শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা নেতানিয়াহুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ইসরায়েলি নাগরিক গ্রেপ্তার ‘উলামায়ে কেরামদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন অসম্ভব’ নিউইয়র্কে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮ ফিলিস্তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত 'ঢাবি ও জাবির হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে' ঢাবিতে যুবক হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩ জন আটক কওমী মাদরাসার ছাত্রদেরকে বিসিএস এ অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্য: মুফতী ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই  সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সমাবেশ

সুখী ও ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবনের কিছু পাথেয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উস্তাদ নোমান আলি খান

বোন! আপনি আপনার স্বামীর সাথে দীর্ঘ জীবনের জন্য জড়িয়ে গেছেন। সুতরাং তাদের প্রতি রাগান্বিত হবেন না, তাদেরকে ভালোবাসুন। বিশ্বাস করুন, আপনার ভালোবাসায় যদি তিনি সুখী হন তবে আপনি প্রকৃতপক্ষেই সুখী হবেন।

আপনি হয়তো ভাববেন, “আমি যেহেতু রাগান্বিত, তাহলে সে সুখে থাকবে কেন? সে আমাকে কেয়ার করে না, আমি কেন তাকে কেয়ার করবো?”

আপনার স্বামীও কিন্তু একই রকম চিন্তা করেন, “আমার স্ত্রী আমার ব্যাপারে কেয়ার নেয় না আমি কেন তার ব্যাপারে কেয়ার নেবো?”

বোন, আপনিই প্রথমে শুরু করুন। তার প্রতি যত্নবান হোন, সুন্দর হোন। তার দিকে তাকিয়ে হাসুন। দেখুন তার আগ্রহ বেড়ে যাবে! তিনি বলবেন, “তুমি হাসছো কেন? কেন হাসছো? সব কিছু ঠিক আছে তো? তোমার মা আসছেন নাকি বাড়িতে?”

আপনিই শুরু করুন। বাইরে যাওয়ার জন্য সাজবেন না, আপনার স্বামীর জন্য সাজুন। আপনার চার-পাঁচজন সন্তান আছে, সেটা কোন ব্যাপার না, তবুও স্বামীর জন্য সাজুন। বাইরে চারপাশে শয়তান আর ফিতনা ছড়িয়ে আছে। আপনার স্বামীর আপনার মাঝেই সৌন্দর্য দেখা উচিৎ, বাইরের কোন কিছুর মাঝে নয়।

আর স্বামীদের উচিৎ স্ত্রীদের কর্মের কৃতিত্ব দেওয়া, প্রশংসা করা, তাদের ভালোবাসার কথা বলা। সব সময় অভিযোগ করবেন না এই বলে যে, “বাচ্চারা কোথায়?”, “খাবার রেডি হয়েছে?”, “এটা করেছো?”, “সেটা করেছো?”… এতো অভিযোগের রেশে স্ত্রী হয়তো বলে বসবেন, “আমি কিছুই করিনি।” আর আপনি সে সুযোগে বলবেন, “তুমি আমার কোন কথাই শুনো না!”

বন্ধ করুন ভাই, এতো অভিযোগ করবেন না, “খাবারে লবণ বেশি কেন?”, “খাবার ঠান্ডা কেন?”, “বেশি গরম কেন?” … বন্ধ করুন ভাই, বন্ধ করুন। স্ত্রীর উদ্দেশ্যে ভালো কিছু বলুন, সুন্দর কিছু বলুন।

আমি জানি আমাদের কালচারে, বিশেষত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়াতে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে ভালো কিছু বলাটা খুবই কঠিন, ভালো কিছু বললেই যেন বুকের বামপাশে ব্যাথায় চিনচিন করে উঠে! তাই ভালো কিছু বলার পর সেটাকে ব্যালান্স করার জন্য মন্দ কিছুও যেন বলতে হয় তখন!

যেমন খাবার ভালো হলে প্রশংসা করলেন আর বললেন, “খাবার অনেক ভালো হয়েছে। কিন্তু আমি এখনো তোমার মাকে খুব একটা পছন্দ করি না!” যেন ভালো কিছুর সাথে মন্দ কিছুও বলতে হয় ভারসাম্য করার জন্য। না, এরকম করবেন না।

এই আয়াতে বলা হয়েছে, “হে আল্লাহ, আমাদের জন্য আমাদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদেরকে চক্ষুশীতলকারী করে দিন।” [সূরা আল-ফুরকান, ২৫ঃ ৭৪]

আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তান থেকে এতোটা সুখ চাচ্ছি যেন এটা আমাদেরকে আনন্দের কান্নায় বইয়ে দেয়। এটা কীভাবে সম্ভব যে আপনি এতো কিছু পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবেন কিন্তু আপনি নিজে কোন কাজই করবেন না সেটা পাবার জন্য? না, এভাবে হবে না।

আপনি দু’আ করবেন, “হে আল্লাহ, আমাকে সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দাও (রাব্বি জায়ালনি মুকিমাসসালাতি)” আর ঐদিকে আযান দিচ্ছে অথচ আপনি চেয়ারে হেলান দিয়ে দু’আ করেই যাচ্ছেন। আল্লাহ তো আপনার জন্য ফেরেশতা পাঠাবে না যে তারা আপনাকে শূন্যে ভাসিয়ে সালাতে নিয়ে যাবে, আপনাকে রুকু-সিজদা করিয়ে দেবে! বরং আপনি দু’আ করুন আর তার সাথে চেষ্টা করতে থাকুন।

তদ্রুপ আপনি দু’আ করবেন আর তাৎক্ষণিকভাবে আপনার স্ত্রী আপনাকে ভালোবাসবে এমনটা কাজে দেবে না। আপনাকেও তার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে ভাই। তাকে ভালোবাসুন। এটাই হবে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই উম্মাহর জন্য ‒ মুসলিম পরিবারগুলোর বন্ধনকে দৃঢ় করা।

কারণ যেখানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়, সেখানে সন্তানরা ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না। মা এর সাথে যদি সন্তানের কোনো সমস্যা হয় সে বাবার কাছে যায়। বাবার সাথে কিছু হলে সন্তান মায়ের কাছে যায়। দু’জনের ঝগড়ার মাঝে সন্তানরা মানুষ হতে পারে না, ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না।

“হে আল্লাহ, আমাদের স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদেরকে আমাদের জন্য চক্ষুশীতলকারী করে দিন।” [২৫ঃ৭৪]

আমাদের কেনো উচিৎ একটি ভালো পরিবার তৈরি করা? কারণ আপনি যখন একজন ভালো স্বামী হবেন, আপনার ছেলেও তার দাম্পত্য জীবনে ভালো স্বামী হবে। আপনি যখন একজন গুণবতী স্ত্রী হবেন, আপনার মেয়েও সংসারজীবনে ভালো স্ত্রী হবে। আর যদি আপনারা ভালো না হোন, তাহলে আপনারাই তাদেরকে ভবিষ্যতের মন্দ পরিবার হিসেবে গড়ে তুলবেন আর এটা হবে আপনারই ভুলের জন্য; আপনিই এর জন্য দায়ী থাকবেন।

এজন্যই আমরা বলি, “আর আমাদেরকে মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।” এর মানে প্রত্যেকটা পরিবারের ইমাম থাকেন, আর পরিবারের প্রধান হিসেবে আপনাকেই তাকওয়াশীল একটি পরিবার গড়ে তুলতে হবে। আপনাকে হতে হবে সেই তাকওয়াশীল পরিবারের ইমাম; কারণ আপনার পরিবারের ইমাম তথা নেতা তো স্বয়ং আপনি-ই।

কেনো আমাকে মুত্তাকী পরিবার গড়ে তুলতে হবে? কারণ ইমাম হিসেবে হাশরের ময়দানে আপনার পরিবার আপনার সাথে থাকবে, তারা যদি আপনার কারণে কোন ভুল করে তবে এর দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে পরিবারের ইমাম হিসেবে। আপনাকে তাদের সাথে বাধা হবে, কারণ আপনি তাদের ইমাম হিসেবে তাদের প্রতি দায়িত্বে আবদ্ধ।

কিন্তু আপনার সন্তানেরা যদি ভালো হয়, ভালো কাজ করে, আল্লাহর দ্বীনের সেবা করে, তবে তাদেরকে আল্লাহ উপরে তুলবেন, সম্মানিত করবেন। সাথে আপনাকেও আল্লাহ তাদের সঙ্গে সম্মানিত করবেন, উপরে তুলবেন। কারণ আপনি তাদের সাথেই বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছেন, আপনি তাদের ইমাম। আপনার একার সাওয়াব হয়তো আপনার জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে আর সে জন্য আমরা আমার সন্তান, তাদের সন্তান, তাদের সন্তান এভাবে বংশধরদের জন্য আল্লাহর কাছে চাই।

আল্লাহ আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

বক্তা : নোমান আলী খান, প্রতিষ্ঠাতা, সি.ই.ও. এবং প্রধান উপদেষ্টা, “দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর এ্যারাবিক এ্যান্ড কুর'আনিক স্টাডিজ”। 

উৎস: এএনকে বিডি ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ