ওমর আলফরুক।।
সময় সবার জন্যই সমান। চব্বিশ ঘণ্টা। তারপরেও এই সীমিত সময়ের মধ্যেও কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কাজ করেন।
আমরা লক্ষ্য করলে দেখব সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য তারা বিবিধ নীতিমালা তেরি করেন নিজেদের জন্য এবং এগুলো খুব গুরুত্বের সাথে পালন করেন। এভাবে প্রপার টাইম মেনেজন্টের মাধ্যমে তারা কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে সক্ষম হন।
টাইম মেনেজমেন্ট কী?
সোজা কথায় সময়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সময়কে সঠিক খাতে ব্যয় করা। এমন কিছু নীতিমালার অধীনে নিজেকে নিয়োজিত রাখা, যাতে সময়ক্ষেপণ আরও ফলপ্রসূ হতে পারে।
১. আমরা লক্ষ্য করলে দেখবো পৃথিবীর সকল সফল মানুষই খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগেন। তাই দিনের শুরুটা করা উচিত ফজরের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার বৈষয়িক উপকারিতা বাদেও মুসলমান হিশাবে ফজর আদায়ের জন্য আমাদের আগে ভাগে জাগা উচিত। আমরা জানি দিনের শুরুতে রয়েছে বরকত। হাদিসে উল্লেখিত বরকত লাভের জন্য তাই আমাদের উচিত খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগা। শুধু ফজরই নয়; সকল নামাজ জামাতের সাথে নিয়মিত আদায় করুন। আল্লাহর হককে নিজের হকরে ওপর প্রাধান্য দিন।
ফজরের আগে ঘুম থেকে ওঠে, নামাজ পড়ে, কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য জিকির-আজকার করুন। এরপর প্রাত্যহিক ব্যয়াম ও সকালের নাস্তার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করুন। এরপর দিন শুরুর প্রস্তুতি নিন। এভাবে অন্যান্য মানুষ জেগে ওঠার আগেই আপনি দিনের প্রাথমিক কাজগুলো সেরে নিজেকে এগিয়ে রাখুন। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে আপনি পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি কাজ করতে সক্ষম হবেন।
২. অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের লিস্ট তৈরি করুন। প্রত্যেকে নিজের মতো করে টাইম মেনেজমেন্টের খসরা দাঁড় করায়। কেউ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রুটিন করে, কেউ দিনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে। কেউ বা আবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করেন। প্রতিদিনের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করাই সব চেয়ে ভালো।
একটি সফল দিন যাপনের জন্য আগের রাতেই প্রয়োজনীয় কাজের তালিকা তৈরি করে রাখুন। এতে আপনি দিনের শুরু থেকেই জরুরি কাজগুলো জানতে পারবেন।
৩. অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য আলাদাভাবে সময় বরাদ্ধ করুন। সময় বাঁচানোর জন্য অনেকেই একসাথে একাধিক কাজ তথা মাল্টিটাস্কিং করে থাকেন। এটি আসলে ভুল সিদ্ধান্ত। মাল্টিটাস্কিং কেবল কম মনযোগের কাজেই করা যায়। যেমন ব্যায়াম করতে করতে কোন কিছু শোনা বা এমন হালকা কোন কাজ একসাথে করা যেতেই পারে।
কিন্তু যে কাজগুলো করতে অধিক মনযোগ ব্যয় করতে হয়, সেগুলোর সাথে অন্য কাজ যুক্ত করা মানে মোটাদাগে সময়ই নষ্ট করা। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজে মাল্টিটাস্কিং না-করাই বরং ভালো।
একই সাথে একাধিক কাজ না-করে, যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঘণ্টায় অন্তত ৪৫ মিনিট দিন। ফলাফল দেখে আপনি নিজেই অবাক হবেন।
৪. কাজের সুষম বণ্টন করুন! যে কাজ অন্যের মাধ্যমে করানো সম্ভব এবং আপনি নিজেও যে কাজে পারদর্শী নন। সেই কাজগুলো বরং অন্যদের দিয়েই করান। এতে আপনি অযথা সময় ক্ষেপণ থেকে বাঁচবেন।
৫. রুটিন যথা সম্ভব সহজ রাখুন। রুটিন করার আগে ভাবুন রুটিনে কী কী রাখরেন। কিন্তু একবার রুটিন করে ফেললে এরপর নিজেকে সম্পূর্ণরূপে রুটিন অনুযায়ী করে গড়ে তুলুন ।
কারণ রুটিন সহজ এবং ফ্লেক্সিবল না হলে, আপনার কাজে ছন্দপতন হতে বাধ্য। এতে সময় ক্ষেপণ ছাড়াও আপনার মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে।
সারা দিন আপনার রুটিন অনুযায়ী সব কিছু ঘটবে না। বাইচান্স যে কোন কিছুই ঘটে যেতে পারে। এই জন্য রুটিন বাদেও আলাদা করে কমপক্ষে দুইঘণ্টা সময় হাতে রাখুন।
৬. ‘না’ বলতে শিখুন। অনুরোধে ঢেকি গিলবেন না। বাজেভাবে অনেকগুলো কাজ করার চেয়ে একটি কাজ ভালোভাবে করুন। এবং বাকিগুলোর জন্য না বলুন। সাবলীলভাবে ‘না’ বলতে পারা একটি বড় গুণ।
-ইসলামিক সেল্ফ হেল্প ডট কম থেকে অনূদিত...
-এটি