চীনে আক্রান্ত হওয়ার পর বিশ্বের ১০৪ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১ লাখ ৭ হাজার ৭৩৬ জন। মারা গেছে ৩ হাজার ৬৬১ জন। দিন দিন নতুন নতুন দেশ যুক্ত হচ্ছে করোনা আক্রান্তের তালিকায়। সবশেষ রোববার (৮ মার্চ) বাংলাদেশেও তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য দেশের আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কী কী সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলছেন তারা। এ বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের ডা: আজিজা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।
আওয়ার ইসলাম: প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য দেশের আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
ডা: আজিজা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান: প্রথমত আমি বলব, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কোন কারণ নেই। করোনা ভাইরাসের মতো আরও অন্যান্য ভাইরাস মাঝেমধ্যেই আমাদের আক্রমণ করে। সুতরাং, আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের ব্যক্তিগত হাইপিংটা কন্ট্রোল করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ঘরে ঘরেই ঠাণ্ডা-কাশি লেগে আছে, সব ঠাণ্ডা-কাশিই যে করোনা ভাইরাস এটা না।
তবে একটু নিয়ম মেনে চলতে হবে। কাঁশি দেওয়ার সময় হাতটা মুখ থেকে দূরে রাখতে হবে। সবসময় কাছে টিস্যু পেপার রাখতে হবে। যখন হাঁচি-কাশি দেবে তখন টিস্যু ব্যবহার করবে এবং তা ফেলে দেবে। একই টিস্যু দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যাবে না। সাবান দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফেনা করে ভালোভাবে হাতটা পরিষ্কার করতে হবে। হাত পরিষ্কার রাখার জন্য বাজারে সেনিটাইজ পাওয়া যায়, সবসময় কাছে রাখা এবং সেগুলো ব্যবহার করা।
আওয়ার ইসলাম: এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে স্কুল ও মাদরাসার শিশু বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখতে কী করা যেতে পারে?
ডা: আজিজা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান: বাচ্চারা সাধরণত একটু পরপর নিজের নাকে-মুখে হাত দিয়ে থাকে, এ কাজটা করা থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। কারণ, ভাইরাসগুলো আমাদের আশাপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, আমরা যে টেবিল ধরছি, চেয়ার ধরছি বা কলম ধরছি, ওখানে ভাইরাসটা থাকতে পারে।
ভাইরাসে হাত দেওয়ার পর আমরা যখনই সেই হাত নাকে-মুখে লাগাচ্ছি, তখনই ভাইরাসের ইনফেকশনটা হচ্ছে। এজন্য সবাই যেন নিয়মিত সাবান বা সেনিটাইজ দিয়ে হাত পরিষ্কার করে। রাস্তাঘাটে থুথু ফেলা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
আওয়ার ইসলাম: মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোন সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কিনা?
ডা: আজিজা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান: মাদরাসাগুলোতে যেহেতু সবাই একসাথে থাকে, মেঝেতে সবাই একসাথে ঘুমায়, এ ক্ষেত্রে কোন বাচ্চার যখন জ্বর বা ঠাণ্ডা-কাশি হবে তাকে আলাদা কোন রুমে শিফট করা। অন্য বাচ্চাদের সাথে ঘুমালে তারাও সংক্রমণের শিকার হতে পারে। সেটা করোনা ভাইরাসই হোক বা অন্য কোন ভাইরাসের ইনফেকশনই হোক কেন, যে কোনও রোগই কিন্তু ছড়াতে পারে।
শিক্ষকরা একটু সচেতনতার মাধ্যমে অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলে অন্য বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
আওয়ার ইসলাম: কোন শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া গেলে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে?
ডা: আজিজা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান: যখনই সন্দেহ হবে এই বাচ্চাটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে, তখনই স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া নির্দশনা অনুসরণ করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের হট লাইনে বা ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলোজি ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ" আইইডিসিআরে যোগাযোগ করতে হবে।
মাস্ক ব্যবহার করহে হবে। একটা মাস্ক যেন দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করা না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন নতুন নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ছড়ানোর চান্সটা কমে যাবে।
আওয়ার ইসলাম: করোনা প্রতিরোধে ছাত্র-শিক্ষকদের আগাম কোনও প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার আছে কিনা?
ডা: আজিজা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান: বাচ্চাদের বেশি বেশি হাত ধোয়ার কথাটা বলতে হবে। একটা ক্লাস শেষ হলে আরেকটা ক্লাসের মাঝখানের সময়টাতে সবাই যেন হাতটা ধুয়ে নেয়।
দেখা যাচ্ছে, মাদরাসায় বাচ্চারা একটা কাপড়ই দুই-তিন ধরে পরে। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিনই কাপড় ধোয়ার ব্যাপারে বাচ্চাদের নির্দেশ দিতে হবে। আর প্রতিদিন কাপড় ধোয়া যদি সম্ভব না হয়, তবে সেটা যেন কিছু সময়ের জন্য রোদে শুকিয়ে নেয়। এতে করে কাপড়ে লেগে থাকা ভাইরাসটা মরে যাবে।
আরএম/