যেভাবে ইচ্ছা মৃত্যু দেন, বিছানায় কিংবা অসুস্থতার দরুন। আর যাকে ইচ্ছা জীবিত ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত রাখেন।

আল্লাহ তা'আলার সত্ত্বায় বিশ্বাসীদের জন্য কোন প্রকার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় ভোগার কি প্রয়োজন? পৃথিবীর বুকে তো আল্লাহ তা'আলার হুকুম খেলাফত অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং নিজেদের ঈমানকে যাচাই-বাছাই করতে হবে যে, আল্লাহ মাফ করুক আমাদের এই বিশ্বাসে কোন প্রকার ঘাটতি হচ্ছে না তো?

এটাও চিন্তা করতে হবে যে, আমরা নিজেদেরকে ঘর বন্দী করে নিলেই করে নিলেই কি মৃত্যু থেকে বেঁচে যাব?
যেমনটি দুনিয়ায় মৃত্যু ভয়ের ঝান্ডা উত্তোলনকারীরা বলছে, আর আমাদেরকেও আল্লাহ তা'আলার এবাদত বন্দেগী এবং তার ধ্যান মগ্ন হওয়া থেকে কার্যত বাধা দেওয়া হচ্ছে। সারাদিন ঘরবন্দি থাকা এবং সারারাত নিশ্চিন্তে বিছানায় পড়ে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে করে স্বীয় অস্তিত্বের বাস্তবতাকেও ভুলিয়ে দিতে পারে।

ভালোভাবে স্মরণ রাখবেন! এটা দুনিয়া এখানে শুধু খাওয়া দাওয়া আর মরে যাওয়াই আর মরে যাওয়াই দাওয়া আর মরে যাওয়াই দাওয়া আর মরে যাওয়াই দাওয়া আর মরে যাওয়াই মানুষের জীবন বৃত্তান্ত। মানুষকে কেয়ামতের বাস্তবতা থেকে উদাসীন করে দেয়ার করে দেয়ার চাল চালছে।

যেন তারা এটা বলতে চাইছে যে, তোমাদের কোন প্রতিপালক আছেন, যিনি আখেরাতে তোমাদেরকে এই জীবনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন?

এগুলো তাদের মিথ্যা বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা দুনিয়ার ভালোবাসাকে মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিতে চাচ্ছে।
আপনি কি এটাও চিন্তা করেন না যে, কাল পর্যন্ত জামাতের সাথে ফজর নামাজ পড়ার লোক সংখ্যা কতজন ছিল আর আজ কতজন কতজন রয়েছে?

যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গে আর ফজরের ওয়াক্ত অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন সূর্য উঠার পর তারা ঘুম থেকে উঠে মনে চাইলে নামাজ পড়ে অন্যথায় তাও পড়ে না। এরপর আল্লাহ তাআলার স্মরণ ব্যতীতই চা-নাস্তা, খাওয়া-দাওয়ায় লিপ্ত হয়ে যায়। শয়তান যা চাইছিল মানুষ ঐ রাস্তায়ই চলতে শুরু করেছে। মৃত্যুর ভয় অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেলে, বুক উঁচু করে নিজেদের কৃতিত্ব ও বিজয়ের ঢোল পেটাচ্ছে।

এটাও কি দেখছেন না যে, ঐ সমস্ত লোক যারা গতকালও মানুষকে কেয়ামত আসার ব্যাপারে সংবাদ দিচ্ছিল এবং একথা শুনাচ্ছিল যে, এমনিভাবে আমি তাদের (আসহাবে কাহাফের) খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে লোকেরা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কাহাফ ২১

এবং মানুষদেরকে একথার একিন দিচ্ছিল যে, হে নবী বলুন, তারা কতকাল অবস্থান করেছে তা আল্লাহই ভাল ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে । তিনি কত চমৎকার শোনেন ও দেখেন । তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি নিজ কর্তৃত্বে কাউকে শরিক করেন না- কাহাফ ২৬।

দুনিয়াকে এ বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছিল যে, যার মন কে কে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না- কাহাফ ২৮
তারাও সব ভুলে গিয়ে জীবনের স্থায়িত্ব এবং মৃত্যু ভয়ের শিকার হয়ে গিয়েছে। মৃত্যু থেকে বাঁচার চেষ্টা-তদবিরে ঈমানদার-বেঈমান নির্বিশেষে সকলেই লিপ্ত হয়ে গিয়েছে।

আল্লাহর কুদরতের অনুভূতি জাগিয়ে দেওয়া এবং আগ বাড়িয়ে দুনিয়াকে এ কথা বলার মত কেউ নেই যে, তোমরা কোথায় যাচ্ছ? কোন দিকে পলায়ন করছ? ওই পালনকর্তার দিকে ফিরে আসো, যিনি সব জিনিসের খালিক ও মালিক।

এটাও দেখছেন না যে, প্রত্যেকেই ইবাদতে ছাড় খোঁজা এবং তা পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে দলিল খুঁজতে শুরু করেছে খুঁজতে শুরু করেছে। চাই সেটা তারাবীহ হোক বা নফল, সামষ্টিক ইবাদত হোক বা ব্যক্তিগত। কি উপায়ে অল্পতেই আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জন হবে এবং কোন দলিলের ভিত্তিতে ইবাদতে কম করা যাবে এবং তারা ইবাদত থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।

কিয়ামুল্লাইলের নামে ২০ রাকাত থেকে ৮ রাকাত হয়ে যাচ্ছে, কখনো তো ৩ রাকাত এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে! সকলেই সামষ্টিকভাবে আদায়কৃত সুন্নতকেও লঙ্ঘন করে চলেছে, এটা কেমন যেন ইসলামের একটি স্বাভাবিক আমল হিসেবে রয়ে রয়ে গিয়েছে। যেন বলতে চাইছে, এটা মসজিদের চাইতে ঘরে পড়াই উত্তম, যাতে করে, যার ইচ্ছা পড়বে যার ইচ্ছা পড়বেনা।

আর যৌথভাবে পালনীয় ধর্মীয় এবাদতও ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। উপরোক্ত বিষয়গুলোতে খুব জোর দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
অনেক কড়া কথা, কারো খারাপ লাগলে মাফ করবেন।

যেহেতু এজাতীয় মেসেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে, এইজন্য আমি বিস্তারিত উল্লেখ করে দিলাম। কিন্তু এদিকে কোন খেয়াল নেই যে, আজকের এই পথ ভোলা মানুষগুলো তাদের প্রকৃত রবের পরিচয় কিভাবে পাব? কিভাবে তার নিকটবর্তী হবে? আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক কিভাবে মজবুত হবে?

ইসলামের সম্মিলিত ইবাদত ব্যবস্থা পঙ্গু হয়ে রয়েছে, যার কারণে স্বয়ং উম্মতের বড় একটি অংশ স্বীয় প্রতিপালক হতে দূরে সরে যাচ্ছে । এ ব্যাপারে আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।

আর ওই দাজ্জালি চিন্তা-চেতনাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শক্তিশালী করার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছেই। যার দ্বারা ইসলামের আধ্যাত্বিক ইসলামের আধ্যাত্বিক ও সামষ্টিক ইবাদত ব্যবস্থায় যত দীর্ঘ সময় সময় পারা যায় বিঘ্নতা সৃষ্টি করবে
এবং আল্লাহ মাফ করুক! দুনিয়াবাসীকে স্বীয় প্রতিপালকের সাথে সম্পর্ক গড়ার এবং তার জাতের উপর ঈমানকে পাকাপোক্ত করার ধ্যান-ধারণাকেও পরিবর্তন করে দিবে, কেননা মানুষের স্বভাবই হচ্ছে, যখন কোন জিনিস থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দূরে থাকবে, তো তা ভুলতে শুরু করবে।

একেবারে যদি ভুলে নাও যায় তবে তাতে কমতি অবশ্যই দেখা দিবে। যা অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকেরা আজও অনুভব করতে পারেন। এ সমস্ত চক্রান্তে বড় বড় শয়তান নিযুক্ত। কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করুন।

যাইহোক কথা অনেক দীর্ঘ হয়ে গেল। আমি তো কেবল আলেম-ওলামা, চিন্তাবিদ, জ্ঞানী, দীনের দায়ী, শরীয়তের ধারক-বাহকদের আবেদন করতে চাই যে, রমজানের মতো মহিমান্বিত মাসের বরকতের দ্বারা মানুষকে বিশেষভাবে মুসলমানদেরকে আল্লাহর সাথে যতদূর সম্ভব সম্পর্ক জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। ছোটখাটো খুঁটিনাটি বিষয় থেকে বেঁচে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। ঈমানদারদের এখন চতুর্দিক থেকে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে , সুতরাং অযথা কাজে নিজেকে এবং উম্মতকে লিপ্ত করবেন না।

বর্তমানে সায়েন্স ও মাযহাবের মুখোমুখি লড়াই চলছে। এটা কোন মাযহাব মাযহাবে লড়াই নয়। আর দাজ্জাল সময়ের পরিক্রমায় চিকিৎসাবিদ্যা ও সায়েন্সের কাঁধে ভর করেই নিজের খেল খেলছে, কেননা মানুষ প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তুর ব্যাপারেই ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।

বর্তমান সময়ের দাজ্জালরা এ দুর্বলতাকে ভালো করেই জানে। তারা এ পদ্ধতিতেই দুনিয়ার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। তাদের জানা আছে যে, মুসলমানই একমাত্র সম্প্রদায় যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে এবং দুনিয়ার বস্তুসমূহকে প্রকৃত শক্তির উৎস হিসেবে বিশ্বাস করে না। সুতরাং এই মুসলমানরাই আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিবন্ধক হতে পারে।

এছাড়া অন্যদেরকে তো আমরা এক তুড়ি মেরেই হাত করে নেব। এজন্য তাদের কুটচক্রান্ত ও মহামারী কে মেডিকেল থিউড়ির মাধ্যমে দুনিয়াবাসীর সামনে যত শক্ত ভাবে উপস্থাপন করা যায় ততই মঙ্গল।

বাকি থাকলো আমাদের কল্যাণকামীদের কথা তাদেরকে আমরা অবশ্যই পাব এবং প্রতিনিয়ত পাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা মানুষকে মানুষের খারাবি মানুষকে মানুষের খারাবি ও ফেৎনা থেকে হেফাজত করুন এবং আমাদের ঈমানকে তার জাতের উপর অটল ও অবিচল রাখুন। আমিন।

বাসিরাত অনলাইন থেকে জামিল আহমদের অনুবাদ
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ