শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আ.লীগ নেতাকর্মীর প্রভাবে নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের সংবর্ধনা বাতিল আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা ইসলামি লেখক ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত, আসছে নতুন কর্মসূচি সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে উত্তপ্ত খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

মর্গ থেকে লাশ হিমাগারে অতঃপর গণকবর

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খান মুফতি মাহমুদ
(প্যারিস, ফ্রান্স থেকে)

‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন’-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী ১৬৯৯৫৯৫ মানুষ কভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ২১৩টি দেশের মধ্যে বেশি সংক্রমিত হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোতে। শুধু আক্রান্ত সংখ্যা দিয়ে ক্ষান্ত হলে কথা ছিল না; মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে, সারি সারি লাশ। যা প্রতি মুহূর্তে গুণতে হচ্ছে, তালিকা করতে হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদের। এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৬১৩৮। যার ইউরোপে মৃতের সংখ্যা ৬৯,২১৩। (তথ্যসূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা—১২/০৪/২০২০।)

গত বছর ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস এখন বিশ্ববাসীর নিকট এক আতঙ্কের নাম। চীনে মৃতের সংখ্যা এপ র্যন্ত ৩৪০০ এর মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনাভাইরাস বা (COVID-19)কে ফেব্রুয়ারি ২০২০ এ বিশ্বমহামারি হিসাবে ঘোষণা দিয়ে ভয়ানক আখ্যা দিয়েছে। পাশাপাশি এর তাণ্ডব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে কিছু দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন বেশ আগেভাগেই। সত্যিকারভাবেই যার ভয়াবহতা আমরা দেখছি পৃথিবীময়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী দুঃখজনকভাবে মৃতের তালিকায় এখনও শীর্ষে রয়েছে ইটালি— ১৯০০০ উনিশ হাজারের কাছাকাছি, এরপর স্পেন— ১৬,০০০ ষোল হাজার, আমেরিকা— ১৬,০০০ ষোল হাজার, ফ্রান্স— ১৩,১৯৭ তেরো হাজার একশত সাতানব্বই, যুক্তরাজ্য— ৯,০০০ নয় হাজারের কাছাকাছি, ইরান— ৪,০০০ চার হাজার, বেলজিয়াম— ৩,০০০ তিন হাজার, হল্যান্ড— ২,৫০০ দুই হাজার পাঁচশ, জার্মানি— ২,৬০০ দুই হাজার পাঁচশ—এ ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে মৃতের সংখ্যা এখনো কম করে হলেও প্রতিদিন তা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ ধরনের লাশের তালিকা প্রকাশ করাও অতি কষ্টের! কিন্তু যা এখন নির্মম বাস্তব। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ অথবা কোনো সামরিক যুদ্ধ ব্যতীত পৃথিবী যেন এক মৃত্যুপুরী।

দেড় যুগ ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছি। যার অর্থনৈতিক, জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসাব্যবস্থা ও সামগ্রিক শক্তি নিয়ে বলা বাহুল্য। সম্ভবত চীন ও ইতালির পর ফ্রান্স সরকার করোনাভাইরাসের বিষয়ে এ দেশের জনগণকে সজাগ করেন ১৪ মার্চ ২০২০-এ।

সে দিন রাত বারোটার পর থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও চিকিৎসা সামগ্রির দোকান ব্যতীত সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্রান্স সরকার ইতিপূর্বেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য। ছোঁয়াচে জাতীয় করোনাভাইরাসটি যাতে সহজেই একজন থেকে অন্যত্র ছড়াতে না পারে সেজন্য অতীব প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের না-হওয়া, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, কর্মজীবী ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা ইত্যাদি। এক কথায় বলতে গেলে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো বলেছেন যে, ‘কোনো ফরাসি না-খেয়ে মরবেন না এবং চিকিৎসার জন্য যা যা দরকার সরকার তা তা করবেন।’ তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, না-খেয়ে কেউ মারা না-গেলেও মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। যা কোথায় গিয়ে থামবে—কেউ অনুমানও করতে পারছেন না। কিন্তু ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন, ফ্রান্সসহ বিশ্বের মহা চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ থমকে আছেন বধির হয়ে, অনেকটা রোবটের ন্যায়। তাঁদের চেষ্টার কমতি নেই, কিন্তু সফলতার পাতা ধবধবে সাদা কাগজের মতো।

শুধু লাশ আর লাশ। লাশ সমাধির পূর্বে তা সংরক্ষণের জায়গা মিলছে না নির্ধারিত মর্গগুলোতে। ফ্রান্সের মতো দেশে খাদ্যসামগ্রীর হিমাগারগুলোকে ব্যবহার করতে হচ্ছে লাশ সংরক্ষণের জন্য। (তথ্যসূত্র : বিএফএফ টিভি ও সি নিউজ টিভি।) কার লাশ কোথায় আছে তা জানতে পারছেন না নিকটজনরা। কবেইবা তা সমাধস্থ করা যাবে, তাও অজানা।

বিশ্ব সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ড্রোনে ধারণ করা ছবি বা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের প্রথম সারির শক্তিশালী দেশ আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্য ব্যক্তিদের লাশ গণকবর দেওয়া হচ্ছে। এসব মর্মান্তিক ঘটনায় থমকে গেছে পৃথিবী। বেঁচে থাকার আশায় যেন ‘ইয়া নাফছি, ইয়া নাফছি’ করছে বিশ্বের অসহায় মানুষগুলো।

ফ্রান্স ভাষায় ‘কনফিনম্’ বা ঘড়বন্দি, লকডাউন অথবা কারফিউ—যে ভাষায় বলি না-কেন, যার দ্বারা দাপুটে পৃথিবীর সচলতাকে এই মুহূর্তে অনেকটা অচলই বলা চলে। সমগ্র বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ঘড়বন্দি। রাস্তাঘাট ফাঁকা। শুনশান নীরবতা। প্যারিস-নিউইয়র্ক, লন্ডন-বার্লিন, নরোম-মাদ্রিদ, সিডনি-টোকিও, ঢাকা কিংবা দিল্লি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের পবিত্র ভূমিগুলোও এখন এক মহা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। যা মানুষে মানুষে নয়, সমরাস্ত্রের ঝনঝনানি নয়, আর্থিক শক্তির বড়াই নয়; শুধুই বাঁচার জন্য লড়াই। নিজেকে নিয়ে, নিজেদের নিয়ে। কে বাঁচাবে আমাদের? এ ধরণীর মহান সৃষ্টিকর্তা, লালন-পালনকর্তা, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। যার যখন, যেভাবে, যেখানে মৃত্যু অথবা সুস্থতা—তিনি যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, তাই-ই হবে। স্রষ্টায় বিশ্বাসীগণ তাই মনে করেন। মহান আল্লাহর নিকট আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মাফ করে দাও ।

ইসলামে শেখানো পদ্ধতিতে দোয়া পাঠ করে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে পারি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুযায়ী দাওয়াই বা ওষুধসহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের সেবা নিতে হবে ও অন্যকে সাহায্য করতে হবে। যার সবকিছুই হবে মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায়। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো বিধি-নিষেধসমূহ মানা থেকেও বিছিন্ন হব না আমরা।

যেমন—লকডাউন অবস্থায় থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিশেষ প্রয়োজনে চলার ক্ষেত্রে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখা, হ্যান্ডশেক থেকে বিরত থাকা, হাত দিয়ে যেকোনো কাজ বা কিছু স্পর্শ করার পর ভালো করে হাত ধোয়া। পৃথিবীব্যাপী সরকারগুলোর ঘোষিত নিয়মনীতি যার যার দেশ ও অবস্থান অনুযায়ী আমাদের অবশ্যই পালন করতে হবে। সকল জাতি ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাঁদের ধর্মীয় অনুশাসন পালনের ক্ষেত্রেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থাসমূহ মেনে চলতে হবে ।

পরিশেষে বলব, কষ্ট করে হলেও কয়েকটা দিন ঘরে থাকুন, ঘরে রাখুন। নিজে সচেতন হোন। অন্যকেও সচেতন হতে উৎসাহিত করুন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ