বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৮ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


টাকার গরমে বক্তা বাছাই: কী বলছেন আলেমরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক>

ওয়াজ মাহফিলের আয়োজক কমিটির প্রধান লক্ষ্য থাকে, অধিক পরিমাণ শ্রোতা আকৃষ্ট করা। এর জন্য তারা খ্যাতিমান বক্তার মাধ্যমে মাহফিল করিয়ে থাকেন। যত কষ্টই হোক না কেন, প্রয়োজনে টাকার অংক বাড়িয়ে হলেও বক্তাদেরকে আনতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মাহফিল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ।

এ প্রতিযোগিতায় বক্তাদের পূর্বনির্ধারিত ডেট ক্যানসেল করতেও টাকার প্ররোচনা দেন তারা। অনেক বক্তা আবার সেই ফাঁদে পা দেন। আয়োজকদের দাবি, শ্রোতাদের চাহিদা অনুযায়ী বক্তা না আনা হলে শ্রোতাদের উপস্থিতি কম হয়।

উত্তরার বাইতুল মুমিন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি নেয়ামত উল্লাহ আমিন রেললাইনের পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মাঠে প্রতিবছর ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন। তার মতে, ওয়াজ মাহফিলের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে আয়োজকদের এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করা উচিত।

তিনি বলেন, কতিপয় আয়োজকদের টাকার গরম দেখে, এই সুযোগের অপব্যবহার করেন বক্তারাও। কখনো কখনো তাদের সিডিউল থাকে না। কিন্তু টাকার অংক দেখে তাদের চোখ বড় হয়ে যায়। এ সময় তারা অন্য জায়গায় নির্ধারিত মাহফিলের তারিখের কথা আর মনে করে না। আমার মাহফিলেও কয়েকবার এরকম হয়েছে। বক্তারা পূর্বে তারিখ দিয়ে হঠাৎ করে নানা অজুহাতে প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে দেন।

‘আয়োজকরা চিন্তা করেন নামকরা বক্তা দিয়ে ওয়াজ করাতে পারলে যেহেতু জনসমাগম বেশি হয়, তাই তাদেরকে দিয়েই মাহফিল করাতে হবে। এর কারণে কখনো কখনো আয়োজক কমিটির উপর অতিরিক্ত প্রেসার পড়ে। একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! এই সমস্যা থেকে উত্তরণ হতে হবে।’ বলেন মুফতি নেয়ামত উল্লাহ আমিন।

বারিধারার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক বলছেন, ওয়াজ শব্দের শাব্দিক আরেকটি অর্থ হচ্ছে নসিহত। মাহফিলের বাহ্যিক চাকচিক্য, শ্রোতাদের ব্যাপক উপস্থিতি, নামকরা বক্তার মাধ্যমে মাহফিল পরিচালনা এ বিষয়গুলো কোনোটিই আল্লাহর কাছে পৌঁছাবে না। আল্লাহ মানুষের হৃদয়ের অবস্থাটাই খেয়াল করেন।

তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে যদি মানুষের ধর্মীয় ও মানবিক উন্নয়ন হয় তখনই ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন ও ভক্তবৃন্দ সফল। অন্যথায় তাদের সকলের প্রচেষ্টা বিফল। এজন্য বক্তা এমন হওয়া চাই, যার কথার মাধ্যমে মানুষের ভেতর অবৈধ কাজের ঘৃণা তৈরি হয়, বিজাতি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়।

‘আর আয়োজক কমিটি এমন হতে হবে, যাদের মাহফিল নিয়ে কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্য থাকবে না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভই প্রধান এবং একমাত্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য না থাকলে সেই প্রোগ্রামটি কেবল একটি অনর্থক সমাবেশের মত। এজন্য আমাদের প্রতিটা কাজের মধ্যে ইখলাস তৈরি করতে হবে।’ বললেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ