বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ২৯ কার্তিক ১৪৩১ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
শনিবার মতিঝিলের জামিয়া দ্বীনিয়া শামসুল উলুমে বয়ান করবেন মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী উপদেষ্টাদের আশ্বাসে হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা জুলাই গণহত্যার ১০০তম দিন: টিএসসিতে শহীদ পরিবারের আর্তনাদ দ্বীনিয়াতের প্রধান মাওলানা সালমানের জন্য দোয়া চাইলো পরিবার রংপুরে জুম্মাপাড়া মাদরাসার ২ দিন ব্যাপী তাফসির মাহফিল আগামীকাল ন্যায়পরায়ণ-আল্লাহভীরু শাসক ছাড়া শান্তির আশা করা যায় না: চরমোনাই পীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শরীআহ চেয়ারম্যান হলেন মাওলানা মাহফজুল হক সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিল চাই: অ্যাটর্নি জেনারেল আসছেন না মাওলানা সাদ; আগের নিয়মেই চলবে কাকরাইল ও ইজতেমার মাঠ কাল বাদ ফজর বসুন্ধরা মারকাজে বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান

বিয়ের প্রথম দিন থেকেই আমি তাকে সাংসারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি মুসলিম বিশ্বের এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত। জ্ঞান-গরিমা, পাণ্ডিত্ব ও খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন তিনি। তার এ সাফল্য ও খ্যাতির পেছনে নীরবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তার স্ত্রী। পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ইনটেলেক্ট সেই মহীয়সী নারী এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে।

সাক্ষাৎকারে শায়খ উসমানির দৈনন্দিন জীবন, অভ্যাস-রুচি ও পারিবারিক অনেক বিষয়ই উঠে এসেছে। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশের অনুবাদ পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু

তবে সাক্ষাৎকারে শায়খ উসমানীর স্ত্রীর নাম ও পরিচিতি সচেতনভাবে গোপন করা হয়েছে। তাই এখানে প্রতীকী অর্থে তাকে ‘মুহতারামা’ (সম্মানিতা) বলা হয়েছে।


ইনটেলেক্ট : শায়খ তাকি উসমানি তার পুরো জীবনটাই ইসলামের সেবায় কাটিয়েছেন। মাশাআল্লাহ! তার খ্যাতি ও অর্জন ঈর্ষণীয়। এমন সাফল্যের জন্য ঘরের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। আপনি তাকে কিভাবে সহযোগিতা করেন?

মুহতারামা : আমাদের বিয়ের প্রথম দিন থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঘরের সব দায়িত্ব আমি পালন করবো যেনো শায়খ তার পুরো সময়টা দীনের কাজে ব্যয় করতে পারেন। এভাবেই আমি (আশা করি) তার কৃতিত্ব ও অর্জনের অংশিদার হয়েছি আমি।

এটাই শেষ নয়, আমি শুধু ঘরের পরিবেশ রক্ষার কাজটিই করি নি; বরং  তাকে পারিবারিক সব ধরনের ঝামেলা থেকে মুক্ত রেখেছি।সাংসারিক আয়োজন এবং ব্যক্তিগত কেনাকাটা থেকেও। আমি চেষ্টা করি, ছোট-বড় পারিবারিক বিষয়গুলো নিজে সমাধান করতে। যেমন, ফোন ঠিক করানো।

এমনকি যখন আমাদের সন্তানেরা খুব ছোট ছিলো তখনও আমি চেষ্টা করেছি, যেনো তার রুটিন মাফিক কাজে কোনো ব্যঘাত না হয়।

এ কথা না বললে নয়, আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাকে তার মতো একজন ধৈর্যশীল ও মহান ব্যক্তিত্ব দান করেছেন। যিনি জাগতিক এবং পরকালীন সব বিবেচনায় সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ উপহার দিয়েছেন। আমি পুরোপুরি তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট।

ইনটেলেক্ট : শায়খ উসমানি প্রায় দেশের বাইরে যান। আপনি কি তার সাথে ভ্রমণের সুযোগ পান? যদি উত্তর হ্যা, হয় তাহলে আপনি কিভাবে সময় কাটান যখন তিনি অনুষ্ঠান ও অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকেন?

মুহতারামা : আমি প্রায় তার সঙ্গে ভ্রমণের সুযোগ পাই। তার সঙ্গে বহু বিদেশভ্রমণ আমি করেছি। আমরা এক সঙ্গে পরিকল্পনা করি। আমাদের পরিকল্পনা শুরু হয়, বিমান অবতরণ থেকেই। মূলত আমি ভ্রমণের অধিকাংশ সময়টা নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকি। হোটেল লাউন্সে শায়খ তার মিটিং করেন আর আমি পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতে মন দেই। কুরআনের তাফসির পড়ি অথবা অন্য কিছু। আমি পড়তে ভালোবাসি।

বাড়িতে আমি পারিবারিক কাজের চাপে মনোযোগ দিয়ে খুব বেশি পড়তে পারি না। হোটেলে আমি পাঠে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি। এখন আমি আরবি শিখতে ও পড়তে চেষ্টা করছি। যখন শায়খ হোটেলে ফেরেন, তখন আমি না বোঝা বিষয়গুলো তার কাছ থেকে বুঝে নেই।

আমি কেনাকাটা বা ঘুরতে খুব আগ্রহী নই। অনেক সময় অনেক নারী আমাকে প্রস্তাব করেন শহর ঘুরে দেখার। আমি হোটেলে থাকতে এবং আমার দৈনন্দিন কাজ করতে পছন্দ করি।

আমরা যেখানেই থাকি না কেনো ফজরের পর আমি আর শায়খ এক সঙ্গে আধা ঘণ্টা হাঁটি। সন্ধ্যায় আমি আধা ঘণ্টা হাঁটি। ঘরে হলেও। হাঁটার সময় আমি নিয়মিত কুরআনের একটি অংশ পাঠ করি।

অনেক বিদেশ ভ্রমণের সময় শায়খ তার অফিসিয়াল কার্যক্রম শেষ করার পর বাড়তি কয়েকদিন সেখানে অবস্থান করেন আমাকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য।

ইনটেলেক্ট : সন্তান বড় হওয়ার পর নারীরা কিছুটা অবসর পান। আপনি সে সময়টা কিভাবে ব্যয় করেন?

মুহতারামা : প্রতি বৃহস্পতিবার আমি হিরা ফাউন্ডেশন স্কুলের নারী স্টাফ ও শিক্ষিকাদের উদ্দেশে একটি ভাষণ দেই। এজন্য আমি প্রধানত শায়খের বই ইসলাহি খুতুবাত দেখি। বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্যান্য দিনও আমি হঠাৎ স্কুলের কার্যক্রম পরিদর্শনে যাই।

হিরা ফাউন্ডেশন স্কুল ক্যামব্রিজ ও ধর্মীয় শিক্ষা সিলেবাসে পরিচালিত হয় দারুল উলুম করাচি অধীনে।

আমার দৈনন্দিন রুটিন তো আছেই। শায়খের যত্ন নিতে আমি দিনের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করি।

আমার দৈনন্দিন রুটিন অনেকটা এমন, ফজরের পর আমরা একসাথে কিছু সময় হাঁটি। এরপর সকাল ৭.৩০ মিনিটে আমরা নাস্তা করি। নাস্তা করে করে শায়খ দরসের প্রস্তুতি নেন। তিনি সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বুখারির দরস দেন। আমি এ সময়ে ঘরের কাজগুলো সম্পন্ন করি।

১০টায় তিনি ঘরে ফেরেন। ১২টা পর্যন্ত তিনি তার ল্যাপটপে কাজ করেন। ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তার অফিস টাইম। এ সময়ের মধ্যে তিনি জোহরের নামাজ পড়ে নেন। ২.১৫ মিনিটে আমরা এক সঙ্গে খেতে বসি। খাওয়ার পর তিনি এক ঘণ্টা বিশ্রাম নেন।

৩.৩০ মিনিটে তিনি আবার অফিসে ফিরে যান এবং আসর পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক-স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন।

আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত তিনি পরিবারকে সময় দেন। এ সময় পরিবারের সবাই এক সঙ্গে বসে আলোচনা করেন। যে কোনো সমস্যা ও পারিবারিক ইস্যু এ সময়ই আলোচিত হয়।

এশা থেকে মাগরিব পর্যন্ত শায়খ তার একান্ত ব্যক্তিগত কাজগুলো করেন। যেমন বই লেখা, গবেষণা ইত্যাদি। রাতের খাবার খেয়ে আমরা ১০.১৫ মিনিটে এক সঙ্গে বসি এবং তিনি কোনো বই থেকে পড়ে শোনান। পরিবার শিশুরাও পাঠাসরের উপস্থিত থাকে।

এরপর তিনি আবার তার কাজে মনোযোগ দেন এবং রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করে বিছানায় যান।

ইনটেলেক্ট : শায়খের কোন অভ্যাসটি আপনার সবচেয়ে ভালোলাগে?

মুহতারামা : (হেসে) মাশাআল্লাহ! সবই। আমার আত্মীয়রা কৌতুক করে বলেন, তোমার মতো স্বামীভক্ত নারী আমরা আর দেখি নি। আল্লাহর রহমতে আমাদের বোঝাপড়া খুব ভালো। এর কারণ হলো, আমরা প্রতিটি কাজে পরস্পরের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির বিষয়ে লক্ষ্য রাখি।

ইনটেলেক্ট : তিনি কি খেতে পছন্দ করেন?

মুহতারামা : তিনি খাসির ঝোল তরকারি ও ডাল ভর্তা পছন্দ করেন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ