শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে পরাজিত শক্তি: চরমোনাই পীর ‘শিক্ষা কমিশনে দেশের সর্বমহলে শ্রদ্ধেয় আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে’ আলমডাঙ্গায় রাসূল (সা.)-কে নিবেদিত কবিতা পাঠ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণকারী শাহবাগ থানা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেফতার পার্বত্য জেলায় চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জানাল আইএসপিআর ঢাবিতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারলে দায় বর্তাবে ইহুদিদের ওপর: ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বিপদে ধৈর্যধারণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মিজান রেহমান

বর্তমান বিশ্বে মানবসমাজ এমন একটা সময় অতিবাহিত করছে,যেখানে 'সবরের' বিকল্প নেই।কেননা, করোনা ব্যাধিতে আজ বিশ্বসমাজ ধৈর্যহীন হয়ে পড়ছে।কে কাকে বুঝাবে যে,'এই ব্যাধি সেরে উঠবে আপনারা একটু ধৈর্য ধরুণ।

তবে আমাদের সবারই জানা আছে যে,ইসলাম শান্তি,নিরাপত্ত ও মানবতার কল্যাণকর ধর্ম এবং সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা।যা সর্বকালে সকল মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।যুগে যুগে মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের বিভিন্ন ভাবে তিনি পরিক্ষা করে থাকেন,তিনি দেখতে চান যে, তার বান্দারা তেমনি ভাবে এই পরিক্ষায় কত নম্বর পেয়ে নিজেকে পূর্ণ করতে পারে নাকি ধৈর্যহারা হয়ে আশা ও ভয় ত্যাগ করে বসে।আল্লাহ তায়ালা হয়রত ইউনুস (আ:)র মত ধৈর্যহারা হতে নিষেধ করেছেন,পবিত্র কুরআনে এসেছে,অতএব রবের ফায়সালা আসা পর্যন্ত সবর অবলম্ব করো এবং মাছওয়ালা ইউনুসের মতো(অধৈর্য) হয়োনা'-(সুরা কলম:৪৮)। কারণ বিপদে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

সবর শব্দের অর্থ সংযম অবলম্বন করা,বিপদে ধৈর্য ধারণ করা।পবিত্র কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় 'সবর' তিনটি শাখা রয়েছে,ক.নফসকে হারাম ও না-জায়েজ বিষয়াদি থেকে বিরত রাখা,খ.ইবাদত ও আনুগত্যে বাধ্য করা এবং গ.যে কোন বিপদ ও সংকটে ধৈর্যধারণ করা অর্থাৎ যে সব বিপদ-আপদ এসে উপস্থিত হয় সেগুলোর আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেওয়া এবং বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা রাখা।আল্লাহ তায়ালা বলেন,'হে মু'মিনগণ!

তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন-(সুরা বাকারাহ:১৫৩) বর্ণিত আছে,নবী করিম (স.) এর পবিত্র অভ্যাস ছিল যে,যখনই তিনি কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন,তখনই তিনি নামায শুরু করতেন।আর আল্লাহ তা'য়ালা সে নামাযের বরকতেই তাঁর যাবতীয় বিপদ দূর করে দিতেন।প্রকৃতপক্ষে সর্বপ্রকার ইবাদতই সবরের অন্তভুর্ক্ত।

অন্য হাদীসে এসেছে,'নবী করিম (সা.) বলেছেন,মুমিন নর-নারীদেন উপর সময় সময় বিপদ ও পরীক্ষা এসে থাকে।কখনো সরাসরি তার উপর বিপদ আসে।কখনো তার সন্তান মারা যায়।আবার কখনো তার ধন-সম্পদ বিনষ্ট হয়।আর সে এসকল মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করার ফলে তার কালব পরিস্কার হতে থাকে এবং পাপ হতে মুক্ত হতে থাকে।অবশেষে সে নিস্পাপ আমলনামা নিয়ে আল্লাহর সাথে মিলিত হয়-(তিরমিযী)।কুরআনে এসেছে,"এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়,ক্ষুধা,মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে।তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের-(সুরা বাকারাহ:১৫৫)।

সবরের মাধ্যমে শিক্ষা নিয়ে আমাদের কঠিন হাশরের পাথেয় অর্জন করতে হবে।আর এই পাথেয়টা অর্জন হবে ইসলামি শরীয়হ'র প্রকৃত এবং পরিপূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে।মানুষ শরীয়হ'র অনুসরণে ব্যর্থ হয় বলে সমাজে,দেশে এবং পৃথিবীতে মহামারি সৃষ্টি হয়ে থাকে।এগুলো থেকে মুক্তি জন্য যেমন সবরের প্রয়োজন তেমনি সঠিকভাবে শরীয়হ'র আমল করা প্রয়োজন।

সাথে সরকার এবং ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলা নিজ নিজ কতর্ব্য।হাদীসে এসেছে,'একবার নবী করিম (সা.) এক ভাষণে ইরশাদ করছেন,হে মুহাজেরিন দল,পাঁচটি অভ্যাসের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তায়ালা নিকট পানাহ চাই,সেগুলো যেন তোমাদের মধ্যেও সৃষ্টি না হয়ে যায়।

তার একটি হলো অশ্লীলতা।কোন জাতি মধ্যে যখন অশ্লীলতা বিস্তার লাভ করে,তখন তাদের মধ্যে প্লেগ ও মহামারীর মত এমন নতুন নতুন ব্যাধি চাপিয়ে দেওয়া হয়,যা তাদের বাপ-দাদারা কখনো শোনেনি।দ্বিতীয়ত:যখন কোন জাতির মধ্যে মাপ-জোঁকে কারচুপি করার রোগ সৃষ্টি হয়,তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষা,মূল্যবৃদ্ধি,কষ্ট-পরিশ্রম এবং কর্তৃপক্ষেঙর অত্যাচার নিপীড়ন চাপিয়ে দেওয়া হয়।তৃতীয়ত:যখন কোন জাতি যাকাত প্রদানে বিরত থাকে,তখন বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

চতুর্থত: যখন কোন জাতি আল্লাহ ও রাসূল (সা.) এর সাথে কৃত শপথ ভঙ্গ করে,তখন আল্লাহ তাদের উপর অজ্ঞাত হিংসা চাপিয়ে দেন।সে তাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেয়।আর পঞ্চমত:কোন জাতির শাসকবর্গ যখন আল্লাহর কিতাবের আইন অনুযায়ী বিচার-মীমাংশা পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক নাযিলকৃত হুকুম-আহকাম তাদের মনঃপূত হয় না,তখন আল্লাহ তা'য়ালা তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করে দেন-(ইবনে-মাজাহ,বায়হাকী,হাকেম)।

পরিশেষে,ভয় ও আশার মধ্যামে মহান আল্লাহকে ডাকতে হবে এবং জীবনের কোন অবস্থায় ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না।মহান আল্লাহ তায়ালা যাতে সমগ্র বিশ্বকে এই মহামারি থেকে মুক্তি দান করেন।আমিন।

তথ্যসূত্র: ক.তাফসীরে মা'আরেফুল কুরআন,১ম খন্ড,প্রকাশনায় ইফা। খ.কুরআন ও হাদীস সঞ্চয়ন-অধ্যাপক মাওলানা আতিকুর রহমান ভূঁইয়া।

লেখক: প্রাবন্ধিক।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ