শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার

রবের করুণা লাভে মুক্তি পেতে পারি করোনা থেকে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা তৈয়ব উল্লাহ নাসিম।।

বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হাতেগোনা কটা দেশ ছাড়া কেউ মুক্ত নয় আজ করোনার ছোবল থেকে। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে হাজারো মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এখন মিনিটে নয় সেকেন্ড হিসাব রাখতে হচ্ছে। এই রোগের নেই কোনো ঔষধ নেই চিকিৎসা না আছে ভ্যাকসিন।

ওয়ার্ল্ড মিটারের আজকের হিসেব অনুযায়ী ইতিমধ্যে উনিশ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত এই রোগে। এক লক্ষ পনের হাজারের মত মানুষ মারা গিয়েছে এই মহামারীতে। আলহামদুলিল্লাহ চার লক্ষ বত্রিশ হাজারের মত মানুষ সুস্থ হয়েছেন।

আমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী মানুষরা জাগতিক চিকিৎসা না পেলেও আল্লাহর দিকে ফিরে গিয়ে মুক্তি পেতে পারি এই দুর্যোগ থেকে। মানুষের প্রতি দয়া ও সাহায্য করে নিজেরা মহান রবের করুণায় রুখে দিতে পারি এই করোনা বিপর্যয়কে। আল্লাহ তাআলা চাইলে নিমিষেই তুলে নিতে পারেন, দুনিয়া থেকে এই মহামারী।

মূলত তিনি চান, আমরা যেন তার দিকে ফিরে যাই পাপ পঙ্কিলতার পথ ছেড়ে। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রুম-৪১)

আল্লাহ চান আমরা আমাদের কৃতকর্মের উপর লজ্জিত হয়ে তাওবা ইস্তেগফার করে তার দিকে ফিরে যাই। তিনি বলেছেন আমরা তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি দুর্দিনের বদলে আমাদের সুদিন ফিরিয়ে দেবেন।

ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর বলেছি তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সূরা নূহ-১০.১১.১২)

এর পাশাপাশি মানুষের প্রতি করুণা ও দয়ার হাত বাড়িয়ে দান সদকা ও অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা মাধ্যমে এই মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি আমরা।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, " করুণা কারীদের রহমান আল্লাহ দয়া করেন, তোমরা জমিনের অধিবাসীদের করুণা ও দয়া করো, তবে আসমানে যিনি আছেন তিনি তোমাদের উপর করুণা ও দয়া করবেন।"
(তিরমিযী,সহীহ)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ মানুষের প্রতি করুণা ও দান সদকার গুরুত্ব এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তার প্রশিদ্ধ আল-ওয়াবিলুস-সায়্যিব গ্রন্থে বলেন, "রোগবালাই ও বিপদাপদ রুখে দিতে কিংবা তা থেকে মুক্তি পেতে দান সদকার আবাক করার মতো প্রভাব রয়েছে। যুগে যুগে মানবসমাজে এটা স্বীকৃত এবং প্রশিদ্ধ। সাধারণ মানুষ কিংবা বিশেষ ব্যক্তিবর্গ সবাই এর উপর আমল করে ফল পেয়েছে, হয়েছে উপকৃত। এবংকি দান সদকাকারী যদি পাপী অত্যাচারী কিংবা কাফেরও হয় আল্লাহ তাআলা তার উপর থেকেও বিপদাপদ তুলে নেন।"

খতীব বাগদাদী এ প্রসঙ্গে একটি হাদীস বর্ণনা করেন, সদকা ৭০ রকমের বিপদাপদকে রুখে দেয়। তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো কুষ্ঠ ও শ্বেত রোগ।

(হাফেজ এরাক্বী, আলবানী হাদীসটাকে যঈফ বা দুর্বল বলেছেন।) শাইখ জিবরীন বলেন অন্যান্য হাদীসে এর মূল রয়েছে, তাই এই হাদীসকে গ্রহণ করা যায়।

প্রশিদ্ধ আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তোমরা তোমাদের রোগীদের দান সদকা দ্বারা আরোগ্য কামনা করো। (আবু দাউদ, বায়হাকী)

দান সদকা যে কেবলমাত্র টাকাপয়সা বা সম্পদ দ্বারা হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। প্রয়োজন শুধু মানসিকতার। আল্লাহর রাসূল সা. কে এক লোক এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি গ্রামের মানুষ, আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যা থেকে আল্লাহর নিকট আমি লাভবান হতে পারি। উত্তরে আল্লাহর রাসূল বললেন, কোনো ভাল কাজকেই ছোটো করে দেখো না। চাই সেটা তোমার বালতি দিয়ে কূপ থেকে অন্যের পাত্রে পানি তুলে দেয়াই হোক। (ইবনে হেব্বান, সহীহ)

অন্যত্র তিনি সা. বলেন, প্রত্যেক ভাল কাজই সদকা, চাই সেটা সহাস্যে কারো মুখোমুখি হওয়াই হোক।( তিরমিযী)

সুতরাং আমরা সবাই আজ যে মহা বিপদে পতিত, যে মহামারিতে আক্রান্ত, এর থেকে নিষ্কৃতি পেতে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা এস্তেগফারের পাশাপাশি বিশেষভাবে দান সদকার আমল করতে পারি। মানুষের প্রতি করুণা ও দয়ার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। আজ মানুষ নানামুখী কষ্টে আছে। কেউ খাবারের কষ্টে আছেন, রোগ নিয়ে কষ্টে আছেন, কেউ লাশ কাফন দাফন নিয়ে কষ্টে আছেন। যে যেভাবে পারি মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসি।

করুণা ও দয়ার হাত বাড়িয়ে দেই একে অপরের প্রতি। মানুষের প্রতি করুনাধারা দিয়ে রবের দয়ায় রুখে দেই করোনা নামক এই মহামারী কে। اللهم ارفع عنا هذا البلاء و الوباء عاجلا غير آجل. হে আল্লাহ আমাদের উপর থেকে এই মহামারী বিপদ দ্রুত তুলে নিন।

লেখক, ইমাম, সৌদি আরব।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ