আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের দিকে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি ও সচেতনতা। আকস্মিক এমন বিপর্যয়ে স্বাভাবিকভাবেই দিশেহারা হয়ে যান সকলে। কীভাবে মোকাবিলা করবেন, কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং কী করলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, এসব বিষয় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগের প্রস্তুতি
ঘরের সকল দরজা-জানালার লক ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে। প্রয়োজনে লক ঠিক করতে হবে অথবা নতুন লক লাগিয়ে নিতে হবে। ঘরের কোথাও কোনো ধরনের ফাটল বা চিড় আছে কিনা দেখতে হবে, এবং টিনের ছাদ হলে ছাদে উঠে দেখতে হবে ছাদের অংশে কোন সমস্যা রয়েছে কিনা।
যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তবে দ্রুত মেরামত করতে হবে। নতুবা ঝড়ে বাড়ির দুর্বল অংশের কারণে ঘরের উপরে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এ সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে। তাই ঘরে হারিকেন, কেরোসিন তেল ও মোমবাতি রাখতে হবে, যাতে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকলেও কোনো সমস্যা না হয়।
বিদ্যুতের বিষয়ে যেহেতু সংশয় থাকছে, তাই মোবাইল, ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার লাইট আগে থেকেই ফুল চার্জ দিয়ে রাখুন। প্রয়োজনের সময়ে যেন সমস্যায় না পড়তে হয়।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্যের প্রস্তুতি জরুরি। বাড়িতে বিভিন্ন রকম শুকনো খাবার যেমন-চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি সংরক্ষণ করুন। এতে করে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।
নোংরা পানি কিভাবে ফিটকিরি ও ফিল্টার দ্বারা খাবার ও ব্যবহারের উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিন।
জরুরি কাগজপত্র আলমারি বা টেবিলের ড্রয়ারে থাকলেও ওয়াটারপ্রুফ ফাইলে সংরক্ষের ব্যবস্থা নিতে হবে। শীতের কাপড় পস্তুত রাখতে হবে।
বাসার শিশুদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। শিশুরা সাধারণত ঝড়-বৃষ্টি ভয় পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে তারা যেন ভীত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যেকোনো সমস্যার জন্য ঘরে ফার্স্ট এইড বক্স তৈরি রাখতে হবে। নিত্যদিনের ওষুধ, জরুরি ওষুধ, ডেটল, ব্যান্ডেজ প্রভৃতি সংগ্রহে রাখতে হবে।
আবহাওয়ারে পূর্বাভাস শোনার অভ্যাস করা জরুরি। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত শুনুন। নৌকা, লঞ্চ ও ট্রলারের ক্ষেত্রে অবশ্যই রেডিও রাখতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে করণীয়
প্রথমেই ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে এবং ইলেকট্রনিক পণ্য সুইচ অফ করে দিতে হবে। গ্যাস লাইন বন্ধ রাখতে হবে।
বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর সময় পানি ও পানিযুক্ত স্থানের আশেপাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঝড়ের সময় দাহ্য জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরে ও ঘরের আশেপাশের যেকোনো ধরনের লোহা ও স্টিলের জিনিসপত্র স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাইরে থাকাকালীন অবস্থায় ঝড় শুরু হলে যতসম্ভব দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে এবং বজ্রাপাতের সময় দ্রুত মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে। ঝড়ের মাঝে কোনো অবস্থাতেই জলাশয় তথা পুকুর, খাল, নদীতে অবস্থান করা যাবে না।
বাইরে খোলা ও উঁচু কোনো স্থানে অবস্থান করা যাবে না এবং সম্পূর্ণ উন্মুক্ত স্থানে খোলা ছাতা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া যেকোনো ধরনের জরুরি প্রয়োজনে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করতে হবে।
ঘূণিঝড় সম্পর্কে নিতে বিস্তারিত জানুন; পরিবার সদস্যদের অবহিত করুন; আশপাশের মানুষকেও জানান।
আরএম/