সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫ ।। ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১০ রমজান ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিরতিকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম ফুটবলারদের ওমরা পালন ধর্ষণের বিচারে শরয়ি আইন থাকলে, কোন শিশু আর ধর্ষিত হতো না: উলামা-জনতা ঐক্য পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় ঈদে নতুন নোট বিতরণ স্থগিত ধর্ষণ এবং নারীর পরিচয় নিয়ে অবমাননায় ১৫১ আলেমের বিবৃতি ১০ম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম ত্রাণ বন্ধের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল তারাবিতে ফাইভ জি স্পিডে তেলাওয়াত করবেন না: আজহারী ‘আলেমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলা জিহাদ নয়, সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

'ইসরাইলকে খুশি করতে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানি কমান্ডার কাসেম সোলেইমানি নিহতের পর ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এর আগে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা উসকে দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনা কুড়িয়েছেন ট্রাম্প।

কিন্তু ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়, ইরাকের মার্কিন দূতাবাসে হামলার পেছনে কি ইরানের ইন্ধন আছে, জেনারেল সোলাইমানির মত ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে হত্যার মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে -এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর ও আন্তর্জাতিক গবেষক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিবেদক সুুফিয়ান ফারাবী।


আওয়ার ইসলাম: ইরান ও আমেরিকার দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথা থেকে?

ড. আব্দুল লতিফ মাসুম: গত কয়েক দশক আগে ইরান ছিল পুরো এশিয়ার মধ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় তাবেদার রাষ্ট্র। শাহানশাহ রেজা শাহ পাহলভী ছিলেন মার্কিন মদদপুষ্ট নির্মম একজন শাসক। শাহানশা বাহ্যিকভাবে তৎকালীন সময়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললেও ইসরাইলের সঙ্গে তার গোপন আতাত ছিল। যখন ইরানে ইসলামী বিপ্লব ঘটে তখন ইরানের মাটিতে ইসরাইলি সেনাদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

ইরানের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে শাহানশাহ মার্কিনীদের সহযোগিতা ও ইসরাইলের মদদে রাজত্ব করে যাচ্ছিল। যা ছিল ইরানি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইরানের জনগণ আনোরন করে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দেয়। তীব্র আন্দোলনের পর শাহানশা ক্ষমতাচ্যূত হয়।

সেই থেকে (১৯৮৯ সাল) থেকে ইরান আমেরিকার কঠোর বিরোধিতা করে আসছে। পৃথিবীতে ইরান একমাত্র দেশ যে আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করে। সুতরাং বিরোধের শুরুটা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকেই। ইরানের ওপর থেকে আমেরিকার কর্তৃত্ব বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং আমেরিকা মিত্র ইসরাইলের বিরুদ্ধাচারণ শুরু হওয়া থেকেই মূলত এই সংঘাতের সূচনা। যা আজ পর্যন্ত চলে আসছে।

তবে মাঝখানে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দ্রুতগতিতে আবারো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে দু'দেশের মাঝে নানা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্যে পরমাণু চুক্তি ছিল অন্যতম। ‌তবে বর্তমান যে সংকট চলছে সেটা শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তিক পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পরপরই।

আওয়ার ইসলাম: ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ করেছে সেখানকার জনগণ। এর জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে দায়ী করছেন। আপনার কি মনে হয়, সেখানে ইরানের ইন্ধন ছিল?

ড. আব্দুল লতিফ মাসুম: ইরাকের আর্থিক অবস্থা বর্তমান ভালো নয়। দ্রব্যমূল্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন মাস থেকে ইরাকে বিদ্রোহ চলছে শুধুমাত্র দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করার কারণে। আর ইরাকের মানুষের বিশ্বাস তাদের দেশ থেকে আমেরিকার আধিপত্য চলে গেলে, তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সমাধান হবে, জীবন-মান উন্নত হবে এবং এছাড়াও নানাবিধ সমস্যার সমাধানের পথ উন্মুক্ত হবে।

সেখানে শিয়া-সুন্নি এরকম কোন আন্দোলন চলছিল না। বরং ইরাকের সর্বশ্রেণীর সাধারণ জনগণ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সকল জাতি-উপজাতি রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে বিদ্রোহ করে বসে। কিন্তু আমেরিকা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য দোষ চাপিয়ে দেয় মিলিশিয়াদের উপর। এবং এই অপবাদ দেয় যে, মার্কিন দূতাবাসে হামলার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সুযোগ পেলেই ইরানকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা চালায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ-ও বলেছে, ইয়েমেনের হুতিদেরকে অস্ত্রশস্ত্র এবং আর্থিক সহযোগিতা করছে ইরান। অথচ বাস্তবে যার কোন ভিত্তি নেই। এখন পর্যন্ত এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ইরাকে মার্কিন দূতাবাস এ হামলায় ইরানকে দায়ী করা, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটা অপকৌশল। তারা এটা এজন্য করেছে যাতে করে ইরাকের উপর থেকে তাদের কর্তৃত্ব নষ্ট না হয় এবং ইরানকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।

তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মি. ট্রাম্প ইরানে হামলা করার উসিলা খুঁজছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোটব্যাঙ্ক ও মিত্র দেশ ইসরাইলকে খুশি করতে মূলত নিজ দেশে অভিশংসনের মুখে পড়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হল অভিশংসনের দোষ ঢেকে ফেলা এবং আগামী নির্বাচনে ভালো ফলাফল অর্জন। এছাড়া অন্য কিছু নয়।

এজন্য আমি মনে করি না, ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে হামলার সঙ্গে ইরান জড়িত। আমি আবারো বলবো এটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নষ্টামির বহিঃপ্রকাশ।

আওয়ার ইসলাম: হঠাৎ করে আমেরিকা ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক শক্তিশালী ব্যক্তি জেনারেল সোলাইমানি কে হত্যা করার মত এত বড় পদক্ষেপ কেন নিলো?

ড. আব্দুল লতিফ মাসুম: যাদের ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, তারা মুসলিম বিরোধী, ইসলামবিরোধী, ইমিগ্রেশন বিরোধী, মেক্সিকো বিরোধী। তারা ইরানের ক্ষতি চায়। মার্কিনবিরোধী ইরানের হুমকি-ধামকি তারা অপছন্দ করে।

আমি মনে করি, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভোটব্যাংককে খুশি করার জন্য জেনারেল সোলায়মানিকে হত্যা করেছে। এছাড়া ইসরাইল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিকট বারবার ইরানের ওপর হামলার দাবি জানাচ্ছিলো। তাই অভ্যন্তরীণ জনগণকে খুশি করা এবং ইসরাইলের দাবির প্রেক্ষিতে আমেরিকা এ হামলা চালায়।

আওয়ার ইসলাম: ধন্যবাদ আপনাকে

ডক্টর আব্দুল লতিফ মাসুম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ