শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬


আলেম সংবাদকর্মী হিসেবে আমি গর্বিত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত যে কয়জন লেবাস-পোশাক পুরোপুরি ঠিক রেখে মূলধারার প্রভাবশালী গণমাধ্যমে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন তাদের একজন মুফতি এনায়েতুল্লাহ। দৈনিক সমকালে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। বাংলানিউজ হয়ে এখন আছেন বার্তা২৪ ডটকমে। নিজের আদর্শ ও বিশ্বাসের জায়গাটি অক্ষুণ্ন রেখে নিজ পেশায় তাঁর রাতারাতি উন্নতি নজর কেড়েছে সব মহলের। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন হাবীবুর রহমান খান


হাবীবুর রহমান খান: মাদরাসায় পড়াশোনা করে দরস-তাদরিসের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কেন?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: আসলে সেভাবে ভাবিনি। দাওরায়ে হাদিস শেষ করে ইফতা করলাম। আগে থেকেই টুকটাক লেখালেখি করতাম। ইফতা শেষ করে দীর্ঘদিন সক্রিয় শিক্ষকতা ও মাদরাসা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। পরে ২০১৫ সাল থেকে ফুলটাইম সাংবাদিকতায় জড়িয়ে যাই। ক্লাস নেওয়া কমিয়ে দিয়ে শুধু মাদরাসা পরিচালনার কিছু দিক দেখাশোনা করতে থাকি। এখনো নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিতে পছন্দ করি।

হাবীবুর রহমান খান: মাদরাসাপড়ুয়া অনেকেই সাংবাদিকতায় আসার পর তাদের লেবাস-পোশাক পাল্টে যেতে দেখা যায়। আপনার ক্ষেত্রে এটা হয়নি। কোথাও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে কি?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: মাদরাসাপড়ুয়া অনেকেই সাংবাদিকতায় এসে তাদের লেবাস-পোশাক পাল্টে ফেলেছেন, নিজের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমার পরিচিত বন্ধুদের অনেককে দেখেছি লেবাস পাল্টে ফেলেছেন। সত্যি কথা কথা বলতে কী, এটা তাদেরকে সম্মান দেয়নি। উল্টো তাদের ক্ষেত্রে বলা হতো, ‘আরে ও তো টেডি হুজুর।’ তারা ওইভাবে রেসপেক্ট পায় না। কারণ, সে তার স্বকীয়তা ভুলে গেছে। অনেকের কাছে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে।

এক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বলি, আমি কোথাও এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়িনি। বরং আমি লেবাস-পোশাকের জন্য সম্মানিত হয়েছি। আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

আমি বাংলাদেশের প্রথমসারির সম্পাদকদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তারা আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেছেন, সম্মান দিয়েছেন। নিজেরা তো বটেই দেশি-বিদেশি অনেক অতিথির সঙ্গে অনেকটা গর্ব করে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন মিটিং, টকশোতে পাঠাতেন। এক্ষেত্রে একজন আলেম সংবাদকর্মী হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমি গর্বিত।

হাবীবুর রহমান খান: আপনাকে বা আপনাদেরকে দেখে যারা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চায় তাদের জন্য কী পরামর্শ থাকবে?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: যারা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়, তাদের কাছে আমার পরামর্শ থাকবে- কোনোভাবেই নিজের শেকড়কে ভোলা যাবে না। আধুনিক হওয়ার নেশায় পোশাক ও লেবাসের সঙ্গে আপস করা যাবে না। নিজের লক্ষ্যটা স্থির রাখতে হবে।

হাবীবুর রহমান খান: আপনি প্রথম সারির একটি পত্রিকায় কাজ করতেন। সেটা ছেড়ে অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পেছনে কী কারণ? অনলাইনের ভবিষ্যৎ কী?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: দৈনিক সমকাল ছেড়ে অনলাইন বাংলানিউজে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত আমার জন্য বেশি কঠিন ছিল। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কী করা দরকার। যখন আমি অনলাইনে যোগ দিই তখনও অনলাইন ওইভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশে অনলাইনের জনক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। সব মিলিয়ে একটা গুমোট অবস্থা। তারপরও যোগ দিই অনলাইনে। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো, কিন্তু আস্তে আস্তে অভ্যস্থ হয়ে যাই। অনলাইনও জনপ্রিয় হতে থাকে। ফিডব্যাক বাড়তে থাকে। নিজের ভেতরে উৎসাহ পেতে থাকি।

আর অনলাইনের ভবিষ্যৎ কী এই প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে আমি বলব, ছাপা পত্রিকার ভবিষ্যৎ কী? বিশ্বের বড় বড় দৈনিক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশেও ছাপা পত্রিকার কাটতি আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। আমি তো বলি, ছাপা পত্রিকায় ‘বনেদি’ ভাব ছাড়া সৃষ্টিশীল কিছু করার সুযোগ নেই। মানুষের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। মানুষ মুহূর্তের মধ্যে জেনে যাচ্ছে তাজা সব খবর। সেখানে একদিনের পুরনো খবর পড়ার জন্য দৈনিকের ওপর কে ভরসা করে? সে হিসেবে অনলাইন এখন আস্থার নাম।

খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা, দ্রুত খবর পরিবেশন, নিজস্ব কনটেন্ট সৃষ্টিতে অনলাইনগুলো মনোযোগী হচ্ছে, এ খাতে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়ছে। সে হিসেবে বলা চলে, সামনের দিনগুলো অনলাইনের।

হাবীবুর রহমান খান: বর্তমান সময়ে মিডিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক উল্লেখ করতে বললে কী বলবেন?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: একটু কঠিন প্রশ্ন। তবুও বলি, মিডিয়ার ইতিবাচক দিক হলো- মানুষ খবর পড়ছে। খবর জানতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। মানুষের কৌতূহল বাড়ছে। সেই কৌতূহল প্রবণতা থেকে এক ধরনের বিশ্লেষণ বাজারে ডালাপালা ছড়িয়ে একটা ‘হাইপ’ তৈরি হচ্ছে। যেটা সামাজিক নানা অবিচার-অন্যায়-অনাচার রুখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ইচ্ছে করলেই মনমতো খবর দেওয়ার দিন শেষ। মিডিয়া আছে বলেই দুর্নীতির খবর মানুষ জানার সুযোগ পাচ্ছেন। নানা অনিয়ম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছে।

আর নেতিবাচক দিক হলো- মিডিয়া অনেক ক্ষেত্রেই গণমানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে পারছে না, নানা কারণে। পাঠকের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। কারণগুলো খুব অজানা নয়। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের মালিক শ্রেণির ভূমিকা ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যেমন দায়ী। তেমনি পাঠকের পছন্দও দায়ী।

হাবীবুর রহমান খান: ‘প্রভাবশালী গণমাধ্যমের মালিক ইসলামপন্থীরা’ সেটা আর কতদূর?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: আপাতত নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে হবে না, সেটা জোর দিয়ে বলা মুশকিল। দেখুন, বাংলাদেশের আড়াই লাখ মসজিদ, বিশ হাজারের বেশি কওমি মাদরাসা চলছে জনগণের স্বতর্স্ফূত চাঁদায়। প্রচুর স্কুল-কলেজ ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এর জন্য কেন্দ্রীয় কোনো তহবিল নেই।

সামনে এমনও হতে পারে, একজন দুজন কিংবা কিছু উদ্যোক্তা হয়তো দাঁড়িয়ে যাবেন, যারা গণমাধ্যমের জন্য ব্যয় করাকে জরুরি ও সওয়াবের কাজ মনে করবেন। আবার এমনও হতে পারে, এক বা একাধিক উদ্যোক্তা এগিয়ে আসবেন। যেমন এসেছেন আল জাজিরার উদ্যোক্তারা।

হাবীবুর রহমান খান: শিক্ষকতা নাকি সাংবাদিকতা কোন পেশায় বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: আগেই বলেছি নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আর পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে উপভোগ করি।

হাবীবুর রহমান খান: সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে কোথায় দেখতে চান? এ নিয়ে কোনো স্বপ্ন আছে কি?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ: প্রশ্নের প্রথম অংশের চেয়ে দ্বিতীয় অংশ নিয়ে কথা বলি। প্রথম অংশটা জটিল ও কঠিন। তাই স্বপ্নের কথা বলি। শুধু আলেম-উলামাদের জন্য নয়, দেশপ্রেমবোধ, ধর্মীয় স্বকীয়তা রক্ষা, মানবসেবার ইচ্ছা, সত্য বলা ও লেখার জন্য সত্যিকারের একটা গণমাধ্যমের স্বপ্ন দেখি। যে গণম্যাধম বলবে, দেশ-ধর্ম ও মানবতার কথা।

[লেখা ও লেখকের কথা নিয়ে প্রকাশিত সাময়িকী ‘লেখকপত্র’ এর জানুয়ারি-মার্চ: ২০২০ সংখ্যার সৌজন্যে]

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ