শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বিমল চরিত্র গঠনে ইসলামের নির্দেশনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

চরিত্র হচ্ছে ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ প্রকৃতি। মানুষের দু'টি প্রকৃতি রয়েছে। ১. বাহ্যিক প্রকৃতি। এটি হলো, আল্লাহ তায়ালা তাকে যেই শারীরিক গঠন এবং অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। ২. আভ্যন্তরীণ প্রকৃতি। এটিকেই বলা হয় খুলুক কিংবা চরিত্র।

আচরণ কি স্বভাবজাত নাকি অর্জিত। সদাচরণ কি মানুষের স্বভাবজাত নাকি এটিকে অর্জন করা যায়? উত্তর হলো, দুটোই।

নবি সা. একবার আশহাজ ইবনুল কাইস রা. কে বললেন, তোমার মধ্যে দু'টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আল্লাহ তা'য়ালা ভালোবাসেন। সেগুলো হলো- ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল!

এগুলো কি আমার অর্জিত বৈশিষ্ট্য নাকি আল্লাহ তা'য়ালা আমাকে সৃষ্টিগতভাবেই এগুলো দান করেছেন? তিনি সা. উত্তর দিলেন, না, বরং আল্লাহ তা'য়ালা এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়েই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'য়ালার যিনি আমাকে এমন দু'টি বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহ তা'য়ালা ও তাঁর রাসূল সা. ভালোবাসেন। সুনানে আবু দাউদ ৫১৮৩

স্বভাবজাত সদাচরণ আক্ষরিক অর্থে অর্জিত সদাচরণের তুলনায় উত্তম। কারণ স্বাভাবিকভাবে স্বভাবজাত সদাচরণ ব্যক্তির সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য যা তাকে কষ্ট করে অর্জন করতে হয় না; বরং এটা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নেয়ামত যা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। তবে সৃষ্টিগতভাবে যাকে সচ্চরিত্রের এই বিশেষ নেয়ামতটি দেয়া হয়নি, তাকে অবশ্যই অনুশীলন এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সুন্দর চরিত্র গঠনে সচেষ্ট হতে হবে।

যে উত্তম চরিত্র অর্জন করার জন্য চেষ্টা করে এবং নিজেকে পরিশোধিত করে, সে অবশ্যই তার চেষ্টা ও সাধনার জন্য পুরস্কৃত হবার যোগ্য।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, আমি উত্তম নৈতিক চরিত্রকে পুর্ণাঙ্গ করবার জন্যই প্রেরিত হয়েছি। - মুসনাদে আহমদ ২/৩৮১।

সদাচরণ শুধুমাত্র লৌকিক মিথস্ক্রিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। মানুষকে যেমনিভাবে সৃষ্টিজীবের সাথে সদাচারী হতে হয়, তেমনিভাবে তাকে স্রষ্টার সাথেও সদাচারী হতে হবে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে সদাচরণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- স্রষ্টার সাথে সদাচরণ। সৃষ্টিজীবের সাথে সদাচরণ। স্রষ্টার সাথে সদাচরণ

এ বিষয়টিতে তিনটি অপরিহার্য দিক রয়েছে। ১. আল্লাহ তা'য়ালা যাই বলেছেন তাই বিশ্বাস করা। ২. আল্লাহ তা'য়ালার সকল আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করা। ৩. আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়গুলি ধৈর্য্য সহকারে মেনে নেওয়া। ১. আল্লাহ তা'য়ালা যাই বলেছেন তাই বিশ্বাস করা।

আল্লাহ তা'য়ালা যাই বলেছেন তাই বিশ্বাস করা মানে হলো তিনি যা বলেছেন তা বিনা বাক্যব্যয়ে বিশ্বাস করা এবং উক্ত বিশ্বাসে কোনোরূপ সন্দেহ না রাখা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- কথা বলার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা'য়ালার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? - সূরা নিসা ৮৭

২. আল্লাহ তা'য়ালার সকল আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন করা। অহংকার করে হোক অথবা আলসেমির কারণে হোক কোনো অবস্থাতেই আল্লাহ তা'য়ালার কোনো আদেশ উপেক্ষা করা যাবে না। কেননা এটা স্রষ্টার সাথে সদাচরণের বিপরীত।

উদাহরণস্বরূপ রোজার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। রোজা রাখাটা বান্দার জন্য কষ্টকর। কারণ এতে তাকে এমন কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় যেগুলোতে সে অভ্যস্ত। কিন্তু কষ্ট হলেও বান্দা আল্লাহ তা'য়ালার আদেশ পালনার্থে রোজা রাখে। কেননা সে স্রষ্টার সাথে সদাচরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

৩. আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়গুলি ধৈর্য্য সহকারে মেনে নেওয়া এটিই হলো তাক্বদীরে বিশ্বাস। স্রষ্টার সাথে সদাচরণের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো আল্লাহ তা'য়ালা কর্তৃক নির্ধারিত সবকিছু ধৈর্য্য সহকারে মেনে নেওয়া এবং সর্বাবস্থায় তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা।

উদাহরণস্বরূপ অসুস্থতা কিংবা দারিদ্র্যের কথা ধরা যেতে পারে। এ ব্যাপার দু'টিকে কেউই চায় না। সকলেই চায় সর্বদা সুস্থ থাকতে, সচ্ছল থাকতে। তবে কখনো যদি কেউ অসুস্থতায় আক্রান্ত হয় অথবা দারিদ্রের সম্মুখীন হয়, তখন তার উচিত হবে ধৈর্য্য এবং বিনম্রচিত্তে তা মেনে নেওয়া। কারণ যখনই আল্লাহ তা'য়ালা কাউকে কোনো বিপদ দেন, তার পরই তার জন্য কোনো না কোনো আনন্দের সংবাদ থাকে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- ঐ সমস্ত ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দিন যারা কোনো বিপদে নিপতিত হলে বলে: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর; তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন)। - সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৬।

সৃষ্টিজীবের সাথে সদাচরণ সৃষ্টিজীবের সাথে সদাচরণকে স্কলারগণ তিনটি ধারায় সংজ্ঞায়িত করেছেন। যথা- ১. অন্যের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকা। ২. অপরের মঙ্গল সাধন করা। ৩. সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকা।

১. অন্যের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকা অন্যের ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকা বলতে অপরের জান, মাল ও ইজ্জত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো কাজ না করা বোঝায়। বিদায় হজের সময় রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, তোমাদের নিকট এই দিন, এই মাস এবং এই শহর যেমন পবিত্র, তোমাদের জন্য অপরের জান, মাল ও ইজ্জত তেমনি পবিত্র। - সহীহ বুখারী ১৭৩০-১৭৪২।

২. অপরের মঙ্গল সাধন করা সৃষ্টিজীবের সাথে সদাচরণের দ্বিতীয় দিকটি হলো, সদা অন্যের হিত সাধনে ব্রতী হওয়া। অপরের কল্যান সাধন করা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক সাহায্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং যদি কেউ কারো যত্ন নেয়, কাউকে তার কাজে সাহায্য করে, কারো চরিত্রের প্রশংসা করে, কাউকে ভালো কিছু শেখায় - এ সবকিছুই পরহিত সাধনের অন্তর্ভুক্ত।

রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তা'য়ালাকে ভয় করো। কোনো খারাপ কাজ করার সাথে সাথেই একটি ভালো কাজ করে ফেলো। কেননা ভালো কাজটি খারাপ কাজটিকে মিটিয়ে দেবে। আর অপরের সাথে সদাচারী হও। -তিরমিযী ১৯৮৭

৩. সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকা। তৃতীয় ধারাটি হলো মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলা, সহাস্য বদনে অভিবাদন জানানো। কারো সাথে ভ্রূ কুঁচকে কথা না বলা। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, কোনো ভালো কাজকেই ছোট করে দেখো না। এমনকি যদিও এটা তোমার মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে দেখা করাও হয়। - সহীহ মুসলিম ২৬২৬।

সুন্দর চরিত্রের নিদর্শন। কোনো ব্যক্তির সদাচারী হওয়ার অন্যতম নিদর্শন হলো, তার সাথে সহজেই মেশা যায়। তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন সহজেই তার কাছে ঘেঁষতে পারে। সে সর্বদা সবকিছুকে সহজ করে উপস্থাপন করে। আল্লাহ তা'য়ালার গণ্ডির মধ্যে থেকে সে সবসময় অপরের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। তবে কাউকে খুশি করতে গিয়ে যদি আল্লাহ তা'য়ালার বিরুদ্ধাচরণ করতে হয়, তবে তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যের সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না।

ইসলামী শরীয়তের মধ্যে থেকে অন্যের জীবনে আনন্দ বয়ে আনা নিশ্চয়ই একটি ভালো কাজ এবং সচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। নবীজী সা. বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। এবং আমি আমার পরিবারের নিকট উত্তম। - ইবনে মাজাহ ১৯৭৭

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেকেই বাইরের লোকজনের সাথে ভালো আচরণ করে, কিন্তু ঘরের লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করে না। এটা একটা চরম ভুল। যে ব্যক্তি তার নিকটবর্তীদের সাথে সদাচরণ করে না, সে কী করে দূরের আত্মীয়ের সাথে সদাচরণ করবে?

মোট কথা, কেউ যদি তার অসচ্চরিত্রের কুফল অনুধাবন করতে পারে, তাহলে তার জন্য সুন্দর চরিত্র গঠন করা সহজ হয়ে যায়। কেননা, অসচ্চরিত্রের লোকেরা সর্বদাই ঘৃণিত ও পরিত্যাজ্য। সেই পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী যার চরিত্র সর্বোত্তম। - সুনানে আবু দাউদ ৪৬৪৪।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ