শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

করোনা যেন রমজানের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মদ উল্লাহ রিজওয়ান।।

বর্তমান করোনা ভাইরাসের পাদুর্ভাবে আমাদের সাবাবিক জীবন-যাপন যদিও বেসামাল হয়ে পড়েছে। তবে বছর ঘুরে রমযানের পূর্বাভাস নিয়ে হাজির হওয়া শাবান মাস প্রায় সমাপ্তির দিকে এগিয়ে চলছে। আর মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে। তারপরেই রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মহান বার্তা নিয়ে সমহিমায় আগমণ করবে পবিত্র মাহে রমযান। এখনই রমযানের আগমনী বার্তা দিকদিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে। রমযানের একফালি চাঁদের অপেক্ষায় মুমিন মুসলমানের হৃদয় বে-চাইন আর বে-ক্বারার হয়ে পড়েছে।

কারণ,এ মাসের প্রতিটি ইবাদতের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যায়। অতীত জীবনের পাপরাশি মোচন করে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের জীবনকে নতুন করে গঠন করা যায়। শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে, নির্দেশিত বিষয়গুলোর চর্চায় মহান এক সুযোগ পাওয়া যায়।

তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিৎ এবং কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার শাহী দরবারে নিবেদন করতঃ এখন থেকেই দুনিয়ার যাবতীয় ব্যস্ততা ও অকল্যাণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষে শারীরিক ও মানসিক ভাবে শাহরে রামাযানুল মুবারকের জন্য চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে,আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ মাহে রমযানের আগমণের পুর্বেই ৩ টি প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ১। রাসূলুল্লাহ সাঃ শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার মাধ্যমে রমযানের সিয়াম সাধনায় আমলী প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। যেমন-

উম্মুল ম'মিনীন হযরত আয়শা সিদ্দীকা (রাঃ) থেকে বর্ণত - তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ কখনো কখনো এমন ভাবে রোযা পালন করতেন যে, আমাদের মনে হতো, তিনি আর রোযা ত্যাগ করবেন না। আবার কখনো এতো দীর্ঘ সময় রোযা ত্যাগ করতেন যে, আমাদের মনে হতো তিনি আর রোযা পালন করবেন না। রমযান মাস ব্যাতিত পূর্ণ কোন মাস তাকে আমি রোযা পালন করতে দেখিনি। আর শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোনো মাসে এতো রোযা পালন করতেও দেখিনি। বোখারি শরীফ

হজরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন,আমি একবার রাসূলুল্লাহ সাঃ কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল ! আমি আপনাকে শাবান মাসের মত অন্যকোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনা (এর কারন কী.? ) রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, রজব ও রমযানের মাঝে অবস্থিত এটি এমন এক মাস যাতে লোকেরা উদাসীন হয়ে থাকে। এটি এমন মাস যখন বান্দার আমল সারা জগতের অধিপতির সামনে হাজির করা হয় এবং আমি চাই আমার আমল এই অবস্থায় হাজির হোক যখন আমি রোযা পালনের মধ্যে থাকি। [সুনানে নাসায়ি]

উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ পুরা বছরে রমযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে পরিপূর্ণ রোযা পালন করতেন না। কিন্তু শাবান মাস এর ব্যতিক্রম, এ মাসে তিনি এমন ভাবে রোযা পালন করতেন যে, রমজানের সাথে মিলিয়ে নিতেন [সুনানে আবি দাউদ]

উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন এমনকি পুরা মাসই রোযা রাখতেন এবং আমাদেরকে বলতেন যে, তোমরা এ মাসে তোমাদের সাধ্যানুযায়ী আমল কর [সুনানে নাসায়ি]

২। রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহ তাআলার দরবারে মাহে রমযানের বরকত হাসিলের জন্য বেশি বেশি দুআ করতেন। যেমন-

হযরত ত্বলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন (নতুন চাঁদ দেখতেন, দুআ করে বলতেন) হে আল্লাহ ! এই চাঁদকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান ও ইসলামের নিদর্শন হিসেবে আনয়ন করুন। (হে চাঁদ) আমার এবং তোমার প্রভু একমাত্র আল্লাহ। পথনির্দেশনা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক এই চাঁদ। [সুনানে তিরমিজি]

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, যখন রজব মাস প্রবেশ করত তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ (আল্লাহ তাআলার দরবারে দুআ করে) বলতেন, আয় আল্লাহ ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং (হায়াতে বরকত দিয়ে) রমযান পর্যন্ত আমাদের পৌছিয়ে দিন। [মুসনাদে আহমদ ]

৩। রাসূলুল্লাহ সাঃ হযরতে সাহাবায়ে কারাম (রাঃ) কে রমযানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করতেন এবং রমযানের রহমত, বরকত সম্পর্কে সচেতন করতেন। যেমন..

হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাঃ ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের মধ্যে বরকতময় মাস রমযান উপস্থিত হবে , পুরা মাসে রোযা পালন করা সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শঙখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এই মাসে আল্লাহ তাআলা এমন একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাসের তুলনায় উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে প্রকৃত পক্ষেই বঞ্চিত হল। [সুনানে নাসায়ি]

হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রমযান মাসের নিকটবর্তী একদিন রাসূলুল্লাহ সাঃ বলিলেন যে,রমযানের মাস এসে গিয়েছে, যাহা অতি বরকতের মাস। এমাসে আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিবেন,বিশেষ রহমত নাজিল করবেন, তোমাদের গুনাহ মাফ করবেন, দুআ কবুল করবেন এবং তোমাদের পরস্পর (আমলের) প্রতিযোগিতা দেখবেন। তোমাদের ব্যাপারে ফেরেস্তাদের সহিত গর্ব করবেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে তোমাদের নেক কাজ দেখাও। ঐব্যক্তি বড়ই হতভাগা যে এমাসেও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। [তারগীব/তাবারানি]

সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাঃ রমযানের পরিপূর্ণ কল্যাণ অর্জনের জন্য যে প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এবং উম্মতকে উৎসাহ প্রদান করছেন। আমরাও নবি কারীম সাঃ এর অনুকরণে উল্লেখিত তিন প্রক্রিয়ায় মাহে রমযানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ও সামাজিক পরিমণ্ডলেও রমযানের বিভিন্ন ফজিলত ও ইতিবাচক দিক আলোচনা করে সকলকে রমযানের পবিত্রতা রক্ষা করতঃ চুড়ান্ত পর্যায়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করি। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস যেন আমাদের মাহে রমযানের প্রস্তুতি গ্রহণে আঘাত হানতে না পারে, সতর্ক থাকি। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দান করুন আমীন।

লেখক: উত্তর আদাবর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মুহাম্মদপুর-ঢাকা

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ