ফরহাদ খান নাঈম।।
নিজেদের ঈমান, তাওয়াক্কুল এবং ধৈর্য্য রাখতে নিম্নোল্লিখিত ৮টি নির্দেশিকা মনে রাখা অতীব জরুরি।
১. মুসিবতের সাথেই রয়েছে পুরস্কার
উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে মহামারী সম্পর্কে জানতে চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, মহামারী হলো আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে একটি শাস্তি, তবে মু'মিনদের জন্য এটি রহমতস্বরূপ।
মু'মিনদের মধ্য থেকে যারাই মহামারী কবলিত এলাকায় ধৈর্য্য ধারণ করে অবস্থান করে এবং এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তা'য়ালা তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, তা-ই সে ভোগ করবে, আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে শহীদী মর্যাদা দান করবেন। - সহীহ বুখারী: ৫৭৩৪
২. যে কোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা'য়ালার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট না হওয়া
যখন কোনো মু'মিনের ঘনিষ্ঠজনদের কেউ বিপদ কিংবা রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তার উচিত উক্ত পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা'য়ালার সিদ্ধান্তে নাখোশ না হওয়া। যেকোনো দুর্যোগে মুসলমানের একমাত্র হাতিয়ার হলো ধৈর্য্য ধারণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি মেনে নিয়ে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে দুয়া করতে থাকা।
৩. নবি আ. দের জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া
বিপদে আপদে মু'মিনের উচিত নবী-রাসূল আ. ও তাঁদের সহচরদের উপর আপতিত মুসীবতগুলো স্মরণ করা এবং কঠিন মুহূর্তে তাঁদের তাওয়াক্কুলের দৃঢ়তা থেকে শিক্ষা নেওয়া। হতাশা, দুশ্চিন্তা ও আত্মগ্লানি থেকে নিজেদেরকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় হলো সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা'য়ালার উপর ভরসা করা।
৪. অধিক কবলিত লোকদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা
আমাদের চারপাশে সর্বদাই এমন লোক থাকে যারা আমাদের চেয়েও বেশি বিপদগ্রস্ত। আমাদের মনে রাখা উচিত, আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর বান্দাদের কখনোই বিপদে ফেলে রাখেন না।
৫. আল্লাহ তা'য়ালার নিকটবর্তী হওয়া
বিপদে আপদে আমাদের উচিত আমাদের রবের দিকে ফিরে যাওয়া। দুর্যোগ আমাদেরকে আমাদের হারিয়ে ফেলা পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। অনেক সময়ই আমরা সুন্নাতের কথা বলে বেড়াই, কিন্তু নিজেদের জীবনে তার বাস্তবায়ন করি না। কোনো এক সময় হয়তো আমরা আল্লাহ তা'য়ালার কাছে নিয়মিত প্রার্থনায় মশগুল থাকতাম, কিন্তু দুনিয়াবি ব্যস্ততার কারণে এখন আর তা হয়ে ওঠে না। একজন মু'মিন দুর্যোগময় মুহূর্তকে আল্লাহ তা'য়ালার নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ হিসেবে মনে করে।
৬. পার্থিব মুসিবত বনাম আখিরাত
একজন মুসলিম নিঃসন্দেহে আখিরাতের মুসিবতের চেয়ে পার্থিব বিপদ আপদকেই অধিক পছন্দ করে। কেননা দুনিয়াবি বিপদ আপদ হলো আখিরাতের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়া ও বিপুল সওয়াব হাসিল করার একটি অন্যতম মাধ্যম।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যখন আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর কোনো বান্দার কল্যান কামনা করেন, তিনি তাকে দুনিয়ায় বিপদগ্রস্ত করেন। কিন্তু যখন আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর কোনো বান্দার অকল্যান চান, তিনি দুনিয়ায় তাকে ছাড় দেন এবং আখিরাতে তাকে হিসাবের সম্মুখীন করেন। - ইমাম তিরমিযী রহ. এটিকে হাসান হাদীস হিসেবে গণ্য করেছেন।
৭. আল্লাহ তা'য়ালার ক্ষমা অর্জন
আল্লাহ তা'য়ালা বলেন-
"নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো সেই মহাশাস্তির পূর্বে যাতে করে তারা (আমার দিকে) ফিরে আসে।" - সূরা সাজদাহ: ২১
ইবনে কাছীর রহ. উল্লেখ করেন, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, উক্ত আয়াতে লঘু শাস্তি বলতে এই দুনিয়ার বিপদ-আপদ এবং রোগ-বালাইকে বোঝানো হয়েছে। আর পৃথিবীতে মানুষের প্রতি যেই বিপদই আসুক না কেনো তা হলো আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ যাতে করে মানুষ আল্লাহ তা'য়ালার দিকে ফিরে আসে।
৮. আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা
মু'মিন যখন কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, তখন সে তার উপর আল্লাহ তা'য়ালার অগণিত নেয়ামত বুঝতে পারে যা অগ্রাহ্য করার কারণে আজ এই বিপদ নেমে এসেছে। সুতরাং একজন মু'মিনের উচিত সর্বদাই আল্লাহ তা'য়ালাকে স্মরণ করা ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
মুসলিম ইংক থেকে ফরহাদ খান নাঈমের অনুবাদ।
-এটি