মাওলানা সাইয়েদ আহমদ ভারতের মণিপুর রাজ্যের একজন মণিপুরি মুসলমান আলেম। মণিপুরি মুসলমানদের মধ্যে যে কজন আলেমের বিশ্বময় পরিচিতি ঘটেছে, শায়খ মাওলানা সাইয়েদ আহমদ তাদের মধ্যে অন্যতম। জমিয়তে উলামা হিন্দ মণিপুরের সভাপতি এবং মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের প্রশাসনিক কেন্দ্রে অবস্থিত বাবুপাড়া জামে মসজিদের খতিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
বাংলাদেশে মণিপুরি মুসলিম। আজ থেকে প্রায় ২০০ বছরে আগে ১৮১৯ সালে রাজা মার্জিং সিংহের শাসনামলে আগ্রাসী বার্মিজ সৈন্য কর্তৃক সাত বছরব্যাপী মণিপুর দখল করে রাখে। তখন আত্মরক্ষার তাগিদে মণিপুরিরা স্বদেশভূমি ত্যাগ করে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসে ইংরেজদের আশ্রয় গ্রহণ করে। এদেশে মণিপুরি মুসলমান (পাঙাল) দের অবস্থা দেখতে জমিয়তে উলামা হিন্দের মণিপুরের আমীর ও ভারতে মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলের বাবুপাড়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সাইয়েদ আহমদ সম্প্রতি এদেশে এসেছিলেন৷ তার সঙ্গে কথা বলেছেন রফিকুল ইসলাম জসিম
আওয়ার ইসলাম: আপনার জন্ম, বেড়ে উঠা ও পড়াশোনা কোথায়?
মাওলানা সাইয়েদ : - আমার জন্ম ভারতের মণিপুর রাজ্যের থাওবাল জেলার য়াইরিপাক সিংঙ্গা গ্রামে৷ আমার নানা মাওলানা মঈন উদ্দিন সাহেবের কাছ থেকে প্রথম আল কোরআন শিক্ষা লাভ করি।
এরপর আমার নিজ গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয় শেরে ইসলামি শিক্ষা অর্জনের জন্য আসামের টিপুরাগড়ে যায়। সেখানে ৩ বছরে আলিম কোর্স সম্পন্ন করি। এর ফলে উত্তর প্রদেশের সাহরানপুর জেলার দেউবন্দে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার সুযোগ লাভ করি। সেখান পড়াশুনার পর দিল্লির মাদ্রাসা জামীয়াতে এসে হাদিস (শিয়াসিত্তা) সম্পন্ন করি৷ তারপর মনিপুরে ফিরে এসে জেনারেল এডুকেশনে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করি, অত:পর এইচএসসি পাস করে লিংল কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করি৷
আওয়ার ইসলাম: বর্তমান মণিপুরে মণিপুরি মুসলিম (পাঙাল)দের সংখ্যা কত? এবং তাদের দীনি পরস্থিতি কেমন ?
মাওলানা সাইয়েদ : বর্তমানে সত্য-মণিপুর রাজ্যের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। তাদের মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ মীতৈ, অন্যান্য নৃগোষ্ঠী ১৫ লাখ এবং মণিপুরি মুসলমান (পাঙাল) প্রায় ৩ লাখ ৷ সেখানে দীন পালনের সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। রাজ্যে ৫৭০ টি মসজিদএবং ৩৪ টি মাদ্রাসা রয়েছে। যার মধ্যে ২৭ টি ছেলেদের এবং ৭ টি মেয়েদের। এছাড়া রাজ্যে ১৫০০- ২০০০ এর মতো আলেম, ২৫০- ৩০০ জনের মত হাফেজ রয়েছে৷
আওয়ার ইসলাম : মণিপুরে মুসলিম নারীর শিক্ষাব্যবস্থা কেমন? জাতির স্বার্থে নারীর শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন আছে কিনা?
মাওলানা সাইয়েদ : ইসলামে নারীকে বিদ্যাশিক্ষার অধিকার দিয়েছে। ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের শিক্ষা-দীক্ষা এবং যাবতীয় দায়-দায়িত্বের সাথে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ নারীর রয়েছে। মণিপুরে মুসলিম নারীরা অনেকে আলীমা হয়েছে৷ তবে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ইসলামে নারী-পুরুষের শিক্ষা অর্জনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তেমনি পর্দার বিধানকেও ফরজ করা হয়েছে। নারীরা শিক্ষিত হলে সন্তানও শিক্ষিত হবে। আর তাই জাতির স্বার্থেই নারীর শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন।
আওয়ার ইসলাম : আপনি দীর্ঘ সময় ধরে জমিয়তে উলামা হিন্দ এর সাথে জরিত, জমিয়তে উলামা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
মাওলানা সাইয়েদ : “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সর্বপ্রথম ১৯২০ সালের ১ জানুয়ারি ভারতবর্ষের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দাবি করে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছেন। পরবর্তীতে এ সংগঠনটি মণিপুরে গঠিত হলে এর নাম জমিয়তে উলামা মণিপুর করা হয়৷
আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল ছিলাম আর বর্তমানে ৬ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। জমিয়তে ওলামা একটি হকের পতাকাবাহী সংগঠন। যুগে যুগে যত না হক তথা বাতিল মতাদর্শের আবির্ভাব ঘটেছে, সকল বাতিলের মোকাবেলায় দেওবন্দ অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে।
আওয়ার ইসলাম : বর্তমান সময়ে তরুণ আলেমরা অনেকেই মিডিয়ার দিকে ঝুকছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মাওলানা সাইয়েদ : সমাজ উন্নয়নে ও সমাজ পরিবর্তনে মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সময়ের মিডিয়া ব্যবহার করেই দাওয়াতী কাজ ও সমাজ সংস্কার করছে, যেমন, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর দৈনিক আল জমিয়ত, মণিপুর থেকে মাসিক পত্রিকা নূর। মিডিয়া তারুন্যের সফলতা ও বিজয়ের প্রতীক। তরুণ আলেমগণ সমাজ পরিবর্তন ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে ভুমিকা রাখবে এটাই কাঙ্খিত। এই কাজে মিডিয়া তাদের সহায়ক অস্ত্র। তাই মিডিয়ার সকল ক্ষেত্রেই তাদের কাজ করতে হবে।
আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশের মনিপুরি মুসলমানদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কি?
মাওলানা সাইয়েদ : - মুসলিমদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে - একজন মানুষ হিসাবে আমাদের জীবনের মূল্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। যদি আমরা আমাদের জীবনের মূল্য সম্পর্কে চিন্তা করি, তাহলে কুরআন ও সুন্নাহ্র মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে যে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন তার মূল্যও আমাদের বুঝে আসবে এবং সেই পথে চলা আমাদের জন্য সহজ হবে। আমাদের তরুণ বন্ধুদের জীবনটা হোক আলোকিত জীবন, জীবনের এই প্রারম্ভেই পেয়ে যাক সঠিক গন্তব্যের চেতনা এবং সেই গন্তব্যে পৌঁছার সঠিক পথের সন্ধান। এই শুভ কামনা নিয়ে কথা এখানেই শেষ করছি।
-ওএএফ