শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


করোনায় করণীয় অনুসরণে জবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আহ্বান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব ও দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশবাসী ও মুসল্লিদের প্রতি বিবৃতি দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৬ জন শিক্ষক। শুক্রবার বিভাগের ফেসবুকে তারা এই বিবৃতিটি পোস্ট করেন।

বিবৃতিতে দেশবাসী ও মুসল্লিদের উদ্দেশে তারা বলেছেন, ‘আপনারা অবহিত আছেন যে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো মানব সভ্যতা আজ মহাবিপর্যয়ের সম্মুুখীন। চীন, ইতালি, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলো বিশ্বপরিমণ্ডল থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে। পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু সৌদি আরবের পবিত্র হারামাইনে সর্বশেষ জুমা ও মসজিদের জামাত আদায় সর্বসাধরণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মিশর, কুয়েত, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের সর্বত্র একই অবস্থা। সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবাই সচেতন না হলে কেবল সরকারের পক্ষে করোনা বিপর্যয় থেকে জাতিকে সুরক্ষা দেয়া অত্যন্ত দুরূহ হবে বলে আমরা মনে করি।’

‘আমাদের দেশ ও জাতিকে সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি থেকে সচেতন করতে প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আমরা এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছি এবং সামনে আরও কঠিনতম সময় আসতে পারে। এমতাবস্থায় ইসলামি শরিআর উদ্দেশ্য (মাকাছিদ) অনুযায়ী জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ধর্ম, বুদ্ধি-বিবেক, সম্পদ ও বংশের সুরক্ষা দিতে হবে। অভিজ্ঞমহল কর্তৃক এ পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব (ভাইরাস ছড়ায় এ রকম বিষয়কে এড়িয়ে চলা) নিশ্চিতকরণ প্রাথমিক অত্যাবশ্যক করণীয় নির্ধারণ করার প্রেক্ষাপটে আমরা জাতিকে তা সর্বক্ষেত্রে অনুসরণের আহ্বান জানাই। ইসলামে জুমার বিকল্প থাকায় সামাজিক দূরত্ব রেখে ধর্মীয় ইবাদত পালন সম্ভব। নামাজ বাসগৃহে জামাতবদ্ধ হয়ে পড়ার সুযোগ থাকায় জরুরি কারণে মসজিদে অনুপস্থিতির সুযোগ থাকছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সময় চলে যাবে এবং সুদিন আসবে।’

Syesta20-Mowdud

‘কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়-ই কঠোরতার পর প্রশ্বস্ততাও রয়েছে” (সূরা ইনশিরাহ : ৫)। মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের ধব্বনিতে আবার মসজিদের সারিগুলো মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হবে, ইনশাআল্লাহ। পরিস্থিতি বিবেচনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াহি ওয়া সাল্লাম কাদা মাড়িয়ে মসজিদে না আসার অনুমতি দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু অনিবার্যকারণে বাসগৃহ ও অবস্থানস্থলে নামাজ পড়ার তাগিদ দিতে সাময়িকভাবে আজানের দুয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করেছিলেন (বুখারী, ৬৬৬; মুসলিম,৬৯৭)। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াহি ওয়া সাল্লাম উতবান ইবন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহুর বাড়িতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট স্থানে নামাজ পড়ে এসেছেন যাতে তিনি ওই স্থানে নামাজ পড়তে পারেন (বুখারী, ৪১৫)।’

‘আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে হাদিস ও সিরাতের এসব ঘটনাবলি উপস্থাপনের জন্য প্রাজ্ঞ আলেম সমাজকে আহ্বান জানাই। জাতির এ দুর্যোগের মুহূর্তে প্রাজ্ঞ আলেম সমাজ বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে আলেম সমাজের বার্তা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। সর্বশেষ একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রীও এরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। আলেম সমাজ তাদের করণীয় নির্ধারণ করে জাতিকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। প্রত্যাশা করি, এর ফলে জনগণ জুমা, মসজিদে জামাত, ধর্মীয় জনসমাগমসহ হাট-বাজার, খেলার মাঠ, ভ্রমণকেন্দ্র, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি স্থানে সামাজিক দূরত্বকে নিশ্চিত করবে।’

‘প্রিয় দেশবাসী! এমতাবস্থায় ইসলামের মহান শিক্ষা ও নৈতিকতা ধারণ করে আপনার পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রতি মনোযোগী হোন। অতি দ্রুত আল্লাহর রহমতের মাস রমজান এসে পড়বে। পরিস্থিতির কারণে কালোবাজারি ও মওজুদদারি বিষয়ে সংযমী হোন ও কাছের লোকদের সতর্ক করুন। আমরা মনে করি, এ ভয়ঙ্কর মহামারি থেকে একমাত্র মহান আল্লাহ-ই আমাদের রক্ষা করতে পারেন। তাই আল্লাহর নিকট চোখের পানি ঝরিয়ে তওবা, ক্ষমা প্রার্থনা, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনার আহ্বান করছি। আপনাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত দোয়া পড়ার অনুরোধ করছি।’

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ