মণিপুর উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি অনন্য রাজ্য। এর রাজধানী ইম্ফল। এই রাজ্যের উত্তরে নাগাল্যান্ড, দক্ষিণে মিজোরাম, পশ্চিমে আসাম ও পূর্বে মায়ানমার রয়েছে। এই রাজ্যের আয়তন ২২,৩৪৭ বর্গকিলোমিটার মাত্র। ১৯৭২ সালে রাজ্যের পূর্ণ মর্যাদা পায় মণিপুর। বর্তমানে মণিপুরে ৩ লাখের বেশি মণিপুরি মুসলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক ভারতের মণিপুর পরিদর্শন করেন বাংলাদেশী মণিপুরি মুসলমানদের ১৬ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের দেখা মণিপুরে মণিপুরি মুসলমানরা কেমন আছেন? এই নিয়ে লেখক ও গবেষক হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ এর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- রফিকুল ইসলাম জসিম ৷
আওয়ার ইসলাম: মনিপুরে প্রথম কখন মুসলমানরা আগমন করে?
হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ: মণিপুরে মুসলমাবদের ব্যাপক আগমন ঘটে ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে। তবে কোন কোন ঐতিহাসিক ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দের আগেও কিছু সংখ্যক মুসলমান সেখানে ছিলেন বলে আভিমত দিয়েছেন।
আওয়ার ইসলাম: মণিপুরে মণিপুরি মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা কেমন?
হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ: মণিপুরে মণিপুরি মুসলমানরা সংখ্যা লঘু। সেখানে দেখেছি NRC সহ কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত কিছু কিছু বৈসম্যমূলক পদক্ষেপ নিয়ে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। ইদানিং মণিপুরের মণিপুরি মুসলমানরা শিক্ষাদিক্ষায় বেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করছে।
আওয়ার ইসলাম: মণিপুরে মুসলমানদের ধর্মপালনে স্বাধীনতা কেমন?
হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ: আমি যেহেতু একজন বাংলাদেশী মণিপুরি। তাই প্রশ্নটি আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক। তবে মণিপুরে সাম্প্রতিক সফরে দেখেছি, সেখানে নিয়মিত আজান হচ্ছে। নামাজ হচ্ছে। বিছিন্ন দুই একটি ঘটনা ছাড়া, সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রিতিই লক্ষ্য করা গেছে।
আওয়ার ইসলাম: মনিপুরে মুসলমানদের ধর্ম পালনে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে?
হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ: মণিপুর সফরে গিয়ে আমরা যতদুর উপলব্ধি করেছি তাতে দেখা যায়, সীমাবদ্ধতার ভিতরেও তারা তাদের ধর্মপালনে ঘুবই সচেতন। তবলিগ জামাতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থাগুলো সেখানে বেশ সক্রিয় রয়েছে। সেখানকার মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে ধর্মীয় ভেদাভেদ খুবই কম। তারা তাদের মতোভেদগুলো কোরান ও হাদিসের আলোকে দুরীভূত করে নিচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম: মণিপুরে মণিপুরি মুসলমানদের উপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো উল্লেখ্য ঘটনা আছে কিনা?
হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ: মণিপুরে মাঝে মধ্যে সহিংসতার ঘটনা যে ঘটেনা, তা কিন্তু নয়। তবে সেই ১৯৯৩ সনের ৩ মে সংঘটিত রায়টের পর বড় কোন সংঘাত এ পর্যন্ত আর ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন দুই একটা ঘটনা যা ঘটেছে তা কোন ধর্মীয় সংঘাট নয়। ব্যক্তগত রেষারেষির সংঘাত।
আওয়ার ইসলাম: মণিপুরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান থাকলেও পার্লামেন্টে তাদের অপ্রতুল সদস্য থাকার কারণে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কি না?
হাজি মোঃ আব্দুস সামাদ: ভারতের কেন্দ্রে রাজ্য সভা (উচ্চ কক্ষ) ও লোক সভা (নিম্ন কক্ষ) নামে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট রয়েছে। রাজ্য সভার সদস্যরা বিধান সভা কর্তৃক আর লোকসভার সদস্যরা ভোটার কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকে। সেখানে মণিপুরের কোন মুসলমান সদস্য নেই।
আর রাজ্যে রয়েছে বিধান সভা। লোকসভায় মণিপুর থেকে মাত্র দুইজন সদস্য আর বিধান সভায় ৬০ জন সদস্য রয়েছে। বিধান সভায় বেশ কয়েকজন মণিপুরি মুসলমান বিধায়ক বা Legislative member রয়েছে। জিরিবাম থেকে একজন বাঙালী মুসলমানও Legislative member হয়েছেন। তাই সেখানে কোন বৈষম্য থাকলেও তা সদস্য না থাকার কারণে নাও হতে পারে।
আওয়ার ইসলাম: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
হাজী মোঃ আব্দুস সামাদ: আওয়ার ইসলাম কেও ধন্যবাদ।
-এটি