সুফিয়ান ফারাবী।।
বিশেষ প্রতিবেদক>
করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা। নানাভাবে সমস্যায় পতিত তারা। অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটানো মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আর্থিক সংকটে পুরো দেশ। এই পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ মাদরাসার শিক্ষকদের জানানো হয়েছে, আগামী তিন মাসের বেতন তারা পাবেন না। এতে কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জীবন যাপন। দাবি উঠেছে, সরকারিভাবে অথবা বোর্ড যেন শিক্ষকদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রধান ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ মনে করছেন, মাদরাসার শিক্ষক ও ইমাম-মুয়াজ্জিনরা নিম্নআয়ের মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। এই মুহূর্তে তাদেরকে সহযোগিতা করা জরুরি। এক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এবং আল-হাইয়াতুলুলিয়া জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে।
শীর্ষ এই আলেম বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক পরিমাণ টাকা ব্যয় করে থাকে। সে অনুযায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। দুর্যোগের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের জন্য কঠিন কিছু হবে না।’
কী বলছে আল-হাইআতুল উলয়া? সংস্থাটির কো-চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস বলছেন, দেশে দুর্যোগের সময় চলছে। কেউ কোথাও বের হতে পারছে না। ব্যাপক যোগাযোগের সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে বোর্ডের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে না। বিষয়টি নিয়ে পরে ভাবা যেতে পারে।
আল-হাইআতুল উলয়া বা বেফাক এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি পরে দেখা যেতে পারে। এখন সবকিছু বন্ধ। বেফাক, আলহাইয়ার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত। তাই এ বিষয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে অনুদানের বিষয়টিও একই রকম। এই বিষয়গুলো পরে বিবেচনা করা যেতে পারে। আপাতত সকল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় বিষয়গুলো নিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না।’
কওমি মাদরাসার জন্য নিজস্ব ফান্ড তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। তিনি বলেন, দুর্যোগের পরিস্থিতিতে এ নিয়ে কাজ করার সুযোগ কম। পূর্ব থেকে কোনো চেষ্টা, তৎপরতা থাকলে এখন কাজটি আরও সহজ হয়ে যেত।
সরকারি কোনো দান অনুদানের বিষয়টি হঠাৎ করে হয় না। তাই কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের জন্য বোর্ডের অধীনে একটি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা যেতে পারে। যেখান থেকে দুর্যোগকালে শিক্ষকদের সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে। এছাড়াও শিক্ষকদের নানা সমস্যায় যেন এগিয়ে আসতে পারবে। এর জন্য সর্বপ্রথম কওমি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে একটি ট্রাস্ট গঠন করা জরুরি।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মতো কওমি শিক্ষকদের জন্য সরকারি অনুদান কেন নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে মাওলানা নদভী বলেন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা দেশ পরিচালনায় ব্যাপক অর্থায়ন করে থাকে। তাদের মাধ্যমে দেশ সারা বছর অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। তাই সরকার আপৎকালে তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কওমি শিক্ষকদের ভূমিকা সরকারের কাছে একটু ভিন্নরকম।
-এটি