শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

হোম কোয়ারেন্টাইনের সময়গুলো একজন মুসলিমের যেভাবে কাটানো উচিত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সাইফুল ইসলাম আল মাদানী
খতিব- মির্জ্জা মান্না দেউরী জামে মসজিদ
মুহতামিম-জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসা ঢাকা>

আজ মুসলিমরা দু'টি মহা বিপদের মধ্যে আক্রান্ত হয়ে আছে। এক --সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের ষড়যন্ত্রের কবলে নিষ্পেষিত মুসলিম বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠী। জাতিসংঘের হিসেবে প্রায় ছয় কোটি মুসলিম বাড়ি ঘর ছাড়া ছন্নছাড়া অবস্থায় আছে।

দুই : এ কঠিন মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে মাহামারী করোনা ভাইরাস। এই মহামারীর সময়টা আমরা কীভাবে কাটাবো?

এ মহামারীর দুর্যোগে আমরা আল্লাহর দরবারে নিজের দোষ ত্রুটি স্বীকার করে তওবা করব। ভবিষ্যতে সব অন্যায় ছেড়ে দেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার করব। আর আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবো। এখন আমাদের হাতে প্রচুর সময়। আমারা আল্লাহর দরবারে এ আজাব থেকে বাঁচতে কান্নাকাটি করবো। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

আমাদের সন্তানদের জন্য রুটিন করে দিতে হবে। তাদেরকে যদি সুন্দরভাবে পরিচালনা করি তাহলে সময়গুলো সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। সন্তানদের খাওয়া দাওয়া পড়াশোনা ও ইবদতের জন্য রুটিন করে সে অনুযায়ী চলতে বলতে হবে।

আমরা যারা বড় আছি, আমাদেরও পুরোটা দিন রুটিনের মধ্যে আনতে হবে। তাহলে দেখবেন , দিন কাটাতে একগোয়েমিভাব আসবে না। আমাদের ইবাদত খাওয়া ঘুম সবকিছুই যেনো রুটিন মত হয় সেদিকে খেয়াল করলেই দেখবেন, ঘরে থাকা এ সময়টা কত সুন্দর কেটে যাবে। সাথে দৈনিক কিছু সময় হালকা ব্যায়াম করতে হবে। নিয়ম জেনে , রোগ প্রতিরোধী কিছু খাবার ও পানীয় গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে নিজের কর্মস্থলে , পরিবারে, সমাজে কি কি ভালো বিষয়ের প্রচলন ঘটানো যায় পরিকল্পনা করা ও প্রস্তুতি নেওয়া। খারাপ বিষয়গুলো বর্জনের অপসারণের পরিকল্পনা করতে থাকা।তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বিপদের মাধ্যমে উন্নতি দান করবেন এবং এই বিপদ থেকে আমাদেরকে রেহাই দান করবেন।

তবে , সবচেয়ে বেশি প্রধান্য দিতে হবে আল্লাহ তায়ালার জিকির ও তিলাওয়াতকে। বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। নামাজ যথা সময়ে আদায় করা। বাসার ছোট বড় সবাইকে নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাত করে পড়া। ফরজের পাশাপাশি নফলগুলো যত্নসহকারে আদায় করা।

জিকির কেন বেশি বেশি করব? কুরআন শরিফে কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে বেশি বেশি করতে বলেননি। যেমন , নামাজ বেশি বেশি পড়, জাকাত বেশি বেশি দাও। তবে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের কয়েকটি জায়গায় আদেশ করেছেন ,বেশি বেশি জিকির কর।

বেশি বেশি জিকির করতে হবে। হাটতে চলতে ফিরতে আমাদের জিকির করতে হবে। জিকিরের মাধ্যমে হৃদয়কে সচল রাখা। জিকির করতে করতে আমাদের এমন হয়ে যেতে হবে, যেনো অবচেতন মনে আমাদের মুখ থেকে আল্লাহর জিকির বের হতে থাকে। আমরা হাটছি, চলছি, বসে আছি, সবসময় যেনো আমাদের মুখে জিকির থাকে।

হোম কোয়ারিন্টিনের এ সময়গুলো আমাদের কোনো কাজ নেই। কাজের চাপ নেই। তাই এ ফাঁকা সময়ে আল্লাহর ইবাদত করে আল্লাহকে রাজি খুশি করার সবচেয়ে বড় সুযোগ।

হাদিসে নবীজি ইরশাদ করেন ,عَن معَاذ بن جبل رَضِي الله عَنهُ قَالَ: قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: لَيْسَ يتحسر أهل الْجنَّة إِلَّا على سَاعَة مرت بهم لم يذكرُوا الله تَعَالَى فِيهَا অর্থাৎ, জান্নাতিরা সবচেয়ে বেশি একটি বিষয়ে আফসোস করবে। দুনিয়াতে যে সময়টা আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে, সে সময়টার জন্য তারা খুব বেশি আফসোস করবে। জান্নাতিরা এ একটি বিষয়েই আফসোস করবে। এটা ছাড়া আর কোনো বিষয়ে তাদের আফসোস থাকবে না।

এজন্য আমরা খুব বেশি বেশি জিকিরের অভ্যাস করবো। সব ধরণের গুনাহ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবো। এ সময়টায় অনেকে বাসায় বসে টিভি দেখে সময় নষ্ট করছি। মোবাইলে ইন্টারনেটে অপ্রজনীয় সময় ধ্বংস করছি ,।মনে রাখবেন , এ সময়গুলোর জন্য আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে।

মুহতারাম!! রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচতে রাসুল সা. যেসব দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন , সেগুলোও বেশি বেশি পড়া।
اللَّهمَّ إِنِّي أَعُوُذُ بِكَ مِنَ الْبرَصِ، وَالجُنُونِ، والجُذَامِ، وسّيءِ الأَسْقامِ. বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’য়ুজুবিকা মিনাল বারাছ, ওয়াল জুনুন, ওয়াল জুযাম, ওয়া সায়্যিইল আসক্বাম। (আবু দাউদ)

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট ধবল, কুষ্ঠ এবং উন্মাদনা সহ সব ধরনের কঠিন দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে পানাহ চাই। (সুনান আবু দাউদ) যারা পারি না, তারা আস্তে আস্তে শিখতে থাকবো। ছোট ছোট দোয়া, যত বেশি পারি, পড়তে থাকব।হাদীছ শরীফে আল্লাহ রাসুল এরশাদ করেন, সবচেয়ে দামি দোয়া কালেমা তাইয়্যেবা।এমনিভাবে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, ইস্তেগফার, দরুদ আল্লাহ তাআলার বিভিন্ন সিফাতি নাম ইত্যাদি বেশি বেশি পড়তে থাকা। আর নতুন নতুন দোয়া শিখতে পারলে তো আরো ভালো কথা। সোনায় সোহাগা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আল্লাহ জিকিরে ও ইবাদতে এ কঠিন সময় পাড় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

-শ্রুতি লিখন- আবদুল্লাহ তামিম

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ