বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


খোশ আমদেদ মাহে রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বজলুর রহমান।।

রহমত ও মাগফিরাত নাজাতের সওগাত নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় মাহে রমজানুল মোবারক সমাগত। চন্দ্র মাসের নবম মাসের নাম রমজান।সমগ্রসৃষ্টি জগতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সা. আলাইহি ওয়া সালাম-এর যেরূপ মর্যাদা ঠিক তেমনি ১১ মাসের উপর মাহে রমজানের মর্যাদা।

মানব জাতির দিক নির্দেশনা হিসেবে পবিত্রকোরআন অবতীর্ণ করা হয় রমজানে। একমাত্র ১২মাসের মধ্যে রমজানের নামই কোরআনে উচ্চারিতহয়েছে। তবে হাদীস শরীফে এসেছে, শাবান আমার মাসআর রমজান আলাহর মাস। রমজানে সিয়াম সাধনারফলে রোজাদারের অন্তরে আলাহর প্রতি ঐকান্তিকবিশ্বাস সুদৃঢ় হয়।

ফলে ইবাদত বন্দেগীর প্রতি মানুষেরআসক্তি বৃদ্ধি পায়, রোজাদারের ক্বলব পরিষ্কার হওয়ারসঙ্গে সঙ্গে পাপ রাশিও ধুয়ে যায়। সিয়ামসাধনা শিক্ষাদেয় অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার।নিজেকে সঠিক পথে পরিচালনা করার শিক্ষাদেয় । সিয়ামসাধনার সঙ্গে তাকওয়ার সম্পর্কঅঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

১২ মাসের মধ্যে রমজান একটি অন্যতম সম্মানিত মাস। ইসলামের ৫টি রোকনের মধ্যে রমজান মাসের রোজা একটি রোকন। এ মাসটি অন্যান্য মাস হতে বিশেষ গৌরবের অধিকারী। মহান আল্লাহতায়ালা এ মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত, মহিমানি¦ত ও গৌরবানি¦ত করেছেন। রমজান আরবী শব্দ রময ধাতু হতে উদ্ভুত। যার অর্থ হচ্ছে- জ্বালানো, পোড়ানো। এ মাস মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে ধ্বংস করে সুপ্রবৃত্তিকে বিকাশ করে।

অন্যদিকে রোজাকে আরবী ভাষায় সিরাম বলা হয়। সিয়াম-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দহন, জ্বলন। সিয়ামের আরেক অর্থ কোন কিছু থেকে বিরত থাকা বা বেঁচে থাকা বা পরিত্যাগ করা। শরীয়তের পরিভাষায় খাওয়া, পান করা এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম সওম। সুবেহ সাদেক হওয়ার পূর্ব থেকে শুরু করে সুর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়তে একাধারে এভাবে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকলেই তা রোজা হিসেবে পরিগণিত হবে। সুর্যাস্তের এক মিনিটের আগেও রোজাদার যদি কোন কিছু খেয়ে ফেলে, পান করে কিংবা সহবাস করে, তবে রোজা হবে না।

এ রমজান আল্লাহতায়ালার অফুরন্ত নেয়ামত, রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে আমাদের মাঝে।২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ সংক্রান্ত আয়াত নাজিল হয় “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর।

যাতে তোমরা সংযমী হও”। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে”। পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

এর ভেতর থেকে কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো- প্রিয় নবীজি সা. এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, রাসুল সা. এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম) অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে।

এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম) বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, হুজুর সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম) হাদিসে আরো এসেছে, রাসুল সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য।

তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরুপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।

সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রানের চেয়েও উওম।

লেখক: সিনিয়র এক্সিকিউটিব আলফাতাহ পাবলিকেশন্স।
ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ