ওমর আল ফারুক ।।
দাওয়াত ও তাবলিগের জীবন্ত কিংবদন্তি মাওলানা তারিক জামিল। পাকিস্তানি এই আলেমকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। দাওয়াতের কাজকে আম ও তাম করার জন্য তিনি তার গোটা জীবন ওয়াক্ফ করে দিয়েছেন ইসলামের নামে। বিশ্বব্যাপী সকলেই তাকে কমবেশি আমরা চিনি। তার পরিচয় জানি- তিনি একজন মৌলানা। কিন্তু তাঁর শুরুর জীবন কিন্তু এমন ছিল না। তিনিও মর্ডান ফ্যামিলি থেকে বেড়ে উঠেছেন।
এক বন্ধুর মাধ্যমে ফিরে পেয়েছেন আলোর ঠিকানা। সেই আলোতেই নিজের সাথেসাথে অগণিত মানুষের জীবনকে আলোকিত করে চলেছেন জামায়াতে তাবিলগের শীর্ষ এ মুরুব্বি। সম্প্রতি সিটি৪৪ ইউকে- দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাওলানা তারিক জামিল বলেন, “আমি দীনি পরিবেশে বেড়ে উঠিনি, জুনাইদ জামশেদের মতো আমিও একসময় গান গাইতাম, সিনেমা দেখতাম।”
“আমার এক স্কুল ফ্রেন্ড ছিল, যে তাবলিগ করতো। সে আমাকে এক প্রকার জোর করেই তিন দিনের জন্য তাবলিগে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই মূলত আমার মনে হলো ডাক্তার নয়; আমাকে তাবলিগি হতে হবে। তারপর তাবলিগ থেকে ফিরেই আমি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে যাই।” বলেলেন মাওলানা।
মাওলানা তারিক জামিল ১৯৫৩ সালের ১ অক্টোবর পাকিস্তানের পাঞ্জাবের খানেওয়ালের পান্নু শহরে এক অভিজাত মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা ৷ তিনি প্রথম জীবনে বেশ আধুনিক ছিলেন৷ তার পরিবারও ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় খুব বেশি কেয়ারফুল ছিল না৷
তারা কায়মনে ছেলেকে একজন ডাক্তার হিসাবেই দেখতে চেয়েছিলেন৷ সঙ্গত কারণে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল এবং লাহোর গভর্মেন্ট কলেজ থেকে প্রি মেডিকেল শেষ করে এম বি বি এস সম্পন্ন করতে তিনি লাহোর কিং এডওয়ার্ড মেডিকেলে ভর্তি হন৷
আর দশজন মেডিকেল পড়ুয়ার মত মুভি দেখা, পার্টি করা ইত্যাদিতে তার কোন পার্থক্য ছিলো না৷ বরং বলা ভালো আক্ষরিক অর্থেই তিনি সিনেমা এডিক্টেড ছিলেন৷ বলিউড অভিনেতা আমির খানের সাথে সাক্ষাৎ কালে তখনকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিশদ আলোচনা করলে খোদ আমির খানও অবাক হয়ে যান৷
লাহোর কিং এডওয়ার্ড মেডিকেলে পড়াকালীন তিনি তাবলিগের সংস্পর্শে আসেন৷ তাবলিগে সময় লাগিয়ে তিনি তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনেন৷ মেডিকেল কলেজ ছেড়ে তিনি লাহোরের নিকটে রাইভিন্ডস্থ জামেয়া আরাবিয়ায় ভর্তি হয়ে যান৷ সেখানে তিনি কুরআন,হাদিস, ফিকহ, শরিয়া,তাসাউফে বুৎপত্তি অর্জন করেন৷
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির পর ‘রবের সাথে সবের রাবেতা’ কায়েমের নিমিত্ত দাওয়াত ইলাল্লাহকে তিনি তার জীবনের ব্রত হিসাবে নেন৷
বয়ানে তিনি কুরআন-হাদিসকেই প্রথম প্রধান সোর্স হিসাবে নেন৷ বয়ানের আন্দাজ হৃদয়গ্রাহী হওয়ার কারণে আর সবার চেয়ে তার বয়ানে মানুষ তুলনামূলক বেশি প্রভাবিত হয়৷
মানুষের হৃদয় আদ্র করে দেয়া কিতাবুর রিকাকের কথা, জান্নাতের অনুপম নেয়ামতরাজি, জাহান্নামের অবর্ণনীয় ভয়াবহতা, মানুষে মানুষে প্রেম-প্রীতি ভালোবাসার কথাই তার বয়ানে মূর্ত হয়ে ওঠে৷
কুরআন হাদিসের সাগর সেঁচা মুক্তামানিক দিয়ে খুব অল্প সময়েই মুসলিম বিশ্বে তিনি তার আসন করে নেন৷
বহির্বিশ্বের আলেমদের মধ্যে বাংলায় তার বয়ানই সবচে বেশি অনূদিত হয়েছে৷ মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতে, খোদার পয়গাম সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে তিনি বিশ্বজুড়া সফর পরিচালনা করেন৷ মুসলিম অধ্যুষিত খুম কম রাষ্ট্র আছে, যেখানে তিনি সফর করেননি৷
তার দাওয়াতে প্রভাবিত হয়ে বহু পাকিস্তানি ক্রিকেটার,অভিনয় শিল্পী, সেলিব্রিটি ইসলামের পথে ফিরে এসেছেন৷ তাদের মধ্যে সাঈদ আনওয়ার,মুহাম্মদ ইউসুফ,ইনজামামুল হক,সাকলাইন মুশতাক,সালিম মালিক অন্যতম৷
পপ সিঙ্গার জুনাইদ জামশেদ রহ. এর দীনে ফিরে আসারও অন্যতম অনুপ্রেরণা তিনি৷ অশ্লীলতাকে ব্রত করে নেয়া পাকিস্তানি অভিনেত্রী ভিনা মালিককে এক বৈঠকে দীনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলেন৷
তার কথায় প্রাণিত হয়ে ইমরান খান তার আন্দোলনের নাম ‘সুনামি মার্চ’ বদলে ‘আজাদি মার্চ’ রাখেন৷ ইমরান খান নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের করণীয় সম্পর্কে এক দীর্ঘ জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন তিনি৷ তারিক জামিল ২০১৩-১৪ সালের ‘দ্যা মুসলিম৫০০’ এর অন্তর্ভুক্ত ৷
আরএম/